সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্বাধীনতার পর এই প্রথম বড় ধরনের প্রশাসনিক ভোল বদল ঘটতে চলেছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর (Indian Army)। ঢেলে সাজছে ফৌজ। পালটে ফেলা হচ্ছে এতদিনকার পরিকাঠামোগত এবং প্রশাসনিক বিন্যাস। স্বাধীনতার পর এই প্রথম বড় ধরনের প্রশাসনিক ভোল বদল ঘটতে চলেছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর।
[আরও পড়ুন: ‘বিজেপি যেটা বলে সেটা করে’, রাম মন্দিরকে হাতিয়ার করেই বিহারে ভোট চাইলেন মোদি]
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কোনও কসমেটিক চেঞ্জ নয়। একেবারে গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত সেনাবাহিনীর পরিকাঠামোগত চেহারাটাই বদলানো হচ্ছে দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে। এজন্য আমেরিকা (US) ও চিনের (China) ধাঁচে গড়া হচ্ছে ৫টি থিয়েটার কমান্ড। এর মধ্যে দু’টি কমান্ড হবে খুব নির্দিষ্টভাবে চিন ও পাকিস্তান কেন্দ্রিক। কারণ এই দুই চেনা শত্রু আগের থেকে অনেক বেশি আগ্রাসী হয়েছে। চিন ও পাকিস্তান হাতে হাত মিলিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও নাশকতায় শামিল। সেনাবাহিনীর নিজস্ব সমীক্ষা, যে কোনও সময় দীর্ঘমেয়াদে এই দুই প্রতিবেশী শত্রুর বিরুদ্ধে একসঙ্গে ভারতের তিন বাহিনীকে লড়তে হতে পারে। অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এই লড়াই চলতে পারে বহু বছর ধরে। যেমনভাবে কয়েক দশক ধরে পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদ ও চিনা সম্প্রসারণবাদের মোকাবিলা করছে ভারত। তাই সময় এসেছে সেনাবাহিনীর কাজকর্ম আরও নিখুঁত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ করার। সরকার চায়, স্থলসেনা, বায়ুসেনা ও নৌসেনার মধ্যে বোঝাপড়া যেন রাতদিন চব্বিশ ঘণ্টা মসৃণ থাকে। সেই লক্ষ্যেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সারা বছর সক্রিয় থাকবে ভারতীয় সেনার নতুন ‘ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড’। চিনের বিরুদ্ধে সক্রিয় থাকবে ‘নর্দার্ন থিয়েটার কমান্ড’। বাকি তিন কমান্ড সামলাবে দেশের বাকি তিন অংশের নিরাপত্তা। এই পাঁচ কমান্ড তৈরির দায়িত্বে থাকছেন সেনা সর্বাধিনায়ক (চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ) জেনারেল বিপিন রাওয়াত। ২০২২ সালের মধ্যে এই কমান্ডগুলি তৈরি হয়ে যাবে।
সেনা সদর দপ্তর সূত্রে খবর, চিনের মোকাবিলা করার জন্য তৈরি হচ্ছে নর্দার্ন থিয়েটার কমান্ড। নর্দার্ন কমান্ডের আওতাধীন এলাকা শুরু হবে লাদাখের কারাকোরাম গিরিপথ থেকে অরুণাচল প্রদেশের কিবিথু আউটপোস্ট পর্যন্ত। বাহিনীর এই বিভাগের দায়িত্বে থাকবে চিন সীমান্তের মোট ৩,৪৮৮ কিমি দীর্ঘ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা। বিভাগীয় সদর দপ্তর থাকছে লখনউতে। পাকিস্তানের মোকিবলার জন্য ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের দায়িত্বে থাকছে সিয়াচেন হিমবাহ অঞ্চলের সালতোরো গিরিখাতে ইন্দিরা কল থেকে গুজরাটের রান ও কচ্ছ-এর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত। এর বিভাগীয় সদর দপ্তর থাকছে সম্ভবত জয়পুরে। এ ছাড়া থাকছে তৃতীয় থিয়েটার কম্যান্ড ‘পেনিনস্যুলার কমান্ড’। সদর দপ্তর কেরলের তিরুবনন্তপুরমে। দক্ষিণ ভারতের ও মধ্য ভারতের নিরাপত্তা দেখবে এই কমান্ড। চতুর্থটি পুরোদস্তুর বায়ুসেনার নিজস্ব থিয়েটার কমান্ড ও পঞ্চমটি পুরোদস্তুর নৌসেনা কমান্ড। এটি সম্পূর্ভাবে আন্দামান নিকোবর কেন্দ্রিক। গোটা ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর এলাকায় ভারতীয় সেনার আধিপত্য বজায় রাখবে এই কমান্ড। তবে এই মূহূর্তে সেনার কলাকাতস্থিত পূর্বাঞ্চলীয় সদর দফতর ফোর্ট উইলিয়ামের গুরুত্ব পরে বাড়বে না কমবে তা নিয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। এই প্রশাসনিক বিন্যাসের জেরে ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দপ্তর ফোর্ট উইলিয়ামের ভূমিকা কি হবে তা নিয়েও স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি।
সেনা সূত্র উদ্ধৃত করে বিভিন্ন সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, বর্তমানে ভারতীয় সেনাবাহিনী, ভারতীয় বায়ুসেনা ও ভারতীয় নৌসেনা সম্মিলিত ভাবে দেশের আকাশসীমা রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে। অথচ প্রতিটি ভারতীয় সেনা বিভাগের প্রধান দফতরই কোনও না কোনও বায়ুসেনা ঘাঁটির কাছাকাছি রয়েছে। এর ফলে একই দায়িত্বে থাকছে একাধিক বিভাগীয় বাহিনী, যার জেরে বাড়ছে অনাবশ্যক খরচ। এই অপ্রয়োজনীয় খরচ বন্ধ করতে এবং বাহিনীর কাজকে আরও সুসংহত করতেই ব্যাপক সংস্কার করছে প্রতিরক্ষামন্ত্রক।