রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: ডিসেম্বরে বাড়ি ফেরার কথা দিয়েছিলেন পরিজনদের। কিন্তু তা রাখতে পারলেন না ভারতীয় সেনায় কর্মরত সুবোধ ঘোষ। কারণ, তার আগেই পাকিস্তানের ছোঁড়া গুলিতে শহিদ হয়েছেন তিনি। আপাতত শহিদ ভারতীয় জওয়ানের কফিনবন্দি দেহ ফেরার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন নদিয়ার (Nadia) তেহট্টের রঘুনাথপুর গ্রামের বাসিন্দারা। এদিকে, পাকিস্তানের সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনে চার জওয়ান-সহ এখনও পর্যন্ত মোট সাতজন প্রাণ হারিয়েছেন।
খুব মেধাবী না হলেও ছোট থেকে পড়াশোনায় ভালই ছিলেন সুবোধ। নিজের যোগ্যতায় বেশ কম বয়সেই ভারতীয় সেনাবাহিনীতে (Indian Army) চাকরি পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সুবোধের পরিবার সূত্রে খবর, গত চার বছর ধরেই সেনাবাহিনীতে ছিলেন। গত বছর বিয়ে করেন। তিনমাসের কন্যাসন্তানও রয়েছে তাঁর। জুলাই মাসে শেষবার মাত্র ৪০ দিনের ছুটিতে বাড়িতে ফিরেছিলেন সুবোধ ঘোষ। তবে সেই সময় করোনা আতঙ্কে কোয়ারেন্টাইনেই থাকতে হয়েছিল বেশিরভাগ দিন। ছুটি বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন সেই সময়। কিন্তু পাননি। তাই বাধ্য হয়ে দায়িত্ব পালন করতে আবারও যোগ দিয়েছিলেন চাকরিতে। চেনা পরিচিতদের সঙ্গে দেখা হয়নি জুলাইতে। তাই পরিজনদের কথা দিয়েছিলেন আবারও ডিসেম্বরে তেহট্টের রঘুনাথপুর গ্রামের বাড়িতে আসবেন। তবে প্রতিশ্রুতিপূরণ করতে পারলেন না বছর চব্বিশের তরতাজা প্রাণ।
[আরও পড়ুন: দৈনিক করোনা সংক্রমণে কলকাতাকে টেক্কা উত্তর ২৪ পরগনার, রাজ্যে ঊর্ধ্বমুখী সুস্থতার হার]
কাজের চাপ থাকলেও প্রতিদিনই বাড়িতে ফোন করতেন সুবোধ। দিনকয়েক মেয়ের শরীর ভাল যাচ্ছে না। তাই ইদানীং একটু বেশিই ফোন করছিলেন তিনি। তবে শুক্রবার পরিজনদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেননি সুবোধ। পরিজনরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ফোনে পাননি। সুবোধের মা বাসন্তী ঘোষ বলেন, “শুক্রবার বিকেলে একটা ফোন আসে। অপরিচিত কণ্ঠের একজন জানান সুবোধ আর নেই। পাকিস্তানের দিক থেকে ধেয়ে আসা গুলিতে আমার ছেলে ঝাঁজরা হয়ে গিয়েছে।” স্বামীর মৃত্যু সংবাদ এখনও সত্যি বলে মানতে পারছেন না সুবোধের স্ত্রী অনিন্দিতা ঘোষ। তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া হয়েছিল। এই কারণে আমার স্বামী বারবার ফোন করে খোঁজ নিয়েছে। কিন্তু আজ সকাল থেকে সে ফোন না করায় আমি এবং আমার শাশুড়ি প্রত্যেকেই ওকে ফোন করেছি। কিন্তু ফোন সুইচড অফ বলছিল। পরে বিকেল নাগাদ কাশ্মীর থেকে ফোন আসলে আমরা মৃত্যুর কথা জানতে পারি।” রঘুনাথপুর গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই ভালবাসতেন সুবোধকে। ঘরের ছেলের আকস্মিক মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন প্রায় প্রত্যেকেই। দীপাবলির (Diwali) আগে থমথমে গোটা গ্রাম।