নিউরো এন্ডোক্রাইন টিউমার, মারণ কর্কট রোগে আক্রান্ত ইরফান খান মাস খানেক মার্কিন মুলুকে চিকিৎসা করার পর পর্দায় ফিরলেন। কিছুদিন আগেই বলেছিলেন, “আমার জন্য অপেক্ষা করুন!” কেন? এই ‘আংরেজি মিডিয়াম’ই তার উত্তর। লিখছেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ।
পরিচালক- হোমি আদাজানিয়া
অভিনয়ে- ইরফান খান, রাধিকা মদন, করিনা কাপুর, ডিম্পল কাপাডিয়া, দীপক ডোব্রিয়াল, রণবীর শোরে
বাবা-মা’দের নিয়ে জড়তা
ঠিকঠাক ইংরেজি বলতে পারেন না। কিংবা হাবভাব-চেহারায় কেতাদুরস্ত ছাপ নেই। তাই মা-বাবাদের নিয়ে আমরা অনেক সময়েই বাইরের দুনিয়ার সামনে সংকোচ বোধ করি। তবে মা-বাবাদের নিয়ে আমরা গুটিয়ে থাকলেও সন্তানদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তাঁরা কিন্তু রাত-দিন এক করে খাটেন। কারণ একটাই, সন্তান যেন ‘দুধে-ভাতে’ থাকে। তারা যাতে ভাল স্কুল-কলেজে পড়তে পারে। “গায়ের রক্ত বিক্রি করে হলেও পড়াব…” এই কথাগুলো বোধহয় খুব একটা অচেনা নয়! তবে মা-বাবার সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক যে সবসময়েই মধুর, তা কিন্তু নয়! প্রত্যেক সম্পর্কের মতো এক্ষেত্রেও ওঠাপড়া লেগেই থাকে। সেরকমই এক বাবা-মেয়ের সম্পর্কের গল্প ‘আংরেজি মিডিয়াম’। বাবার চরিত্রে তুখড় ইরফান খান।
চেনা গল্প, অচেনা স্বাদ
পড়াশোনায় মোটামুটি তারিকা বনশল। ছোট থেকেই ইচ্ছে বিদেশে পড়ার। কিন্তু চোদ্দো পুরুষে কেউ দেশের বাইরে পা রাখেনি। কাজেই ছেঁড়া কাথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্নের মতোই ঠেকে। অন্তত তার সহজ-সরল বাবা মিস্টার চম্পকজি’র কাছে। শর্ত অনুযায়ী মেয়েকেই পড়াশোনা করে স্কুলের স্কলারশিপ জোগাড় করতে হবে। হলও তাই! কিন্তু বাদ সাধল বাবার সহজ-সরল, সত্যবাদী যুথিষ্ঠির প্রকৃতির চরিত্র। বাতিল হয় স্কুলের স্কলারশিপ। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন একপ্রকার অধরাই ঠেকে তারিকার কাছে। যে বাবা একসময়ে বেঁকে বসেছিল মেয়েকে বাইরে না পাঠানোর জন্য, সেই বাবাই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে এল যে মেয়েকে ঘর-বাড়ি বেচে হলেও লন্ডনে পাঠাবে পড়তে। শুরু হল বাপ-মেয়ের মার্কিন মুলুকে পাড়ি দেওয়ার প্রস্তুতি। তার মাঝেই ঘটে যায় নানা কাণ্ড! যেগুলোই এই গল্পের আসল উপকরণ। মেয়ের স্বপ্নকে সত্যি করতে একজন বাবা কী কী করতে পারে কিংবা কত দূর যেতে পারে, সেগুলোই এই গল্পের উপকরণ। যা দেখে আপনি হাসবেন, আবার আবেগেও ভাসতে পারেন। কিংবা চম্পকজি’র মূর্খামি দেখে আপনার কখনও বিরক্তও লাগতে পারে! কারণ, আমাদের চারপাশে চেনা ব্যক্তিত্বদের অনেককেই এই চম্পকজি’র চরিত্রের মধ্যে খুঁজে পাবেন।
