রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: ভারতীয় টেস্ট টিমে তিনি আর নেই। দেশের জার্সিতে ওয়ান ডে, টি-টোয়েন্টি শেষ কবে খেলেছেন, নিজেও ভুলে গিয়েছেন বোধহয়! আর আইপিএল (IPL 2022)? গত বার দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে খেলেছিলেন সাকুল্যে দু’টো ম্যাচ। নাহ্, রিকি পন্টিংয়ের দিল্লি টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁর উপর মোটেও ভরসা করতে পারেনি।
এ হেন অজিঙ্ক রাহানেকে (Ajinkya Rahane) গত আইপিএল নিলাম থেকে যখন মাত্র এক কোটি টাকায় কিনেছিল কেকেআর (KKR), বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলেন ক্রিকেটমহলের অনেকে। অনেকেই তখন বলাবলি করেছিলেন যে, মাত্র এক কোটি টাকায় অজিঙ্ক রাহানেকে পেয়ে যাওয়া নিঃসন্দেহে ভাল। কিন্তু আখেরে তাতে লাভ হবে তো?
শুভমান গিলের অভাব রাহানে ঢেকে দিতে পারবেন তো? শনিবাসরীয় ওয়াংখেড়েতে মুম্বইকরের ব্যাটিংয়ে পুরনো বিদ্যুৎ ঝলকানি দেখার পর সে সমস্ত প্রশ্ন নির্ঘাৎ আরব সাগরের জলে আছড়ে পড়েছে। গত আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে রাহানের ৩৪ বলে ৪৪ রানের পর পরিবর্তিত প্রশ্নটা বরং এ রকম– ভারতীয় ক্রিকেটের ‘জিঙ্কস’-এর ব্যাট এ রকম চললে, অ্যারন ফিঞ্চ পাঁচ ম্যাচ পর টিমে ঢুকে জায়গা পাবেন তো? নাকি সীমিত ওভারের অস্ট্রেলীয় অধিনায়ককে ডাগআউটে অনন্ত অপেক্ষা করতে হবে?
[আরও পড়ুন: ডায়মন্ডহারবার ফুটবল ক্লাব নামেই আত্মপ্রকাশ, ১ বৈশাখ ময়দানে অভিষেকের টিম]
কিন্তু কোন জাদুমন্ত্রে এ ভাবে আবার ফিরে এলেন রাহানে? কী করে ফিরে এল তাঁর আত্মবিশ্বাস, সমস্ত রকমের ক্রিকেট থেকে ব্রাত্য হতে হতে যা এত দিনে নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার কথা? মুম্বইয়ে রাহানের ঘনিষ্ঠমহলে কথাবার্তা বলে বেশ কয়েকটা তথ্য পাওয়া গেল।
শোনা গেল, রাহানে এর আগে যে সমস্ত ফ্র্যাঞ্চাইজিতে ছিলেন, তার চেয়ে কেকেআরে অনেক বেশি খোলামেলা থাকতে পারছেন। কারণ, টিমের অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার মুম্বইয়ের ছেলে। নাইট মেন্টর অভিষেক নায়ার, বোলিং কোচ ওঙ্কার সালভি– সবাই মুম্বইয়ের। টিমের সেট আপে মুম্বইয়ের জল-বাতাস আছে বলে রাহানের সুবিধে হয়েছে। খেলা শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে রাহানে বলেও গেলেন, “বহু দিন পর খেলার সুযোগ পেলাম। শেষ দু’বছর খুব কম ম্যাচ খেলেছি। খেটেছি আমি প্রচুর। কিন্তু সুযোগটাও তো দরকার। কেকেআরকে ধন্যবাদ, আমাকে সুযোগ দেওয়ার জন্য।”
দ্বিতীয়ত বলা হচ্ছে, রাহানে জানতেন, এবার একটা বা দু’টো ম্যাচে না পারলে তাঁকে বাদ পড়ে যেতে হবে না। কারণ– অস্ট্রেলিয়ার সাদা বলের অধিনায়ক কাম ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চ ঢুকতে ঢুকতে গোটা পাঁচেক ম্যাচ হয়ে যাবে। পাঁচটা ম্যাচ তিনি পাবেন। তিন, রনজি খেলার সময় জাতীয় নির্বাচকদের কাছ থেকে পাওয়া বিশ্বাস। যাঁরা নাকি রাহানেকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, রান করলে জাতীয় দলে ফিরে আসতে পারবেন তিনি।
অতএব, রাহানে নাকি জানতেন যে, সমস্ত লাইফলাইন একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। রনজি, আইপিএলে পারফর্ম করলে সুযোগ এখনও আছে। চার এবং অতীব গুরুত্বপূর্ণ, ঘরের মাঠ। আইপিএলের গ্রুপ পর্ব হচ্ছে এবার মুম্বইয়ে আর পুণেতে। ছোট থেকে ওয়াংখেড়েতে খেলে খেলে তিনি জানেন, এ মাঠে রান পেতে হলে কী করা দরকার?
রাহানে ঘনিষ্ঠ কেউ কেউ এ দিন রাতে মুম্বই থেকে ফোনে বলছিলেন যে, চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে উদ্বোধনী ম্যাচের আগের রাত থেকে নাকি রাহানেকে প্রবল আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল। এঁদের কাউকে কাউকে নাকি রাহানে বলেও দিয়েছিলেন যে, অহেতুক চিন্তা না করতে। তিনি নাকি জানেন যে, শনিবার রান পাবেন! আর কী আশ্চর্য, সমালোচক নামক ‘শত্রু’দের মুখে ছাই দিয়ে পেলেনও!
রাহানে ঘনিষ্ঠদের কেউ কেউ বলছিলেন, গত বেশ কিছু দিন ধরে কী ভাবে মুম্বইকরের বিশ্বাস ফেরানোর কর্মযজ্ঞ চলেছে। তাঁকে বোঝানো হয়েছে, আইপিএলে নিজের পুরনো ইনিংসের ভিডিও রেকর্ডিং দেখতে। বলা হয়েছে, আইপিএলে সেঞ্চুরি আছে তোমার। সেই মঞ্চে না পারার কোনও তো কারণ নেই। ওয়াংখেড়েও রাহানের যে সমস্ত সুখস্মৃতি আছে, তা অহর্নিশি মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কয়েক বছর আগে ওয়াংখেড়েতে রাহানের গোটা নব্বই রান। বলা হচ্ছে, রাহানের বিশ্বাস ফেরানোটা বড় দরকার ছিল।
আর কে না জানে, বিশ্বাসেই মিলায় বস্তু? জীবনে। ক্রিকেটেও।