সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সবুজ-মেরুন জার্সির টানা আটটি ডার্বি (Derby Match) জয়ের উচ্ছ্বাস এখন পুরোপুরি উধাও। মোহনবাগানের (Mohun Bagan) পাখির চোখ এখন শনিবারের ওড়িশা এফসি (Odisha FC) ম্যাচে। আইএসএলের নতুন কাঠামোয় যুবভারতীর এই ম্যাচটি প্লে অফ এবং এই ম্যাচ জিতলেই সেমিফাইনালে যাওয়ার ছাড়পত্র জোগাড় করে ফেলবে সবুজ-মেরুন শিবির। তাই এই ম্যাচটিকে ফাইনাল ধরে তৈরি হচ্ছে জুয়ান ফেরান্দোর দল। লিগ পর্বের দু’টি ম্যাচের একটিতেও জিততে পারেনি ওড়িশা। একটিতে ড্র হয়েছিল। যুবভারতীতে জিতেছিল মোহনবাগান। তবুও এই ম্যাচকে একটু হালকা ভাবে নিতে নারাজ সবুজ-মেরুন। কী মনোভাব নিয়ে প্লে অফে নামবে মোহনবাগান, তা জানালেন স্লাভকো, হুগো বুমোস এবং প্রীতম কোটাল।
স্লাভকো ড্যামজানোভিচ: ডার্বিতে জেতা এবং ম্যাচের সেরা হওয়ার পরদিন সার্বিয়া ও মন্টেনেগ্রো থেকে দুটো নামী সংবাদপত্র এবং টিভি চ্যানেল আমাকে ফোন করেছিল। তাঁরা জানতে চাইছিল, ভারতীয় ফুটবল সম্পর্কে, ডার্বির পরিবেশ সম্পর্কে। ভারতীয় ফুটবল যথেষ্ট উন্নত এবং ডার্বিতে ৬০ হাজার দর্শক এসেছিল শুনে ওরা অবাক হয়েছে। এখানকার সবুজ-মেরুন সমর্থকরা মন্টেনেগ্রোর সমর্থকদের মতো উগ্র কিনা তাও জানতে চেয়েছিল। আমি তাদের বললাম, এখানকার সমর্থকরা তুলনায় অত্যন্ত শান্ত এবং জয় পাওয়ার জন্য সারাক্ষণ দলকে সমর্থন করে যায়। খুব স্পোর্টিং। ওদের বলেছি, ডার্বির মতোই আরও একটা ডু অর ডাই ম্যাচ আছে শনিবার। প্রতিপক্ষের নাম ওড়িশা। আমাদের পুরো দল এখন ওই ম্যাচ জেতার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। আমার তিন ছেলে-মেয়ে এবং বাবাও ম্যাচটা দেখেছে। তাঁরাও আমার ও দলের জয় দেখে খুশি। তাদেরও বলেছি ডার্বির চেয়েও ওড়িশা ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ। আমার নিজের মনে হচ্ছে, ওড়িশা ম্যাচ না জিতলে ডার্বি জেতার আনন্দ ফিকে হয়ে যাবে। ফলে এটা ফাইনাল ম্যাচ ধরেই এগোতে হবে।
[আরও পড়ুন: একেই বলে ফাস্ট বোলিং! উমেশের গতিতে বিধ্বস্ত অস্ট্রেলিয়া, রইল ভিডিও]
ওড়িশা শক্তিশালী দল। ওদের বিরুদ্ধে যুবভারতীতে শেষ ম্যাচে কিছুক্ষণ খেলেছিলাম শেষের দিক। ওদের ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার মোরিসিও এবং স্প্যানিশ মিডিও ভিক্টর রডরিগেজ পুরো দলের আক্রমণ তৈরি করে। পালটা আক্রমণে আসে। ফলে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ঘরের মাঠে খেলার সুযোগ চেয়েছিলাম সবাই। সেই লক্ষ্যে আমরা সফল। দর্শক সমর্থন আমাদের দিকেই থাকবে। সেটা কাজে লাগিয়ে জিততে হবে। ডার্বিতে সবুজ-মেরুন জার্সিতে পুরো ম্যাচ খেলেছি। নিজের খেলায় আমি এখনও সন্তুষ্ট নই। আমি আরও ভাল খেলতে পারি। সেই সুযোগ পেলে পরের ম্যাচে দেখাবো।”
