পলাশ পাত্র, তেহট্ট: সংশোধানাগারের বন্দিত্বের বাইরে একটু মুক্তির স্বাদ৷ বদ্ধ ‘রাজা’র জীবনে লাগল ‘নন্দিনী’র খোলা বাতাস৷ রাজ্যের সংশোধন প্রশাসন বিভাগ ও রামকৃষ্ণ মিশন সারদাপীঠ বেলুড়মঠেরর উদ্যোগে কৃষ্ণনগর সংশোধনাগারের বন্দিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হল রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’৷ শনিবার সন্ধেবেলা কৃষ্ণনগরের রবীন্দ্র ভবনে নাটক দেখতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি (কারা) অরিন্দম সরকার, জেলা সংশোধনাগারের সুপার অসিতবরণ নস্কর৷
[আরও পড়ুন: ‘২০ দিনের মধ্যে কাটমানি ফেরত দেব’, বিক্ষোভের মুখে মুচলেকা তৃণমূল নেতার]
উপযুক্ত সময়,সুযোগ পেলে কত মানুষ যে কত কী করতে পারেন, সেটাই শনিবারের নাট্যানুষ্ঠানে প্রত্যক্ষ করেন দর্শকরা। সফলভাবে রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’ মঞ্চস্থ করতে অন্তত সাড়ে তিনবছর ধরে মহড়া করেছেন এই বন্দিরা৷ রামকৃষ্ণ মিশন সারদাপীঠের উদ্যোগেই নাটকের অনুশীলন করানো হয়েছিল তাঁদের৷
আসলে, নাটক থেরাপির মাধ্যমে এই বন্দিদের সুকোমল মনোবৃত্তিকেই উসকে দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন নাটকের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন৷ এছাড়া অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়া এই বন্দিরা প্রেক্ষাগৃহে সরাসরি মানুষের সামনে পারফর্ম করায় নিজেদের প্রতি তাঁদের আস্থা, ভরসা, ভালোবাসা ফিরে পাবেন৷কৃষ্ণনগর সংশোধনাগরের এই আবাসিকরা এর আগে কলকাতা আলিপুর সেন্ট্রাল জেল-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় নাটক মঞ্চস্থ করে। বিবেকানন্দর জীবনী আশ্রিত ‘মহাবৃত্ত’ নামে একটি নাটকে তাঁদের অংশ নিতে দেখা গিয়েছে৷ রামকৃষ্ণ মিশন,বেলুড় মঠ এই বন্দিদের সংশোধিত করার কাজে উদ্যোগী হয় এবং নাট্যকার সুশান্ত হালদারের হাতে এই দায়িত্ব তুলে দেন। তিনি বলেন, ‘প্রথমদিকে কাজটা কঠিন ছিল। ভারতীয় দর্শন, রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবোধ, নাটক নিয়ে পড়াশোনা করানো হয়। তারপর ওঁদের নাটক নিয়ে ট্রেনিং দেওয়া হয়। প্রথম প্রথম স্বল্প সময়ে নাটক করানো হয়। ধীরে ধীরে ওঁরা তৈরি হয়ে ওঠেন। অন্ধকার জীবন থেকে আলোর পথে যাতে ফিরতে পারেন, সেটাই উদ্দেশ্য ছিল।’
[আরও পড়ুন: ‘হিংসা ভুলে শান্তি ফেরাতে ভরসা গান’, যোগদিবসে নয়া ভাবনা নীতীনের়]
মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার বাসিন্দা এই ১৮জন বন্দি। তাঁদের সঙ্গে কৃষ্ণনগরের দু’জন মহিলা অতিথি শিল্পী হিসেবে কাজ করেন। নাটক করতে গিয়ে এঁদের কথাবার্তায় অনেক বদল এসেছে৷ একজন সাক্ষর হয়েছেন। রাজ্যের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, ‘নাটক বা সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে সংশোধন করার কাজ সহজতর হয়। সেই কাজটাই করা হচ্ছে। যাতে তাঁদের মধ্যে সহনশীলতা, সহমর্মিতা প্রকট হয়ে ওঠে৷’ ডিজি (কারা) অরিন্দম সরকার বলেন, ‘আজকের এই উদ্যোগটা আমাদের পথ দেখাবে। এ ধরনের নাটক আমরা করিয়ে চলেছি। এর ফলে তাঁদের মনোভাবের বদল হওয়াই আমাদের প্রাপ্তি।’
The post রাজা-নন্দিনীর জীবনে আলোকপাত, কৃষ্ণনগরে বন্দিদের অভিনয়ে ‘রক্তকরবী’ appeared first on Sangbad Pratidin.