সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মস্কোর কনসার্ট হলে হামলার দায় স্বীকার করল আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (খোরাসান)। শুরুর দিকে হামলার নেপথ্যে চেচেন জঙ্গিদের হাত থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছিল। তবে আইএসের দাবি গোটা পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, মস্কোয় কি ছায়া পড়েছে 'গ্লোবাল জেহাদে'র?
শুক্রবার নিজেদের টেলিগ্রাম চ্যানেল ‘আমাক’-এ একটি বিবৃতি প্রকাশ করে ইসলামিক স্টেট (ISIS)। সংগঠনটির দাবি, মস্কোর কনসার্ট হলে হামলা চালিয়েছে তাদেরই ফিদায়েঁ মুজাহিদরা। এই ঘোষণার পরই রীতিমতো সিঁদুরে মেঘ দেখছে ক্রেমলিন। রুশ নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কপালেও চিন্তার ভাঁজ গভীর হয়েছে। রুশ সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, শুরুর দিকে গোয়েন্দা সংস্থার একাংশ মনে করছিল হামলার নেপথ্যে চেচেন জঙ্গিদের হাত থাকতে পারে। তবে আইএসের দাবি গোটা পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, মস্কোয় কি ছায়া পড়েছে 'গ্লোবাল জেহাদে'র? কেন এই হামলা?
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বজুড়ে খিলাফত (ইসলামিক শাসন) স্থাপনের লড়াই চালাচ্ছে ইসলামিক স্টেট। আমেরিকা থেকে আফ্রিকা জেহাদের আগুন জ্বালিয়ে দিতে তৎপর তারা। আইএসের ফৌজে রয়েছে উজবেক, তাজিক, কিরঘিজ, পাকিস্তানি ও ইরানি জঙ্গিরা। শুধু তাই নয়, আমেরিকা, ব্রিটেন ও অন্যান্য পশ্চিমি দেশ থেকে সদস্য জোগাড় করেছে আইএস। রাশিয়ার মুসলমান প্রধান চেচনিয়া প্রদেশ বা চেচেন প্রজাতন্ত্রে শিকড় জমাতে চাইছে ইসলামিক স্টেট। চেচেন জঙ্গিদের হাত করে খিলাফতের চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। তাই মস্কোর কনসার্ট হলে হামলা একপ্রকার শক্তিপ্রদর্শন। তাছাড়া, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির পুতিনকে মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে দেখে আইএস। চেচনিয়া যুদ্ধে পুতিনের নির্দেশে মুসলিমদের গণহত্যা করা হয়েছে বলে দাবি সংগঠনটির। তাই ফের পুতিন মসনদে বসতেই হামলা চালিয়ে শক্তিপ্রদর্শন করল আইএস।
[আরও পড়ুন: পর্ন সাইটে ইটালির প্রধানমন্ত্রীর ডিপফেক ভিডিও! মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ চাইলেন মেলোনি]
প্রসঙ্গত, ইরান, তুর্কমেনিস্তান ও আফগানিস্তানের অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত ইসলামিক স্টেট (খোরাসান) বা আইএস-কে। ২০১৪ সালের শেষের দিকে পূর্ব আফগানিস্তানে শিকড় ছড়াতে শুরু করে তারা এবং দ্রুত চরম নৃশংসতা দেখিয়ে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করে। ইসলামিক স্টেট সশস্ত্র গোষ্ঠীর সবচেয়ে সক্রিয় আঞ্চলিক সহযোগীদের মধ্যে একটি আইএস-কে।
মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মতে, ইরাক ও সিরিয়ায় পরাজিত হলেও যথেষ্ট শক্তি ধরে আইএস। আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ায় ক্রমে শক্তি বাড়াচ্ছে তারা। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ফৌজ সরে যাওয়ায় সে দেশে আরও বেশি সক্রিয় হয়েছে আইএস। আল কায়দার আসন কেড়ে নিয়ে নিজেদের শরীয়তের ধ্বজাধারী হিসেবে প্রতিপন্ন করতে চাইছে সংগঠনটি। বলে রাখা ভালো, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার টুইন টাওয়ারে হামলা চালায় আল কায়দা। পালটা আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান শুরু করে আমেরিকা। সমর বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, তৎকালীন আল কায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেন জানত, আমেরিকার 'মিশন আফগানিস্তান'ই বৈশ্বিক জেহাদের বারুদে স্ফুলিঙ্গের কাজ করবে। তবে আল কায়দাকা সরিয়ে সেই গ্লোবাল জেহাদের মুখ এখন অনেকটাই ইসলামিক স্টেট।