শঙ্করলাল চক্রবর্তী: লেখার শুরুতেই একটা কথা বলে রাখি, রয় কৃষ্ণ যদি আজ নিজের ফর্মে থাকে, তাহলে এটিকে মোহনবাগানকে আটকানো মুশকিল। সেমিফাইনালের প্রথম লেগে এগিয়ে থেকেও শেষ মুহূর্তের গোলে ড্র করেছিল সবুজ-মেরুন। সেদিন গ্যালাগো-মাচাদোর জারিজুরি বন্ধ করে দিয়েছিল প্রীতম কোটাল-কার্ল ম্যাকিউ। আজ সেখানে তিরি খেলবে। সঙ্গে থাকবে প্রীতম কোটাল। মনে হয় না গ্যালাগো, মাচাদোরা তেমন সুবিধে করতে পারবে।
আমাকে অনেকে প্রশ্ন করেছেন, সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ভাল খেলেও কেন নর্থইস্ট ইউনাইটেডকে হারাতে পারল না? তাও আবার এগিয়ে থেকে। আমার মতে, মানসিক অবসাদ। আসলে কী জানেন, এশিয়ার সর্বোচ্চ ক্লাব টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। ফুটবলারদের স্বপ্ন থাকে এসিএল খেলার। এটিকে মোহনবাগান এমন একটা অবস্থায় ছিল, যেখানে রয় কৃষ্ণদের এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলা প্রায় নিশ্চিত মনে হচ্ছিল। কিন্তু গ্রুপের শেষ ম্যাচে মুম্বই সিটি এফসির কাছে হেরে যাওয়ার ফলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবে সেটা অবশ্যই একটা ধাক্কা ছিল সবুজ-মেরুনের কাছে।
[আরও পড়ুন: হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, সাডেন ডেথে গোয়াকে হারিয়ে ISL ফাইনালে মুম্বই]
তাই আমার মতে, মানসিক অবসাদ প্রথম ম্যাচে স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ছিল। কোথাও একটা জড়তা, আড়ষ্ট, চোখে লেগেছে। ঠিক উলটোটা দেখছিলাম নর্থইস্টের খেলার মধ্যে। যেখানে তারা নিজেদের মেলে ধরতে কুণ্ঠাবোধ করেনি। তাই মানসিক অবসাদ কাটিয়ে উঠতে পারলে কেউ এটিকে মোহনবাগানকে (ATK Mohun Bagan) আটকাতে পারবে না। হাবাসের এই মুহূর্তে দরকার ফুটবলারদের মন থেকে অবসাদ দূর করা। আগেও বলেছি, এখনও বলছি, নর্থইস্টের (North East United) ইচ্ছাশক্তি প্রবল। প্রথমত, আইএসএলের (ISL) ইতিহাসে প্রথম ফাইনাল খেলার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। দ্বিতীয়ত, খালিদ জামিলের স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে, রয় কৃষ্ণকে যেনতেনপ্রকারেণ আটকানো। খালিদ ভালমতো জানে, কৃষ্ণ যে কোনও মুহূর্তে খেলার রং পালটে দিতে পারে।
গ্রুপ লিগের অনেক খেলায় দেখেছি, সবুজ-মেরুন শিবির মোটেই সুনাম অনুযায়ী খেলেনি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ফিজির স্ট্রাইকার গোল দিয়ে দলকে জিতিয়ে নিয়ে মাঠ ছেড়েছে। গত ম্যাচে শুধু নয়, গ্রুপ লিগের শেষ সাক্ষাতেও রয় কৃষ্ণকে খেলতে দেয়নি খালিদ। আইএসএলের অন্যতম সেরা ফুটবলার হল রয় কৃষ্ণ। তাকে খেলতে না দেওয়া স্বাভাবিক। সুতরাং ডেভিড উইলিয়াম, মার্সেলিনহো, মনবীরদের সেই সুযোগ নিতে হবে। রয় কৃষ্ণকে চেষ্টা করতে হবে, এমন জায়গায় প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের নিয়ে চলে যাওয়া, যেখানে সতীর্থদের কাছে গোল করার সুযোগ চলে আসে। দু’টো ম্যাচে রয় কৃষ্ণ ধরা পড়েছে মানে তার এবার জেদ বাড়তে বাধ্য। নিশ্চয় চেষ্টা করবে গোল দিয়ে যেভাবে হোক নিজেকে জাহির করতে। তাই আজ রয় কৃষ্ণের কাছ থেকে গোল দেখার জন্য টিভির সামনে বসে থাকব। আমার ধারণা, আজ এটিকে মোহনবাগানকে ফাইনালে তোলার প্রধান কারিগর হবে রয় কৃষ্ণ।