shono
Advertisement

অনেক বঞ্চনা সহ্য করেছেন, এবার কি দাদাগিরির পালা সৌরভের?

বাইরে থেকে যত শান্ত, ধৈর্যশীল মনে হোক আসলে তাঁর মধ্যে অবিরত একটা ব্যাটিং পাওয়ার প্লে চলে। The post অনেক বঞ্চনা সহ্য করেছেন, এবার কি দাদাগিরির পালা সৌরভের? appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 08:06 PM Oct 17, 2019Updated: 08:06 PM Oct 17, 2019

অব তেরা কেয়া হোগা কালিয়া হিজ টাইম স্টার্টস নাও! দৌড়ের ফাঁকে পুরনো দু-একটা লোনও কি শোধ করে ফেলবেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়? অনুমানে গৌতম ভট্টাচার্য

Advertisement

কালিয়া আসলে যত না নাম তার চেয়ে বেশি পদবী! পঞ্জাব হিমাচলপ্রদেশ বা কর্নাটক উপকূলবর্তী সারস্বত ব্রাহ্মণরা অনেকে কালিয়া পদবী ব্যবহার করেন। ভারতীয় জনজীবনে অবশ্য কালিয়া মানে গব্বরের ডেরায় ফিরে যাওয়া সেই আতঙ্কিত মুখ, সর্দার গলতি সে মিস্টেক হো গয়া।

‘শোলে’-র সেই কালিয়া মাত্র হপ্তাদুয়েক আগে মারা গেলেন। আসল নাম ছিল বিজু খোটে। মারাঠি-হিন্দি মিলে সাড়ে চারশোর উপর ফিল্মে অভিনয় করেছেন। তার মধ্যে ‘আন্দাজ আপনা আপনা’-র মতো সুপারহিটও আছে। কিন্তু লোকের মনে গেঁথে রয়েছে ওই যন্ত্রণাকাতর কয়েক সেকেন্ডের অভিব্যক্তি। যেখানে ডাকাত দলের সর্দার বধ্যভূমিতে পেড়ে ফেলার আগে তাকে হুঙ্কার দিচ্ছে, অব তেরা কেয়া হোগা কালিয়া।

বাপি বাড়ি যা যেমন রণক্ষেত্রে শত্রুকে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার পর অন্তিম উল্লাস। অব তেরা কেয়া হোগা কালিয়া তার দু’টো আগের স্টেশন। যা প্রতিশোধের চূড়ান্ত মন্ত্র।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে যাঁরা কাছ থেকে দেখেন তাঁরা হরবখত বলে থাকেন ব্যক্তিগত জীবনে মানুষটার ধৈর্য অপরিসীম। স্বাভাবিক-অস্বাভাবিক কোনও অবিন্যস্ততাই তাঁর ধৈর্য ভাঙার পক্ষে যথেষ্ট নয়। সমান্তরালভাবে তাঁর মধ্যে একটা সংগ্রামী হার্ড ডিস্কও সেভ করা। অবিচারে-আক্রোশে যে মুহূর্তে স্টেনগান তুলে কালিয়াদের নিশানা করতে পারে।

কেরিয়ারের মধ্যভাগেও যে সৌরভকে দেখেছি তাঁর মধ্যে ভবিষ্যৎ জীবনে কর্মকর্তা বনে যাওয়ার কোনও ইচ্ছে প্রকাশ পায়নি। ক্রিকেটের সঙ্গে থাকবেন, কোচ হবেন, ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট হওয়ার চেষ্টা করবেন- উচ্চাকাঙ্খার আকাশ মোটামুটি একটা ঘেরাটোপে ছিল। পরের দিকে সেটা ভাঙতে ভাঙতে নতুন বায়ুমণ্ডল প্রকাশিত হয়ে পড়ে। ক্ষমতার আকাশ!

