অর্ণব আইচ: মুম্বই হামলায় রক্তাক্ত হয়েছিল দেশ। নিরাপত্তায় ছিদ্র খুঁজে সমুদ্রপথে ছোট্ট অথচ দ্রুতগামী নৌকা বা ট্রলারে চেপে মায়ানগরীতে ঢুকে পড়েছিল জঙ্গি আজমল কাসভ ও তার দলবল। সম্প্রতি গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এক রিপোর্টে জানিয়েছে, ফের ২৬/১১-র কায়দায় ‘সমুন্দরি জেহাদ’-এর পরিকল্পনা করছে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি। তাই সমুদ্রে জঙ্গিদের স্পিডবোটগুলিকে আটকাতে অত্যাধুনিক হাতিয়ার নিয়ে তৈরি নৌসেনার রণতরী ‘আইএনএস খঞ্জর’।
বৃহস্পতিবার কলকাতার (Kolkata) গার্ডেনরিচ শিপইয়ার্ডে হাজির হয় ‘খঞ্জর’। থাকবে আগামিকাল, ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত। পরের দিন বন্দর ছেড়ে রওনা দেবে নৌবাহিনীর ইস্টার্ন ফ্লিটের এই রণতরীটি। মূলত, প্রদর্শনীর জন্যই গার্ডেনরিচে পৌঁছেছে জাহাজটি। এনসিসি ক্যাডেটদের জন্য রয়েছে ঘুরে দেখার সুযোগ। বলে রাখা ভাল, প্রায় তিন দশক আগে গার্ডেনরিচেই তৈরি হয়েছিল ‘খঞ্জর’। বর্তমানে ইস্টার্ন ফ্লিটের অন্যতম অস্ত্র কুকরি ক্লাসের এই মিসাইল করভেটটি। বঙ্গোপসাগরে টহল দিয়ে দেশের জলসীমা সুরক্ষিত রাখছে খঞ্জর।
[আরও পড়ুন: বালিতে মোদি-জিনপিং করমর্দন, জাপান সাগরে গর্জন ভারতীয় রণতরীর, কী বার্তা দিল্লির?]
১৯৯১ সালে নৌসেনায় যোগ দেওয়া জাহাজটি ঘুরে দেখা মিলল শত্রুর বুকে কাঁপন ধরানোর মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র সম্ভারের। ‘করভেট’টিতে রয়েছে একগুচ্ছ মিসাইল, গান সিস্টেমের মতো অস্ত্র। শত্রুপক্ষের যুদ্ধবিমানকে ঘায়েল করতে রয়েছে সারফেস টু এয়ার মিসাইল। জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র বা ‘অ্যান্টি শিপ মিসাইল’ থেকে নিজেকে বাঁচাতে খঞ্জর ব্যবহার করে ‘AK-630’ কামান। ৩০ মিলিমিটারে সোভিয়েত জমানার এই স্বয়ংক্রিয় কামানটি প্রতি মিনিটে চার থেকে পাঁচ হাজার রাউন্ড গুলি ছুঁড়তে পারে। প্রায় সাত কিলোমিটার দূর থেকেই যুদ্ধবিমান দেখতে পায় এই হাতিয়ার। রাডার ও ইলেকট্রো অপটিক্যাল সিস্টেমের মদতে স্বয়ংক্রিয় ভাবে দিন বা রাতে কাজ করতে সক্ষম ‘AK-630’। প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূর থেকেই চিনতে পারে নৌকা।
এই জাহাজের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অস্ত্র হচ্ছে ‘AK-176’ ন্যাভাল গান বা বন্দুক। সমুদ্রে জঙ্গিদের স্পিডবোটগুলিকে মুহূর্তে গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম এই অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র। এক মিনিট ১২০ রাউন্ড গোলা ছুঁড়তে পারে এই হাতিয়ার। ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটারে মধ্যে ‘খঞ্জর’-এর অগ্নিবৃষ্টিতে পুড়ে খাক হয়ে যাবে জঙ্গিদের নৌকা। টেলিভিশন টার্গেটিং ও লেজার রেঞ্জ ফাইন্ডারের মদতে অস্ত্রটির চালক ক্যাবিনে বসে কম্পিউটারের মাধ্যমে হামলা চালাতে পারেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা রিপোর্টে প্রকাশ্যে আসে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, সুন্দরবনের খাঁড়িগুলির জটিল জাল বেয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারে জঙ্গি নৌকা। তাই এমন অঞ্চলে নজরদারি বৃদ্ধি করেছে উপকূলরক্ষী বাহিনী। পাশাপাশি সতর্ক রয়েছে নৌসেনাও।