হুগো বুমোস: ডার্বিতে যে মরিয়া মনোভাব নিয়ে খেলতে নেমেছিলাম, তার থেকেও বেশি একাগ্রতা নিয়ে শনিবার আমাদের মাঠে নামতে হবে। আমি মনে করি, ইস্টবেঙ্গলের থেকে ওড়িশা শক্তিশালী দল। এবং আমাদের মতোই সেমিফাইনালে ওঠার জন্য ওরা মরিয়া হয়ে মাঠে নামবে। ফলে ম্যাচটা হাড্ডাহাডি হবে। কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না। আমরা আত্মবিশ্বাসী কিন্তু আত্মতুষ্ট নই। নব্বই মিনিটের মধ্যেই ম্যাচটা শেষ করতে হবে। অতিরিক্ত সময় বা টাইব্রেকারে নিয়ে যাওয়া যাবে না। প্লে অফ মানে ফাইনাল। একটা ম্যাচেই সেমিফাইনালে ওঠার ফয়সলা। সেটা মাথায় রাখতে হবে।
ওড়িশা কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ফুটবল খেলে। আমাদের রক্ষণ ভাল খেলছে। চাপের মুখে কেরল ব্লাস্টার্স ও ডার্বি আমরা জিতেছি। গোলও আসছে। গোল না পেলেও নিজের খেলায় আমি খুশি। কারণ কোচ আমাকে দিয়ে যেটা করাতে চাইছেন, সেটা হচ্ছে। মানে আমাকে প্রতিপক্ষের দুই বা তিন জন মার্কিং করতে যাচ্ছে। ফলে অন্যরা অনেক জায়গা পেয়ে যাচ্ছে। গোলের মুখ খুলতে পারছে। ডার্বিতে যেটা হয়েছে। দেখা যাক, এবার কোচ কী দায়িত্ব দেন। তবে জেতার ব্যাপারে আমি একশোভাগ আশাবাদী।
প্রীতম কোটাল: শনিবারের ম্যাচটা কিন্তু লিগ ম্যাচ নয়। নক আউট। একটা ম্যাচ হারলে সব শেষ। ফলে ডার্বির চেয়ে দশ শতাংশ হলেও বেশি দিতে হবে আমাদের। অধিনায়ক হিসেবে ড্রেসিং রুমে এটা বারবার সবাইকে বলেছি। ডার্বি এখন অতীত। আমরা লিগ চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি, আমাদের কিছু ভুলে। কিন্তু এবার শিল্ড জেতার সুযোগ এসেছে। সেটা কাজে লাগাতে হবে। নব্বই মিনিটেই ম্যাচ শেষ করতে চাই। ডার্বিতে যে ফোকাস নিয়ে সবাই নেমেছিলাম, সেই মনোভাব নিয়েই নামতে হবে। নক আউটে সামান্য একটা ভুলেই অঘটন ঘটে যায়। তাই সতর্ক থাকতেহবে। শেষ দুটো ম্যাচে আমরা কোচের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলেছি। পুরো দলই খেলেছে। সব থেকে বড় কথা সঠিক সময়ে আমরা চোট আঘাত মুক্ত হয়ে পুরো দল পেয়েছি।
কোনও দলের সঙ্গে তুলনায় যেতে চাই না। তবে ওড়িশা যথেষ্ট শক্তিশালী দল। ডান দিক থেকে ওরা আক্রমণ তোলে। বক্সের আশেপাশে স্ট্রাইকার মোরিসিও কিন্তু ভয়ংকর। চকিতে টার্ন করে গোলে মারে। এভাবেই অনেক গোল পেয়েছে ওড়িশা। ওকে কিছুতেই বক্সের আশপাশে ঘুরতে দেওয়া যাবে না। এখন সেমিফাইনাল বা ফাইনাল নিয়ে ভাবছি না। ওড়িশাকে হারানোর পর সেমিফাইনাল নিয়ে ভাবব। ম্যাচ ধরে ধরে এগোলে সাফল্য বেশি আসে।