স্টাফ রিপোর্টার: দুদেশে দুই বাড়ি। তাই সংসারও দুই। তাই সঙ্গে থাকে দু’দেশেরই পরিচয়পত্র। আর থাকে দু’টি মোবাইল আর দু’দেশের চার সিমকার্ড। আসলে লোকটি বাংলাদেশি, না কি ভারতীয়, তা নিয়েই ধন্দে গোয়েন্দারা। তার কাছে চোরাপথে সীমান্ত পেরিয়ে ভারত আর বাংলাদেশে যাতায়াত এ বাড়ি আর ও বাড়ি যাওয়া-আসার মতো। তার একটি বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার বাগদায়। আর অন্য বাড়ি বাংলাদেশের খুলনা ডিভিশনের জেনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার মাটিলা গ্রামে।
পাচারচক্রের মাথাদের কাছ থেকে সংকেত পেলেই কখনও ভারতীয় সিমকার্ড আবার কখনও বাংলাদেশি সিমকার্ড মোবাইলে ভরে চলে যায় সীমান্তে। এজেন্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করে ফেলে কোটি কোটি টাকার সোনা পাচারের পদ্ধতি। দশ কোটি টাকার সোনা পাচারের সূত্র ধরে এবার সীমান্তে সোনা পাচারের সেই ‘কি পার্সন’-এর নাম সামনে এসেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের। উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার বাসিন্দা আলম হোসেন মণ্ডল নামে সোনা পাচার চক্রের ওই মাস্টারমাইন্ডের সন্ধানে বাগদায় তার বাড়িতেও গোয়েন্দারা হানা দেন। তার সন্ধান না পেয়ে বাড়ির দরজায় নোটিস সাঁটিয়ে দপ্তরে তলব করেন। তার সন্ধানে এবার বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছেন শুল্ক দপ্তরের গোয়েন্দারা।
[আরও পড়ুন: বড় পদে কাজের ‘টোপ’ দিয়ে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার! দুবাইয়ে আটকে বাংলার ১৫ যুবক]
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মাসে মহম্মদ আজাহার নামে এক সোনা পাচারকারীকে ধরে ফেলে বিএসএফ। রানাঘাটের সীমান্তবর্তী এলাকার রাস্তা দিয়ে বাইকে করে যাচ্ছিল সে। সন্দেহের বশে তাকে বিএসএফের গোয়েন্দারা ধরে জেরা করতে থাকেন। তল্লাশির পর তার কোমরে বাঁধা ১৭টি সোনার ইট উদ্ধার হয়। ১৬ কিলো ৭০০ গ্রাম ওজনের ওই সোনার দাম সওয়া দশ কোটি টাকা। জেরার মুখে আজাহার দাবি করে যে, সে ফুলচাষ করে। তাকে এই সোনা দেয় বাংলাদেশের মাটিলার আলম হোসেন মণ্ডল। আলমের নির্দেশে অন্য এক পাচারকারীকে ওই সোনা পাচারের ছক ছিল আজাহারের। এই সোনা পাচারের তদন্ত করতে গিয়েই গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, আলমের সঙ্গে আজাহারের বেশ কয়েকবার মোবাইলে কথা হয়েছে। আলমের মোবাইলের সূত্র ধরে তদন্ত করে জানা যায় যে, চারটি সিমকার্ড রয়েছে আলমের।
এর মধ্যে দু’টি সিম কার্ড বাংলাদেশের, বাকি দু’টি ভারতীয় ও উত্তর ২৪ পরগনা থেকেই নেওয়া। এর পর তদন্তের প্রয়োজনে আজাহারের বাড়ির ঠিকানা যাচাই করতে গিয়ে বাগদায় যায় গোয়েন্দাদের একটি টিম। আজাহারের পরিবারের লোকেদের গোয়েন্দারা জেরা করেন। তখনই গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, আলমের একটি বাড়ি রয়েছে বাগদার রাজকোল এলাকায়। বাগদা-সহ উত্তর ২৪ পরগনার সোনা পাচার চক্রের মাস্টারমাইন্ড আলম। রাজকোল আর বাংলাদেশের মাটিলা, এই দু’জায়গায় বাড়ি থাকার দরুন রয়েছে তার দু’টি পরিবারও। সোনা পাচারের জন্য বিএসএফের চোখ এড়িয়ে চোরাপথে কখনও পালায় বাংলাদেশের বাড়িতে, আবার বেগতিক বুঝলেই পালিয়ে আসে বাগদায়। সম্প্রতি গোয়েন্দারা আলমের বাগদার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েও সেখানে তার সন্ধান পাননি। আলমের সন্ধান পেলে সীমান্তে সোনা পাচার চক্রের অন্য মাথাদেরও খোঁজ মিলবে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।