সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ১১ ম্যাচে ৭টিতে হার। পয়েন্টের খাতায় মাত্র ৮। নেট রান রেটের অবস্থাও তথৈবচ। বড় কোনও মিরাকল না ঘটলে এই মরশুমে কেকেআরের (KKR) প্লে-অফে খেলার সম্ভাবনা প্রায় শেষ। কিন্তু কেন এই হাল হল নাইটদের? শ্রেয়স আইয়ারদের ব্যর্থতার দায় কি শুধু টিম ম্যানেজমেন্টের? শ্রেয়স আইয়ার, অ্যারন ফিঞ্চরা (Aron Finch) কি একেবারেই দায়ী নন? চলুন খুঁজে দেখা যাক নাইটদের হারের চার কারণ।
১। কেকেআরের হতশ্রী পারফরম্যান্সের প্রথম এবং প্রধান কারণ অবশ্যই নিলামে ভুল স্ট্র্যাটেজি। নাইটরা বরাবারই নিলামে লো-প্রোফাইল থাকতে পছন্দ করে। ২০১১ সালের সেই বিখ্যাত নিলামের পর আর সেভাবে তারকার পিছনে ছুটতে দেখা যায়নি নাইটদের। বরং তাঁরা নিজেদের কোর টিম ধরে রাখায় বিশ্বাসী। কিন্তু সেটাই এবার কাল হল নাইটদের। নিজেদের কোর দল ধরে রাখতে গিয়ে নীতীশ রানা, প্যাট কামিন্স, শিভম মাভিদের পিছনে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে ফেলল নাইটরা। সেই সঙ্গে রাহানে, সাউদিদের (Tim Southee) মতো বুড়ো ঘোড়ার পিছনে ছোটে কেকেআর। অথচ ওই একই পরিমাণ টাকা খরচ করে ডি’ কক, ওয়ার্নার, ধাওয়ান, রাহুল ত্রিপাঠীদের মতো তারকাদের অনায়াসে দলে নেওয়া যেত। নিলামের এই ভুল স্ট্র্যাটেজিই ডুবিয়ে দিল কেকেআরকে।
[আরও পড়ুন: দিল্লি ক্যাপিটালসে ফের করোনার হানা, আক্রান্ত এক সদস্য, ধোনিদের বিরুদ্ধে ম্যাচ ঘিরে প্রশ্ন]
২। নিলামে নামার আগেই অবশ্য বড় ভুল করে ফেলেছিল কেকেআর। সেটা হল ভুল ক্রিকেটারকে রিটেন করে। আন্দ্রে রাসেল এবং সুনীল নারিনের (Sunil Narin) ব্যাপারটা তবু মানা গেল। ধরে নেওয়া হল ভেঙ্কটেশ আইয়ারও গত মরশুমে ভাল খেলেছেন। তাছাড়া জাতীয় দলে খেলছেন, তাই তাঁকে রিটেন করা হল। কিন্তু কোন যুক্তিতে চোটপ্রবণ বরুণ চক্রবর্তীকে নাইটরা রিটেন করল সেটা কারও বোধগম্য হচ্ছে না। বরুণের জায়গায় দিব্যি শুভমন গিল, রাহুল ত্রিপাঠী বা প্রসিদ্ধ কৃষ্ণকে রিটেন করা যেত।
৩। এতো গেল নিলামের স্ট্র্যাটেজি। টুর্নামেন্ট শুরুর পরও ম্যানেজমেন্টের একাধিক কৌশল বোধগম্য হয়নি বিশেষজ্ঞদের। টুর্নামেন্টের একাদশ ম্যাচ পর্যন্ত নিজেদের সেরা একাদশ খুঁজে পায়নি কেকেআর। প্রতি ম্যাচে দলে বদল, ওপেনিং জুটিতে বদল, বোলিং বিভাগে বদল। এত পরিবর্তন কোনও দলের পক্ষেই স্বাস্থ্যকর নয়। নাইটদের মূল সমস্যা হল কেকেআরের তারকারা জানেনই না দলে তাঁদের কাজটা কী?
৪। শ্রেয়স আইয়ার এই মরশুমে ব্যর্থ। হ্যাঁ, খাতায় কলমে হয়ত নাইট অধিনায়ক মোট রানের নিরিখে টুর্নামেন্টের প্রথম দশে থাকবেন। কিন্তু কেকেআরের যে প্রত্যাশা শ্রেয়সের কাছ থেকে ছিল সেটা পূরণ হয়নি। কোনও ম্যাচেই নাইট অধিনায়ক নিজে ক্রিজে থেকে ম্যাচ শেষ করার চেষ্টা করেননি। উলটে স্বভাববিরুদ্ধভাবে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে গিয়ে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে এসেছেন। অনেক সময় মনে হয়েছে কেকেআরের জয়ের থেকে জাতীয় দলে নিজের জায়গা পাকা করাটাই মূল লক্ষ্য শ্রেয়সের। তাছাড়া, অধিনায়ক হিসাবে শুরুটা ভাল করলেও দলকে শেষের দিকে তাতাতে ব্যর্থ হয়েছেন শ্রেয়স।
[আরও পড়ুন: সম্মান না পেয়েই IPL ছেড়েছেন গেইল! আগামী মরশুমেই ফিরতে চান ‘ইউনিভার্স বস’]
৫। এই মরশুমে দল হিসাবে ক্লিক করেনি নাইটরা। যে চারটি ম্যাচ তাঁরা জিতেছে তাও কারও না কারও ব্যক্তিগত ক্যারিশমায়। টপ অর্ডার পুরোপুরি ব্যর্থ। বোলিং বিভাগ কখনও কখনও ভাল করলেও ডেথ ওভারে সবাই রান দিয়েছে। শুধু আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারিন এবং উমেশ যাদব (Umesh Yadav) ছাড়া আর কোনও ক্রিকেটারই সফল হননি। নাইটদের সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে ভাল মানের উইকেটরক্ষক-ব্যাটারের অভাব। শেলডন জ্যাকসন যিনি কিনা ঘরোয়া ক্রিকেটে এতটা সফল, তিনি নাইট জার্সিতে চূড়ান্ত ব্যর্থ। বরুণ চক্রবর্তী এবং ভেঙ্কটেশ আইয়ার নিজেদের সেরা ফর্মের ধারেকাছে যেতে পারেননি।
সুতরাং, নাইটদের ব্যর্থতার দায় মূলত ম্যানেজমেন্টের হলেও পুরোপুরি ম্যানেজমেন্টের নয়। কিছুটা হলেও ক্রিকেটারদেরও।