কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: অভিজাত এলাকায় দুই কুখ্যাত দুষ্কৃতী কীভাবে গা ঢাকা দিল? কে-ই বা সেই ফ্ল্যাটের মালিক? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে প্রায় গোটা একটা দিন সময় দিতে হল তদন্তকারীদের। নিউটাউন এনকাউন্টারে (Newtown Encounter) দুই পাঞ্জাবি গ্যাংস্টার নিহত হওয়ার ঘটনার তদন্তে এবার পুলিশের হাতে এল এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্যই। জানা গেল ফ্ল্যাটের মালিক এবং ব্রোকারের নাম, যার মাধ্যমে জনৈক সুমিত কুমার ‘সুখবৃষ্টি’ আবাসনের বি ব্লকের ২০১ নং ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন। সূত্রের খবর, এই ফ্ল্যাটটি আকবর আলি নামে একজনের। তিনি এন্টালিতে থাকেন। আর যার মাধ্যমে ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়া হয়, তিনি ‘সুখবৃষ্টির’ই বাসিন্দা, পেশায় ব্রোকার সুশান্ত সাহা।
এই রহস্যের জট ছাড়াতে গিয়ে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন বেশ কয়েকটি নাম। সেই নামগুলির মধ্যেকার যোগসূত্র খুঁজে বের করাই মূল লক্ষ্য তাঁদের। সেই লক্ষ্যে এগোতে গিয়ে তাঁরা জানতে পেরেছেন অনেক কিছুই। জানা গিয়েছে, ২০১ নং ফ্ল্যাটের মালিক আকবর আলির সঙ্গে সুশান্ত সাহার যোগাযোগ হয়। একটি ফ্ল্যাট ভাড়ার কথা হয় তাঁদের। নিউটাউনের (Newtown) নারকেলডাঙার বাসিন্দা আরেক ব্রোকার সৌরভ কুমারের সঙ্গে আকবর আলি ও সুশান্ত যোগাযোগ করেন। সুশান্ত আকবরের ভাইয়ের থেকে ফ্ল্যাটের চাবি নেন, ভাড়াটেদের দেওয়ার জন্য। ২২ মে, সুমিত কুমার নামে এক ব্যক্তি থাকবেন বলে কাগজপত্রে সই করেন। ২৩ তারিখ থেকে তিনি থাকতে শুরু করেন। তবে বুধবারের ঘটনার পর দেখা যায়, ফ্ল্যাটে এতদিন ছিল জসপ্রীত-জয়পালরা।
[আরও পড়ুন: নিউটাউন এনকাউন্টার: কার নামে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিল ভুল্লার? মিসিং লিংকের খোঁজে পুলিশ]
এখানেই উঠছে প্রশ্ন। তাহলে কি সুমিত কুমার এই ফ্ল্যাট নিজের নামে ভাড়া নিয়ে জসপ্রীতদের থাকতে দিয়েছিল? নাকি এদেরই মধ্যে একজন সুমিত কুমার? স্রেফ ছদ্মনামে বসবাস করছিল? এর উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা। এছাড়া গত প্রায় দু সপ্তাহ ধরে ফ্ল্যাটে গা ঢাকা দিয়ে থাকা দু’জনের দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কেও কিছু তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। জানা গিয়েছে, সম্পূর্ণ নিরামিষাশী জসপ্রীত ও জয়পালের খাবার আসত হোম ডেলিভারি (Home delivery) মারফত। রুটি, ডাল, সবজি নিত তারা। রোজ দুপুর দেড়টার মধ্যে ফ্ল্যাটের দরজা খুলে, কোলাপসিবল গেটের বাইরে ডেলিভারি বয়ের হাত থেকে খাবার নিয়ে নিত একই ব্যক্তি। আগেরদিন রাতে যে ফোন নম্বর থেকে খাবার অর্ডার দেওয়া হতো, দেখা গিয়েছে সেই নম্বরটি সুমিত কুমারের।
[আরও পড়ুন: নিউটাউন এনকাউন্টার: NIA তদন্তের দাবি তুলে অমিত শাহকে চিঠি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ’র]
আর এখানেই সন্দেহ আরও গাঢ় হয়েছে। তবে কি সুমিত কুমার এদেরই কারও নাম নাকি সে নিজের ফোনটি জসপ্রীতদের ব্যবহারের জন্য দিয়ে গিয়েছিল জটিলতা এড়াতে? যেহেতু তারই নামে ফ্ল্যাট ভাড়া এবং নথি দেওয়া ছিল, তাই অন্য কোনও ফোন ব্যবহার করা হোক, তা সে চায়নি। এসব বিষয় ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। জসপ্রীত এবং জয়পালের নামে বৃহস্পতিবার টেকনো সিটি থানায় অস্ত্র আইনে এফআইআর দায়ের হয়েছে।