প্যারিস: প্যারিসের শার্ল ডি’ গল বিমানবন্দরের টার্মিনাল ১। জীবনের আঠেরোটি বছর এটাই ছিল মেহরান করিমি নাসিরির ‘বাড়ি’। লাল রঙের একটি প্লাস্টিকের বেঞ্চ দখল করে বসে থাকতেন দিনভর, রাতে ঘুমাতেনও সেটিতেই। কাজ বলতে ছিল যাত্রীদের পর্যবেক্ষণ করা, ডায়েরি লেখা আর বিমানবন্দর-কর্মীদের সঙ্গে গল্প করা। খাবারও খেতেন সেই কর্মীদের থেকেই। আদপে ইরানি ‘শরণার্থী’ মেহরানকে নিয়ে ছবি বানিয়েছেন স্পিলবার্গের মতো পরিচালক, অভিনয় করেছিলেন হলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস। তাঁকে নিয়ে তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্রও। মেহরানের আত্মজীবনী প্রকাশিত হয়েছে বই রূপে। সেই ‘টার্মিনাল ম্যান’-এর মৃত্যু হল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে, শনিবার। সেই বিমানবন্দরেই।
[আরও পড়ুন: আলিয়া, বিপাশার পর এবার মা হচ্ছেন ক্যাটরিনা? বেবি বাম্পের ছবি ঘিরে বলিপাড়ায় তুমুল গুঞ্জন]
১৯৮৮ থেকে ২০০৬ সাল। মেহরানের জীবনের এই সময়টুকুই কেটেছে প্যারিসের সেই বিমানবন্দরে। কিন্তু কী করে এই এয়ারপোর্টই হয়ে উঠল তাঁর ঠিকানা? ১৯৪৫ সালে ইরানের সোলেমানে জন্ম মেহরানের। বাবা ইরানি, মা ব্রিটিশ। ১৯৭৪ সালে পড়তে যান ইংল্যান্ডে। তাঁর দাবি, ফিরে আসার পর ইরানের রাজা মহম্মদ রেজা শাহর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর অভিযোগে তাঁকে আটক করা হয় এবং পরবর্তীকালে পাসপোর্ট ছাড়াই নির্বাসিত করা হয়। তারপর একাধিক দেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানালেও তাঁর আবেদন গৃহীত হয়নি। বেলজিয়ামের ইউনাইটেড নেশনস হাই কমিশনার ফর রিফিউজি তাঁকে ‘শরণার্থী’ তকমা দেয়। ১৯৮৮ সালে লন্ডনে যাওয়ার জন্য ফ্রান্স থেকে বিমানে ওঠেন। লন্ডনে অবতরণের পর ইমিগ্রেশন অফিসারদের নিজের পাসপোর্ট দেখাতে পারেননি। তাই গ্রেফতার করে ফ্রান্সে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যদিও পরে ছাড়া পান। আইনের চোখে মেহরান ছিলেন ‘শরণার্থী’। নির্দিষ্ট করে কোনও দেশেই তাঁকে পাঠানো সম্ভব ছিল না। আর তাঁর নিজের ইচ্ছা ছিল ব্রিটেন যাওয়ার, যা সম্ভব ছিল না। তাই সেই থেকে ফ্রান্সের ওই বিমানবন্দরের এক নম্বর টার্মিনালই হয়ে ওঠে তাঁর ‘বাড়ি’।