এই বদল খুব সম্ভবত গ্রেগ চ্যাপেল উত্তর জীবনের টানা ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্যে যেতে যেতে। লক্ষ্য করেছি লিয়েন্ডার পেজের প্রসঙ্গ উঠলেই আনমনা হয়ে পড়তেন সৌরভ, “খুব লাকি। এমন একটা খেলা খেলে যেখানে নিজের সিলেকশন নিজেই করতে পারে। আমাদের হাল নয়।” একদিন লিয়েন্ডারের সঙ্গে দেখা হতে বলেও ফেলেছিলেন, ‘‘ক্রিকেট হলে ওরা তোকে আগেই বাদ দিয়ে দিত।’’ লিয়েন্ডার হেসে সরে যান। তার পরের সপ্তাহেই ভারতীয় ডেভিস কাপ দল থেকে নির্মমভাবে তাঁকে ছেটে ফেলা হয়। কিন্তু লিয়েন্ডার অন্তত এই স্বস্তির সঙ্গে সহবাস করতে পেরেছেন টেনিস সংস্থার যা কারিকুরি, বছরের এক কী দু’সপ্তাহ। বছরের বাকি ৫০ সপ্তাহ কে ছোঁবে আমায়? আমিই প্লেয়ার! আমিই সিলেক্টর! আমিই বোর্ড!

[ আরও পড়ুন: শান্তনু মৈত্রর রেকর্ডিং স্টুডিওতে চুপচাপ বসে গান শুনতেন অভিজিৎ ]

সৌরভ চেয়েছিলেন আদর্শগতভাবে এমন কাঠামোয় নিজেকে দেখতে। কিন্তু তাঁর দুনিয়া সিলেক্টরের। তাঁর দুনিয়া ক্রিকেট বোর্ডের। যেখানে টানা রান করলেও তীব্র ফরমায়েশ আসে এটাই শেষ। কিটস গুছিয়ে ফেলো। অবসর নিতে একরকম বাধ্য হয়ে গেলেন ফ্র‌্যাঞ্চাইজি পৃথিবীতে। সেখানেও প্লেয়ারের কোনও দাম নেই। যেখানে টিম সিলেকশন থেকে ব্যাটিং অর্ডার- কোনও ব্যাপারেই মহাতারকা ক্রিকেটারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই। এমনকী টস জিতে কী করা হবে সেব‌্যাপারেও মালিককে জবাবদিহি করতে হচ্ছে।

কমবেশি সবাই এই ফর্ম্যাটে অপমান সহ্য করেছেন। শচীন তেণ্ডুলকর। রাহুল দ্রাবিড়। অনিল কুম্বলে। বীরেন্দ্র শেহবাগ। আজকের রোহিত শর্মা। কে নন? এঁরা সবাই নীরবে সয়েছেন। সৌরভ- তিনি বরাবরের সংগ্রামী বাঙালি। তিনি কী করে মুখ বুজে সইতে পারেন? তখন বাধা দিতে পারেননি। অত্যাচারিত হতে হয়েছে। কিন্তু প্রতিটি রক্তবিন্দু ঝরতে ঝরতে নতুন প্রতিজ্ঞায় সঁপেছেন। আমাকেও ঢুকতে হবে ক্ষমতার চেম্বারে। সেখানে জাঁকিয়ে বসতে হবে। নইলে এই শাসিত হওয়ার অসহ্য জীবন চলতেই থাকবে।

এই সৌরভ যেন বিষণ্ণ সমঝোতা করে নিয়েছেন যে ট্যালেন্ট নয় ক্ষমতাই বড়। গুলি খেতে না চাইলে নিরাপত্তার জন্য বন্দুকটা নিজের হাতে নাও। মুম্বইয়ে তাঁর প্রথম বই ‘আ সেঞ্চুরি ইজ নট এনাফ’-এর লঞ্চ। রিলিজ করবেন শচীন তেণ্ডুলকর। ‘তাজ ল্যান্ডস এন্ড’-এ হবে। যার দুটো বাড়ি পরে থাকেন বলিউডের বাদশা। দু’দিন আগে বইটা পড়ে যিনি নিজে থেকে সৌরভকে ফোনও করেছেন যে দারুণ লেগেছে তাঁর। এর বিপণনে যে কোনওরকম সাহায্যের প্রয়োজন হলে তিনি রাজি। সৌরভ-ঘনিষ্ঠদের তখন মনে হচ্ছে অনেক ধ্বংসাত্মক লাইন বা বিতর্কিত এপিসোডের নির্ঘাত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত প্রতীক্ষায় ছিলেন এসআরকে। তাই এখন এত খুশিয়ালভাবে বই প্রোমোশনে নিজে থেকে নামার প্রস্তাব দিচ্ছেন।

