দিপালী সেন: ওয়াশিংটন অ্যাকর্ডের স্থায়ী স্বাক্ষরকারী এ দেশের ন্যাশনাল বোর্ড অফ অ্যাক্রিডিটেশন (NBA)। সেই সুবাদে NBA স্বীকৃত ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তিগত কোর্স মান্যতা পায় বিশ্বজুড়ে। অনেক সময় বিদেশে চাকরি পাওয়ার প্রধান শর্তই থাকে NBA শংসাপত্র। তা সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত ভারতের বহু প্রতিষ্ঠান নিজেদের ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সগুলির জন্য এই স্বীকৃতি পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেনি। বহুদিন ধরে সেই তালিকাতেই ছিল কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।
তবে এমন চিত্র বদলাতে চলেছে শীঘ্রই। কারণ, প্রথমবার NBA স্বীকৃতি পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনস্ট্রুমেন্টেশন অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং ও তথ্যপ্রযুক্তিতে স্নাতকস্তরের কোর্সের (বিটেক) জন্য স্বীকৃতি পেতে আবেদন জানানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে। জানা গিয়েছে, এই সপ্তাহেই কোর্সগুলির মূল্যায়নে পরিদর্শনে আসবে NBA-র প্রতিনিধিদল।
সব প্রযুক্তিগত প্রতিষ্ঠানের ৬০ শতাংশ কোর্সের NBA স্বীকৃতি থাকা বাধ্যতামূলক করেছে অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশনও (এআইসিটিই)। কিন্তু, যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তি শাখার ১৬টি স্নাতক স্তরের কোর্সের একটিরও নেই NBA স্বীকৃতি। সেই পরিস্থিতিতে তিনটি কোর্সের জন্য এনবিএ স্বীকৃতি পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা নিঃসন্দেহে একটি বড় পদক্ষেপ।
[আরও পড়ুন: হাওড়া স্টেশনে ফের নোটের পাহাড়! নগদ প্রায় ৩৩ লক্ষ টাকা-সহ রেল আরপিএফের জালে ২]
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আজকালকার দিনে ইঞ্জিনিয়ারিং বা টেকনিক্যাল কোর্সের জন্য NBA স্বীকৃতি ভীষণভাবে দরকার। বিদেশে চাকরির ক্ষেত্রে অনেক সময়ই কোর্সটি NBA স্বীকৃত কি না জানতে চাওয়া হয়। এআইসিটিই নিয়মেও NBA স্বীকৃতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তিনটি স্নাতক কোর্সের জন্য এই স্বীকৃতি পেতে এবছরই প্রথম পদক্ষেপ করেছে। এই পদক্ষেপকে স্বাগত। আমাদের আশা, এটার সাফল্য দেখে অন্যান্য বিভাগও তাদের কোর্সগুলির NBA স্বীকৃতির জন্য এগিয়ে আসবে, উৎসাহ পাবে।’’
ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তিগত কোর্সের ক্ষেত্রে NBA স্বীকৃতির গুরুত্ব আরও ভালভাবে বোঝা যায় বিগত কয়েক বছরে কুয়েতে কর্মরত ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারদের পরিস্থিতি দেখে। সেখানে শুধুমাত্র NBA স্বীকৃত কোর্সগুলিকে মান্যতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে, সেখানে কর্মরত অনেক ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি হারানোর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অনেকে চাকরি হারিয়েছেনও।
অভিজ্ঞ মহল জানিয়েছে, কুয়েতে কর্মরত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীরাও এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে কোর্সগুলির NBA স্বীকৃত করানোর আবেদন জানিয়েছেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, স্বীকৃতির জন্য আবেদনকারী তিনটি কোর্সের মূল্যায়নে আগামী ২৪, ২৫ ও ২৬ মার্চ পরিদর্শনে আসবে NBA-র প্রতিনিধিদল। তার আগে সল্টলেক ক্যাম্পাসে অবস্থিত সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলির পরিকাঠামো তো বটেই, প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়েছে প্রধান ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনেরও।
পাশাপাশি, NBA পরিদর্শনের জন্য বিভাগগুলি কতটা প্রস্তুত, সম্প্রতি ‘পরিদর্শনের মহড়া’র মাধ্যমে তা খতিয়ে দেখে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চিরঞ্জীববাবু বলেন, ‘‘NBA পরিদর্শনে যান, সেই রকম অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের দিয়ে মক ভিজিট করানো হয়েছে। এর মাধ্যমে NBA পরিদর্শনের জন্য আমরা কতটা প্রস্তুত, তা বোঝা গিয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, বর্তমানে রাজ্যের চারটি প্রতিষ্ঠানের ১৬টি ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তিগত স্নাতক কোর্সের টায়ার-ওয়ান NBA স্বীকৃতি রয়েছে। স্নাতকের টায়ার-টু স্বীকৃতি রয়েছে ২৯টি প্রতিষ্ঠানের ১৭৮টি কোর্সের। মানের মাপকাঠি পূরণে তিনটি কোর্সের জন্য এনবিএ স্বীকৃতি পেলে এই তালিকায় সংযোজন হবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নামও। যা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যাদবপুরের মান আরও বাড়িয়ে তুলবে বলেই মত অভিজ্ঞ মহলের। বাড়বে স্বীকৃতি পাওয়া কোর্সগুলির মানও।