স্টাফ রিপোর্টার: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University) মেন হস্টেলে প্রথম বর্ষের পড়ুয়া মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল কিছুদিন আগেই। তার রেশ এখনও কাটেনি পুরোপুরি। এরই মধ্যে ফের দুটি র্যাগিং-এর অভিযোগ জমা পড়ল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর ঘটনা দুটিকে কেন্দ্র করে নতুন করে বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে। কেন্দ্রবিন্দুতে অন্তর্বর্তী উপাচার্য তথা অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির চেয়ারম্যানকে পাঠানো অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াডের চেয়ারম্যানের একটি চিঠি। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, ঘটনা দুটির তদন্তে জরুরিভিত্তিতে অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াডের বৈঠক ডাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, প্রশাসনিক টালবাহানায় তা সম্ভব হয়নি। এবং সেই কারণেই স্কোয়াডের চেয়ারম্যান পদে থাকায় অনিচ্ছা প্রকাশ করে সোমবার অন্তর্বর্তী উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছেন স্কোয়াডের চেয়ারম্যান ফার্মাসিউটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অধ্যাপক সন্ময় কর্মকার।
প্রথম বর্ষের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার পর নতুন করে গঠন করা হয় অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াডের। স্কোয়াডকে আরও বেশি সক্রিয় করে তোলার লক্ষে সদস্য সংখ্যা ১৮ থেকে বাড়িয়ে ৫৫ জন করা হয়। যদিও স্কোয়াডের গঠন নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। অভিজ্ঞ মহল জানিয়েছিল, সব বিভাগের প্রতিনিধি নেই স্কোয়াডে। এমনকী, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক স্কোয়াডের তিনজন সদস্যকে ফোন করে পাননি এমন অভিযোগও উঠেছিল। এই পরিস্থিতিতে স্কোয়াডের চেয়ারম্যানের চিঠিতে ফের বিতর্ক দেখা দিয়েছে। চিঠিতে সন্ময় কর্মকার জানিয়েছেন, গত ১৩ অক্টোবর তিনি অভিযোগ দুটি পান। তার পরেই তিনি জরুরিভিত্তিতে শনিবার বা মঙ্গলবার স্কোয়াডের বৈঠক ডাকার জন্য উদ্যোগী হন। কিন্তু, তাঁর দিক থেকে বহু চেষ্টা সত্ত্বেও সেই বৈঠক ডাকা সম্ভব হয়নি। এবং সেই কারণেই তিনি স্কোয়াডের চেয়ারম্যান পদে থাকতে ইচ্ছুক নন বলে জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী উপাচার্যকে অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াডের দুটি সাব-কমিটি গঠন করে অভিযোগ দুটির তদন্ত শুরু করার প্রস্তাব দিয়েছেন স্কোয়াডের চেয়ারম্যান। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার ক্যাম্পাসে র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। একটি মেন ক্যাম্পাসে ও একটি সল্টলেক ক্যাম্পাসে। মেন ক্যাম্পাসের অভিযোগটি অর্থনীতি বিভাগের এক ছাত্রের তরফে করা হয়েছে। তবে, অভিযোগ এমাসে জমা পড়লেও, ঘটনাগুলি আগেকার বলেও জানা গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউয়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
[আরও পড়ুন: বিধাননগরে বেআইনি বহুতল ভাঙতে বিক্ষোভের মুখে পুরসভা, ১৬টি পরিবারকে ডেকে পাঠাল হাই কোর্ট]
তবে, আগেকার হোক বা সম্প্রতিক। র্যাগিংয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরুতে টালবাহানার এই নিদর্শনে সংশ্লিষ্ট মহলের একটাই মত, যাদবপুর যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই রয়েছে। যাদবপুরের অধ্যাপক সংগঠন জুটার সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “১০ আগস্টের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় এতদিন পরেও কর্তৃপক্ষ দোষীদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে ইচ্ছে করে টালবাহানা করেই চলেছে। আর এই ঘটনা থেকে কর্তৃপক্ষ যে কোনও শিক্ষাই নেয়নি, এই ঘটনা আরও একবার তা প্রমাণ করে দিল।” প্রসঙ্গত, প্রথম বর্ষের পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিয়ে সোমবারই অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির বৈঠক হয়। যে রিপোর্ট অন্তর্বর্তী উপাচার্যের কাছে জমা পড়েছিল ৪ সেপ্টেম্বর। রিপোর্টের ভিত্তিতে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে কর্মসমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রিপোর্টটি পাঠানো হয় অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াডে। সেখানে রিপোর্টটি পর্যালোচনা করে শাস্তির ক্ষেত্রে কয়েকটি সুপারিশ করে পাঠানো হয়েছিল অ্যান্টি র্যাগিং কমিটিতে। এদিন প্রথমবার সেটা নিয়ে বৈঠকে বসল কমিটি।