সুকুমার সরকার, ঢাকা: ভারতীয় উপমহাদেশে ক্রমে শিকড় মজবুত করছে ইসলামিক স্টেট। বিশেষ করে বাংলাদেশে নব্য জেএমবি জঙ্গি গোষ্ঠীটির মাধ্যমে নিজেদের ‘জেহাদি’ মতাদর্শ আরও ছড়িয়ে দিচ্ছে আইএস। ফলে উদ্বেগ বাড়ছে পুলিশ-প্রশাসনে।
[আরও পড়ুন: জঙ্গি কার্যকলাপ রুখতে বাংলাদেশকে প্রশিক্ষিত কুকুর উপহার ভারতীয় সেনার]
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের একটি পুলিশ ছাউনিতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে এই নাশকতার নেপথ্যে নব্য জেএমবি’র হাত রয়েছে বলে মনে করা হলেও এই হামলার দায় স্বীকার করে আইএস। নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তারা বলছেন, গত বছর বিভিন্ন সময়ে ঢাকার পাঁচটি জায়গায় পুলিস ভ্যান ও পুলিস ছাউনিতে বোমা বিস্ফোরণ ও খুলনা ও চট্টগ্রামের বোমা বিস্ফোরণের মিল রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা নমুনার মিল রয়েছে। এই থেকে ধারণা করা হচ্ছে প্রতিটি হামলার সঙ্গে নব্য জেএমবি জড়িত থাকতে পারে। এই বিষয়ে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার মাহবুবুর রহমান বলেন, “এই নাশকতার নেপথ্যে কে বা কারা জড়িত তা জানার চেষ্টা করছি আমরা। ঘটনাস্থল থেকে একাধিক নমুনা উদ্ধার করে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। নব্য জেএমবি সদস্যরাই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কি না সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নই। তবে বিস্ফোরণের ধরন দেখে আগের ঘটনার সঙ্গে মিল পাওয়া যাচ্ছে।”
বাংলাদেশের সন্ত্রাসদমন শাখার অধিকারিকদের মতে, বাংলাদেশে লাগাতার চলা অভিযানের জেরে আইএসপন্থী নব্য জেএমবি কিছুটা কোণঠাসা হলেও একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। ছোট ছোট সেলের মাধ্যমে তারা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এমনকি তাদের সঙ্গে সিরিয়ার কারও কারও সঙ্গে যোগাযোগের কিছু তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশে এই সেলগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছে আবু মহম্মদ আল বাঙ্গালি। সে বর্তমানে নব্য জেএমবির আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। বাংলাদেশ পুলিসের এক অফিসারের কথায়, ইদানিং সদস্য সংগ্রহে জঙ্গিরা অনলাইনে ব্যাপক সক্রিয় হয়েছে। সিরিয়া থেকে আইএসের পতনের পর খানিকটা থমকে গিয়েছিল। কিন্তু আইএস আবার সক্রিয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশেও জঙ্গিরা সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে।
এদিকে পুলিশের দাবি, একের পর এক অভিযানে জেএমবি, নব্য জেএমবি-সহ অন্যান্য জেহাদি সংগঠনগুলির কোমর ভেঙে গিয়েছে। ফলে এখন গুলশনের মতো জটিল তথা পরিকল্পিত হামলা করতে পারছে না জঙ্গিরা। সরকারি পরিসংখ্যান মতে, ২০১৩ সালে চারটি জঙ্গি হামলায় ৯ জন, ২০১৪ সালে পাঁচটি ঘটনায় তিন জন, ২০১৫ সালে ২৩টি ঘটনায় ২৫ জন, ২০১৬ সালে ২৫টি ঘটনায়, এর মধ্যে হোলি আর্টিজানও রয়েছে, ৪৭ জন নিহত হয়। ২০১৩-২০১৬ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত জঙ্গি হামলার সংখ্যা বেশি ছিল। হোলি আর্টিজানে হামলার পর সরকার ও পুলিসের বিশেষ পদক্ষেপ ও তৎপরতায় জঙ্গি হামলা দ্রুত কমে যায়। জঙ্গি মোকাবিলায় ঢাকা মহানগর পুলিশ ‘কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)’ গঠনের পর জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক দ্রুত ভেঙে যায়। এছাড়াও এলিট ফোর্স ব়্যাবের অভিযানও ভাল ফল দিয়েছে। সঙ্গে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও ছিল তৎপর।
[আরও পড়ুন: অবশেষে জালে ‘নিখোঁজ আলো’, বাংলাদেশে গ্রেপ্তার কুখ্যাত জঙ্গিনেত্রী]
The post শিকড় মজবুত করছে আইএস অনুপ্রাণিত নব্য জেএমবি, উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ appeared first on Sangbad Pratidin.