এক বাবার হাল না ছাড়ার গল্প
মা হারা মেয়ে। তাই মেয়ের সব আবদার মেটাতে বাবাও প্রাণপণ চেষ্টা করে। কিন্তু মেয়ের লন্ডনে পড়ার শখ মেটাতে গিয়েই হিমশিম খেতে হয় ঘসিটেরাম মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক ওরফে ইরফান খানকে। ইংরেজি না জেনে বিদেশ-বিভুঁইয়ে যাত্রা, মেয়েকে নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতি করানো… সবকিছুই জীবনের কঠিন চ্যালেঞ্জের মতো ঠেকে ইরফানের কাছে। কিন্তু হাল ছাড়ে না সেই বাবা। এরকমই এক বাবা-মেয়ের আবেগঘন, মিষ্টি সম্পর্কের গল্প ‘আংরেজি মিডিয়াম’। ইরফান খানের অভিনয় বরাবরের মতোই তুখড়। তবে, জীবনে দৌড়ঝাপের মাঝে কিছুটা ক্লান্ত দেখাল তাঁকে। ঘসিটেরাম চম্পকজি’র চরিত্রেও তার প্রভাব পড়েছে।
[আরও পড়ুন: পৌরহিত্য-পিরিয়ডস নিয়ে প্রথাগত বিশ্বাসে কুঠারাঘাত শবরী ঋতাভরীর ]
উল্লেখ্য!
ছবিতে ইরফান খানের অভিনয়ের পাশাপাশি মেয়ের চরিত্রে রাধিকা মদনকে কিন্তু দিব্যি মানিয়েছে। ধারাবাহিকে গৃহবধূর চরিত্রে দেখে অভ্যস্ত একজন অভিনেত্রীকে স্কুলছাত্রীর চরিত্রে একটু বেমানানই লাগে বটে! উল্লেখ্য, বিশাল ভরদ্বাজের সঙ্গে ‘পটাকা’য় কাজ করার সময়ও সানায়া মালহোত্রার দিদির চরিত্রে ছিলেন তিনি। কিন্তু এক্ষেত্রে কী অদ্ভূতভাবে ১৮-১৯ বছরের এক স্কুলছাত্রীর ভূমিকায় রাধিকাকে মানিয়েছে এই ছবিতে। রাজস্থানী ভাষার টান, বাবার আদুরে মেয়ের মতো টেনে টেনে কথা বলা, কথায় একটু-আধটু জড়তা ঠিক তারিকার চরিত্রের জন্য যেমনটা দরকার ছিল, ততটাই! এককথায়, রাধিকা নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন এই চরিত্রের জন্য।
অপ্রাসঙ্গিক, অযাচিত
ভাল গল্প কিংবা বিষয়বস্তু হলেও বাবা-মেয়ের রসায়ন দেখাতে গিয়ে অযথা ছবির দৈর্ঘ্য বাড়ানো হয়েছে। ২ ঘণ্টা ২০ মিনিটের প্রয়োজন ছিল না এই গল্প বলার জন্য! করিনা কাপুরের কাস্টিং শুধুমাত্রই ‘তারকাখচিত ছবি’ তকমার জন্য মনে হল। অন্য যে কারও পক্ষেই এই চরিত্রে অভিনয় করা অসম্ভব কিছু ছিল না! তবে সন্তানদের সঙ্গে বাবা-মায়ের সম্পর্কের রসায়ন বোঝানোর জন্য বলিউড আবারও ‘ইংলিশ ভিংলিশ’, ‘হেলিকপ্টার ইলা’, ‘উড়ান’-এর মতো আরও একটা ছবি উপহার দিল।
[আরও পড়ুন: ধর্ষিতাদের কোনও জাত হয় না, ধর্ষকরাই সামাজিক কীট! ১৩ মিনিটের ছবিতে বাজিমাত বঙ্গললনার ]
The post আপনাকে যতটা হাসাবে, ততটাই কাঁদাবে ইরফান খানের ‘আংরেজি মিডিয়াম’ appeared first on Sangbad Pratidin.