দুলাল দে: এই গত আগস্টেই আরও এক বছরের জন্য জাতীয় দলের কোচ হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হলেন কোচ ইগর স্টিমাচ (Igor Stimac)। কিন্তু দু’মাস কাটতে না কাটতেই ভারতীয় দলের কোচ হিসেবে, তাঁর চাকরি এরকম প্রশ্নের মুখে পড়ে যাবে, কে আর ভেবেছিলেন? শেষ পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, ১ অক্টোবর থেকে মালদ্বীপে আয়োজিত সাফ কাপে, ভারতীয় দল যদি ফাইনালে পৌঁছতে না পারে, তাহলে জাতীয় কোচের পদে ইগর স্টিমাচের আর থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সেক্ষেত্রে হয়তো চুক্তির দোহাই না দেখিয়ে নিজেই জাতীয় কোচের পদ থেকে পদত্যাগ করবেন ইগর স্টিমাচ।
আগস্টে ফের জাতীয় কোচের পদে ইগরকে নবীকরণ করার আগে টেকনিক্যাল কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে ফেডারেশন কর্তারা দেখেছিলেন, করোনা আবহে জাতীয় দলকে ঠিকভাবে অনুশীলন করানোরই সুযোগ পাননি একদা লুকা মদ্রিচদের বিশ্বাকাপের মূলপর্বে পৌঁছে দেওয়া এই ক্রোয়েশিয়ান কোচ। ফলে এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করার জন্য আরও এক মরশুম ইগর স্টিমাচকে সুযোগ দেওয়ার পক্ষে ছিলেন শ্যাম থাপার নেতৃত্বাধীন টেকনিক্যাল কমিটির সদস্যরা। ফলে ফের এক বছরের চুক্তি সম্পন্ন হয় গত আগস্ট মাসে। কিন্তু কিছুদিন আগে নেপালে দুটো ফ্রেন্ডলি ম্যাচে ভারতীয় দলের পারফরম্যান্স দেখে চমকে উঠেছেন ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন কর্তারা।
[আরও পড়ুন: লিগ ওয়ানের ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে তুলে নেওয়ায় PSG কোচের উপর ‘বিরক্ত’ Lionel Messi!]
যাঁরা এশিয়ান কাপে খেলার কথা ভাবছে, তাঁরা নেপালের সঙ্গে পিছিয়ে থেকে কোনও মতে ড্র করছে! আর দ্বিতীয় ম্যাচে জিতলেও সেই সুনীল ছেত্রীর (Sunil Chhetri) গোল, আর তাও কোনওমতে জেতা। সেই যদি নেপাল, বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্ককাকে নিয়ে ভাবতেই হয়, তাহলে আর জাতীয় দলের পিছনে এত খরচ কেন? কিন্তু কেন এমন হচ্ছে, কিছুতেই বুঝতে পারছেন না ফেডারেশন কর্তারা। ফলে নেপাল থেকে দল ফেরা মাত্রা অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী ছাড়াও চিফ কোচ ইগর স্টিমাচ এবং সহকারি ভেঙ্কটেশের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন ফেডারেশন কর্তারা।
ইগর এবং ভেঙ্কটেশ সত্যিই বুঝতে পারছেন না, কেন এরকম খারাপ পারফরম্যান্স হচ্ছে? ইগর বলেন, “অনুশীলনে একরকম, আর ম্যাচে নামলেই সব কিছু গুলিয়ে ফেলছে।” ভেঙ্কটেশও বুঝতে পারছেন না, কেন ফুটবলাররা এরকম খারাপ খেলছেন? আইএসএলের পাশাপাশি আই লিগেও কোচিং স্টাফদের নজরে রয়েছে ভাল ফুটবলার খুঁজে পাওয়ার জন্য। দেশের সেরা ফুটবলারদেরই শিবিরে ডাকা হচ্ছে। কিন্তু তাতেও কেন পরিস্থিতি ভাল হচ্ছে না? সমস্যাটা কোথায়?
অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর সঙ্গেও আলোচনায় বসেন ফেডারেশন কর্তারা। সুনীলও এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার কোনও উত্তর দিতে পারেননি। তিনিও বুঝতে পারছেন না, আইএসএলে ভাল খেলা ভারতীয় ফুটবলাররা জাতীয় দলে এলেই কেন এরকম পারফরম্যান্স করছেন?
ফেডারেশন কর্তারা তখন ইগরের কাছে জানতে চান, মানসিকভাবে উদ্বুদ্ধ করার জন্য জাতীয় ফুটবলারদের কাউন্সিলিং করানো হবে কি না?
সব মিলিয়ে জাতীয় দলের পারফরম্যান্সে ফেডারেশন (AIFF) কর্তারাও হতাশ হয়ে পড়েছেন। এক শীর্ষ কর্তা বললেন, “ইগরের মতো প্রোফাইলের কোচ রয়েছেন। সব রকম সেরা সুবিধা দেওয়া হচ্ছে ফুটবলারদের। এরপরেও কেন উন্নতি হচ্ছে না, সত্যিই ব্যাপারটা চিন্তার।”
সাফ কাপের সাফল্য কিংবা ব্যর্থতাকে ফেডারেশন একদমই গুরুত্ব দিচ্ছে না। একদা বব হাউটন বলতেন, “সাফ কাপ হচ্ছে ভারতীয় দলের জন্য পেনাল্টি শটের মতো। জিতলে বাহবা নেই। হারলে সব শেষ।”
ফেডারেশন কর্তারা অবশ্য মালদ্বীপের সাফ কাপকে কোচ ইগর স্টিমাচের অ্যাসিড টেস্ট হিসেবে দেখছেন। চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও, যদি ভারতীয় দল ফাইনালেও যায়, তাহলে হয়তো এ যাত্রায় চাকরি বাঁচিয়ে ফেলবেন স্চিমাচ। কিন্তু দলের যা পারফরম্যান্স, তাতে যদি কোনওমতে ফাইনালে না যাওয়া যায়, তাহলে কিন্তু চুক্তি সেখানেই শেষ। সেরকম হলে হয়তো নিজেই কোচের পদে ইস্তফা দিয়ে দেবেন ইগর স্টিমাচ।