রমেন দাস ও সঞ্জিৎ ঘোষ: যাদবপুরের মেইন হস্টেলে ছাত্রের রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় হয়েছে দেশ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University) ছাত্রের মৃত্যুতে উঠেছে খুনের অভিযোগও। শিক্ষাঙ্গনে ব়্যাগিং নিয়ে তীব্র হয়েছে সমালোচনা। এবার সেই র্যাগিং অভিযোগেই সরব হলেন নদিয়ার মৃত ছাত্রের মা। তাঁর অভিযোগ, ”আমাকেও যেভাবে মৌখিক হেনস্তা করা হয়েছে, তা-ও তো ব়্যাগিংয়ের মতোই তাই না!”
ঠিক কী ঘটেছে আসলে? গত ৪ সেপ্টেম্বর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন ওই ছাত্রের বাবা-মা। নবান্নে সেই সাক্ষাতের পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) একটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দেন ওই ছাত্রের মাকে। এর সঙ্গেই ছাত্রের ভাইয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব নেয় সরকার। ওই ছাত্রের নামে নদিয়ার বগুলা গ্রামীণ হাসপাতালের (Bagula Gramin Hospital) নাম বদলের কথাও জানানো হয়।
[আরও পড়ুন: যাদবপুর ছাত্রমৃত্যু: কেন হাসপাতালের নাম ‘স্বপ্নদীপ’? মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বগুলায় তুমুল বিক্ষোভ]
এদিন ওই হাসপাতালের নতুন নাম প্রকাশের কথা ছিল। সেইমতো সাজানো হয়েছিল নদিয়ার বগুলা গ্রামীণ হাসপাতালকে। সেখানে কাজে যোগ দিতে যান ওই ছাত্রের মা। অভিযোগ, সমস্ত আধিকারিকদের সামনেই হেনস্তার শিকার হন তিনি। ছেলের মৃত্যুর পরে টাকার জন্য চাকরি করছেন, এমন টিপ্পনীও নাকি শুনতে হয় যাদবপুরে মৃত ছাত্রের মাকে।
[আরও পড়ুন: ‘সেদিন ম্যাম ডেকে নিয়ে গেল…’ ভয়ংকর ঘটনার কথা জানান কসবায় মৃত ছাত্রের সহপাঠী]
প্রসঙ্গত, বুধবার বগুলা হাসপাতালের নাম পরিবর্তনের বিরোধিতায় নামেন স্থানীয়দের একাংশ। অভিযোগ, এরপর বৃহস্পতিবার সকালে ছাত্রের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে তাঁর মা কাজে যোগ দিতে ওই হাসপাতালে পৌঁছন। সেখানেই তাঁদের উদ্দেশে কুরুচিকর মন্তব্য করা হয় বলে দাবি! যে ঘটনার পর ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই ছাত্রের মা। তড়িঘড়ি বাড়িতে ফেরেন তিনি।
নতুন কাজে যোগ দিতে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি ওই আশাকর্মীকে হতে হবে, এমন ঘুণাক্ষরেও টের পাননি তিনি। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-কে রানাঘাটের আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ওই ছাত্রের বাবা জানান, ”আমরা ব্যথিত। সন্তান হারিয়ে আমাদের মানসিক অবস্থা ঠিক কেমন রয়েছে বুঝতে পারছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবের পর আমরা ওই হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে যা হল, তা আমাদের বেদনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আমার স্ত্রী আরও ভেঙে পড়েছেন।”
ওই ছাত্রের মা সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-কে জানান, ”আমার ছেলেটাকে ব়্যাগিং করে মেরেছে। আমি সন্তান হারিয়ে নিঃস্ব! কিন্তু আমার সঙ্গেও যা হল, এটাও ব়্যাগিং বা হেনস্তা ছাড়া আর কী!” নতুন কাজে যোগ দেবেন আবার? ওই ছাত্রের মায়ের জবাব, ”জানি না! যে অবস্থার মুখোমুখি হয়েছি আমি তা বেদনার! আমাকে কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিক্রিত মা! আমার ছেলের নামে হাসপাতালের বিরোধিতা করা হয়েছে। আমার সামনেই হাসপাতালের ফলক থেকে ছেলের নাম মুছে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। আমি আরও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছি। যাঁরা একাজ করলেন, তাঁদের শাস্তি হবে তো?” যদিও হাসপাতাল সূত্রের দাবি, ওই ছাত্রের মায়ের সামনে খুব সামান্য সময়ের জন্য অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়, এরপরই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারপরেই বেরিয়ে যান হাসপাতাল থেকে। তিনি আর কাজে যোগ দেবেন কিনা, এবিষয়েও নিশ্চিত কিছু জানায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
স্বপ্ন শেষের পর ইতিমধ্যেই ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার মধ্যে যাদবপুরের (Jadavpur) প্রাক্তন ছাত্ররাও রয়েছেন। এই ঘটনায় আর কেউ যুক্ত কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তদন্তে যেন কোনও গাফিলতি না থাকে, সম্প্রতি এবিষয়ে ফের কড়া নির্দেশও দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।