যা হোক তিনি রাজি মানে তো স্বপ্নের লঞ্চ কম্বিনেশন। শচীন-শাহরুখ-সৌরভ! বইয়ের আর কী প্রচার হতে পারে? সমস্যা হল সৌরভ নিজেই রাজি নন; থাক না আমরাই করে নেব। কিছুতে রাজি করানো গেল না। অগত্যা মন্নতের দুটো বাড়ি দূরে বই প্রকাশ হল শাহরুখকে আমন্ত্রণ পর্যন্ত না জানিয়ে। পরিষ্কার বোঝা গেল, কেকেআর জীবনের অনেক জ্বালা এখনও লেখকের অন্তঃস্থলে লুকিয়ে।

বুদ্ধিমান লোকেরা জানেন, জীবনের সব বদলা নেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও নেওয়া যায় না। নিতে গেলে গোঁয়ার্তুমির পর্যায়ে চলে যায়। কিছুটা নেওয়া যায়, অনেকটাই গিলতে হয়। সৌরভও জানেন, ভুলব না কিন্তু ক্ষমা করে দেব লাইনটা জীবনে কত জরুরি। তা বলে যেগুলো ব্যাটের ডগায় এসে গিয়েছে সেগুলো মারবেন না এত সংযম বন্ধু রাহুল দ্রাবিড়ের মতো তাঁর নেই। বাইরে থেকে যত শান্ত, ধৈর্যশীল মনে হোক আসলে তাঁর মধ্যে অবিরত একটা ব্যাটিং পাওয়ার প্লে চলে। সুবিধে পেলেই ঘাড় ধরে টানতে টানতে নিয়ে এসো। আর কোনও দয়ামায়া না রেখে শুট করো। মনে নেই ওরা তোমায় কী করেছিল!

চব্বিশ ঘণ্টা আগেই নবনির্বাচিত বোর্ড প্রেসিডেন্ট ফোন সাক্ষাৎকারে ‘সংবাদ প্রতিদিন’-কে বলেছেন, সিনিয়র টিম এত ভাল খেলছে যে তিনি কোনওরকম ঘাঁটাবেন না। বিদেশে হালফিল কোহলির টিমের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশস্তিতে ভরিয়ে দিয়েছেন। রবি শাস্ত্রীর ব্যাপারে কঠিন সিদ্ধান্তের জল্পনাকে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, “আর ইউ ম্যাড?”

[ আরও পড়ুন: বাঘমামার দর্শন পেতে চান? জঙ্গল সফরের সময় এগুলো মাথায় রাখুন ]

এই সৌরভ প্রশাসক সৌরভ। যাঁর সব সময় মনের কথা খুলে বলার কোনও গরজ নেই। এঁর আর কোনও টেনশন নেই যে আমায় এখুনি অ্যাটাকে যেতে হবে। ইনি জানেন সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত ক্ষমতা আমার। যখন ভাল মনে করব একটা বোতাম টিপব। ইচ্ছে হলে সুযোগ বুঝলে হালকা হেনস্তা করব। চাইলে বড় ডোজও দিতে পারি। ইচ্ছে না হলে আবার কিছুই করব না। পুরোটা আমার ওপর।

পরের বছর অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। বিশ্বাস করতে হবে তার আগে সৌরভ জানতে চাইবেন না কেন পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতা থাকছে না? কেন আইসিসি নক-আউটে টিম বারবার ছিটকে যাচ্ছে জানতে চাইবেন না শাস্ত্রীর কাছে? খোঁজ নেবেন না টানা সিরিজ জয় সত্ত্বেও টিমের একটা অংশ ড্রেসিংরুমে অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে কেন?

হতেই পারে না। তাহলে মানতে হবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় হরিদ্বারে থাকেন। তাঁর আধার কার্ড বেহালার বীরেন রায় রোডের অ্যাড্রেসে নেই। 

আর হ্যাঁ, সৌরভের মতো কে না জানে যে হাওড়া পৌঁছতে হলে যেমন বর্ধমান হয়ে আসতে হয়, তেমনি বাপি বাড়ি যা-র সফল দৃশ্যায়নের জন্য ‘অব তেরা কেয়া হোগা কালিয়া’ স্টেশনে চা-ঝালমুড়ি না খেলেই নয়!

The post অনেক বঞ্চনা সহ্য করেছেন, এবার কি দাদাগিরির পালা সৌরভের? appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup ছাঁদনাতলা toolbarvideo শোনো toolbarshorts রোববার