বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, কান্নুর: আরব সাগরের পাড়ের দক্ষিণ ভারতের দুই রাজ্য কেরল (Kerala) ও তামিলনাড়ু (Tamilnadu) ছাড়া গোটা দেশেই পার্টির হাল বেহাল। কেরলে যখন বামপন্থার প্রতি ঝোঁক বাড়ছে, তখন অন্য রাজ্যে পার্টির অবস্থা শোচনীয়। প্রতিবছর পার্টি ও গণসংগঠনের সদস্যসংখ্যা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে বলে খসড়া রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক দলিলে স্বীকার করে নিল সিপিএম (CPM)। এছাড়াও এই খসড়া প্রতিবেদনে বেশ কিছু রাজ্যে দলীয় সংগঠনের আর্থিক দিকটি নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়েছে। দলীয় সদস্যদের বিরুদ্ধে অর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য প্রকাশ কারাত আলোচনার জন্য সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন। বাংলা ছিল সিপিএমের শক্ত জমি। সেই জমিতে ফাটল ধরান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ১২ বছরে সংগঠন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। লোকসভার পর বিধানসভাতেও শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে বামেদের। এদিন প্রকাশ কারাত যে দলিল পেশ করেন তার ৭৮ নম্বর পাতায় রাজ্যওয়ারি সদস্য সংখ্যার হিসাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ৭৯ থেকে ৮৪ পাতা পর্যন্ত রয়েছে কোনও সংগঠনের সদস্য সংখ্যার হিসাব। সেখানে চোখ রাখলেই ধরা পড়বে সিপিএমের বেহাল চিত্র।
[আরও পড়ুন: ভারতবিরোধী হামলার চক্রান্তকারী! এবার হাফিজ সইদের ছেলেকে ‘সন্ত্রাসবাদী’র তকমা কেন্দ্রের]
১৭ সালে বাংলায় পার্টি সদস্য ছিলেন ২ লক্ষ ৮ হাজার। পাঁচ বছরে সদস্য কমেছে ৬৮ হাজার। চার বছর আগেও ত্রিপুরায় ক্ষমতায় থাকা সিপিএমের সংগঠন দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়েছে। ছোট রাজ্য ত্রিপুরায় সদস্য কমেছে ৪৭ হাজারের বেশি। আর হিন্দিবলয়ে পরিস্থিতির কোনও উন্নতি তো দূরঅস্ত, পার্টি সংগঠন যত দিন যাচ্ছে ততই দুর্বল হচ্ছে। তবে ভরসা দিচ্ছে কেরল। সেখানে সদস্য সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৭৫ হাজার। সামান্য হলেও সদস্য বেড়েছে তামিলনাড়ুতে। এখানেই শেষ নয়। পার্টিতে প্রতিদিন নিষ্ক্রিয় সদস্য সংখ্যা বাড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে খসড়া প্রতিবেদনে। বাংলায় ৩৫ শতাংশ ও ত্রিপুরায় ৪২ শতাংশ কর্মী নিষ্ক্রিয় বলে প্রতিবেদনের ৪৩ নম্বর পাতায় উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এবার সংগঠনের সব থেকে উল্লেখযোগ্য বিষয়, বয়সসীমা বেঁধে দেওয়া। কমিটিতে থাকা বয়সসীমা বেঁধে দেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্রীয় কমিটি। এবার গঠনতন্ত্রে তা অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে বলে ৪৫ পাতায় উল্লেখ করা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: হ্যাকারের কারসাজিতে টুইটারে যোগীর মুখের বদলে বাঁদরের মুখ! শোরগোল নেট দুনিয়ায়]
এইসঙ্গে কারাতের পেশ করা সাংগঠনিক প্রতিবেদন একটি অংশে কোনও কোনও দলীয় সদস্যদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। উঠেছে আর্থিক নয়-ছয়ের প্রসঙ্গ। বলা হয়েছে, সাম্প্রতিককালে বেশ কিছু রাজ্যে সংগঠনের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় গড়মিল দেখা গিয়েছে। দলীয় সংবাদপত্র ও গণসংগঠনগুলির অর্থায়ন নিয়ে এই অভিযোগ উঠেছে। দলীয় প্রতিবেদনের যে দুই পাতায় এই প্রসঙ্গ তোলা হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে, অর্থ ও হিসাব রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দায়ী ক্যাডাররাই। তাঁরা অর্থের অপব্যবহার করেছেন। কেউ কেউ এর জন্য দোষী সাব্যস্তও হয়েছেন। সব মিলিয়ে ক্রমশ সংগঠনের দুর্বলতা প্রকাশ্যে আসছে বলেই মনে করা হচ্ছে।