দীপঙ্কর মণ্ডল: ২৪ ডিসেম্বর ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান করা যায় কিনা তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে (Jadavpur University)। আলোচনার পর সেখানকার সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত নিয়ামক এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, করোনা আবহে এবার সমাবর্তন হবে না। প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর বাড়িতে ডাকযোগে শংসাপত্র পাঠানো হবে। গতবছর আচার্য তথা রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় (Jagdeep Dhankhar) যাদবপুরের কর্মী ও পড়ুয়াদের একটি ক্ষুদ্র অংশের বাধায় সমাবর্তন মঞ্চে উঠতে পারেননি। ভারচুয়াল অনুষ্ঠান করলে এবারও রাজ্যপালকে ডাকতেই হত। শিক্ষামহল মনে করছে, বিতর্ক এড়াতেই এবার ভারচুয়াল অনুষ্ঠানও করছে না কর্তৃপক্ষ।
যাদবপুরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, চলতি বছরে পাস করেছেন এমন প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীকে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে বকেয়া ফি অনলাইনে মিটিয়ে দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ই-মেলের মাধ্যমে নিজেদের নাম, বিভাগ, ই-মেল আইডি, মোবাইল নম্বর এবং বাড়ির ঠিকানা জানাতে হবে। নির্দিষ্ট সেই ঠিকানাতেই শংসাপত্রের হার্ডকপি পাঠিয়ে দেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সমাবর্তনের বিশেষ পোশাক, খাবারের প্যাকেট ও শংসাপত্রের জন্য সমাবর্তনের আগে নির্দিষ্ট ফি নেওয়া হয়। স্নাতক-স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি উত্তীর্ণ সেই ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে এবার কোনও ফি নেওয়া হয়নি। করোনার কারণে টানা ১০ মাস বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন-পাঠন। খড়গপুর, বম্বে ও মাদ্রাজ আইআইটিতে ভারচুয়াল সমাবর্তন হয়েছে। দেশের অন্য বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়েও হয়েছে ভারচুয়াল সমাবর্তন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সেই অনুষ্ঠানগুলিতে বক্তব্য রাখতে দেখা গিয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরা মনে করছিলেন যাদবপুরেও এবার তেমনটাই হবে। কলা বিভাগের এক অধ্যাপক জানিয়েছেন, ‘ধনকড় কাঁটা’ এড়াতে ভারচুয়াল পথও এড়াল এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল।
[আরও পড়ুন: রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্ত ৫ লক্ষ ২৬ হাজার, কলকাতায় একদিনে সংক্রমিত পাঁচশোরও বেশি]
সাংবিধানিক কাঠামো অনুযায়ী রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য পদে রয়েছেন রাজ্যপাল। এ রাজ্যের ক্ষেত্রে শাসকদল তৃণমূল যাকে বিজেপি অনুগত বলে মনে করে। আচার্যর উপস্থিতিতেই সমাবর্তন করা দস্তুর। এ রাজ্যের রাজ্যপাল তথা আচার্য জগদীপ ধনকড় গতবছর কলকাতা এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে গিয়ে বাধার মুখে ফিরে আসতে বাধ্য হন। তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়। পরিবর্তিত অতিমারির পরিস্থিতিতে ভারচুয়াল সমাবর্তনে যাদবপুর তাঁকে ডাকবে কিনা তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। গতবছরের বিতর্কের পর এবার আর ঝুঁকি নিতে চায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একুশে বিধানসভা নির্বাচন। ইতিমধ্যেই তৃণমূল ও গেরুয়া শিবিরের রাজনৈতিক লড়াইয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে বঙ্গে। এই আবহে ভারচুয়াল সমাবর্তনে রাজ্যপালকে রাখলে তা নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে যাদবপুর ক্যাম্পাস। পড়ুয়াদের অনুমান, তা এড়াতেই ভারচুয়াল সমাবর্তন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত।