অর্ণব আইচ: তাওয়াংয়ে চিনের রক্তচক্ষুতে উদ্বিগ্ন দেশ। কয়েকদিন আগেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন এলাকাটিতে লালফৌজের আগ্রাসন রুখে দেয় ভারতীয় সেনা। গালওয়ান থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার পিপলস লিবারেশন আর্মির ষড়যন্ত্র গোড়াতেই ভেস্তে দেন সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরীরা। এহেন পরিস্থিতিতে বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশবাসীকে অভয় বার্তা দিয়েছে ফৌজ। সেনার ইস্টার্ন কমান্ডের জিওসি-ইন-সি লেফটেন্যান্ট জেনারেল আর পি কলিতা বলেন, “অরুণাচল সুরক্ষিত। ভয়ের কিছু নেই।”
শুক্রবার সেনার ইস্টার্ন কমান্ডের হেডকোয়ার্টার ফোর্ট উইলিয়ামে বিজয় দিবস উদযাপিত হচ্ছে। ১৯৭১-এর ভারত-পাক যুদ্ধে জয়ের স্মরণে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শহিদদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়। সেখানেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আর পি কলিতা। তাওয়াং সংঘাত নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “সমস্ত ধরনের পরিস্থিতির জন্য ভারতীয় সেনা তৈরি। তবে আপনারা জানেন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার (LAC) অবস্থান নিয়ে দুই দেশের ধারণা ভিন্ন। আটটি জায়গা নিয়ে বিতর্ক বা মতভেদের কথা মেনে নিয়েছে দুই দেশই। এমনই একটি এলাকায় অনুপ্রবেশ চালায় চিনা সেনা। তবে শক্ত হাতে সেই হামলা রুখে দিয়েছেন আমাদের জওয়ানরা।”
[আরও পড়ুন: চিনে আঘাত হানতে সক্ষম অগ্নি-৫, কতখানি শক্তিশালী ভারতের নতুন মিসাইল?]
গত ৯ ডিসেম্বর তাওয়াং সেক্টরে ঘটা সংঘাতে নিয়ে গুজবের বাজার গরম। অনেকেই বলছেন মৃতের সংখ্যা গোপন করছে দুই দেশ। এই প্রসঙ্গে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আর পি কলিতা বলেন, “আপনারা গুজবে কান দেবেন না। সংঘাতে দুই দেশের কয়েকজন জওয়ান সামান্য আহত হয়েছেন। বুমলায় প্রোটোকল মেনে স্থানীয় কমান্ডাররা আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছেন। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি, ভারতের সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ পেশাদার। অরুণাচল সুরক্ষিত। ভয়ের কিছু নেই।” সীমান্তে কতটা প্রস্তুত ভারতীয় ফৌজ জিজ্ঞাসা করা হলে কলিতা আরও বলেন, “শান্তি হোক বা যুদ্ধ, দেশের সুরক্ষায় সেনা সবসময় তৈরি। দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা বজায় রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। গত ১০ থেকে ১৫ বছরে সীমান্তবর্তী এলাাকাগুলিতে মজবুত পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। হেলিপ্যাড, বিমানবন্দর, সড়ক ও সেতু তৈরি করা হয়েছে।”
উল্লেখ্য, ভারতের ও পাকিস্তানের মধ্যে লাইন অফ কন্ট্রোলের (এলওসি) চেয়ে চিনের সঙ্গে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার (এলএসি) পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা। এলএসি অনুযায়ী, আকসাই চিন এলাকাটি নিয়ন্ত্রণ করে চিন। যদিও তা জম্মু-কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্ত। ফলে কোন এলাকা কোন দেশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তা নিয়ে বহু বছর ধরে বিতর্ক চলে আসছে। ১৯৫৯ সালে চিনের তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রিমিয়ার চৌ এন লাই ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরুকে লেখা একটি চিঠিতে ‘লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল’ নামটির উল্লেখ করেছিলেন। ১৯৬২ সালে ভারত এবং চিনের যুদ্ধের পর ‘লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল’ অস্ত্র সংবরণ রেখা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ১৯৯৩ সালে দুই পক্ষের তরফে স্বাক্ষরের পর আনুষ্ঠানিক ভাবে তা স্বীকৃতি পায়। আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বীকৃতি পাওয়ার পরেও এলএসি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষের অন্ত ছিল না। ভারতের তরফে এলএসি-র দৈর্ঘ্য ৩,৪৮৮ কিলোমিটার মানা হলেও চিনের তরফে এলএসি-র দৈর্ঘ্য ২,০০০ কিলোমিটার মেনে চলা হয়।