অর্ণব আইচ: গাঁজার দম না দিলে নাকি মাথায় চিন্তাভাবনা খেলত না তাদের! কিন্তু প্রত্যেকদিন গোপন ঠেকে গিয়ে গাঁজা কেনাও অনেক সময় দুষ্কর হয়ে যেত যাদবপুরের মেন হস্টেলের ছাত্রদের পক্ষে। তাই হস্টেলের বারান্দায় টবেই চলত গাঁজার চাষ। যদিও বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রের মৃত্যুর পর সেই টবগুলি সরিয়ে দেওয়া হয়। তবু এক ছাত্রের মোবাইল থেকে মুছে ফেলা তথ্য উদ্ধার করতে গিয়েই মিলেছে টবে গাঁজা চাষের ছবি। সম্প্রতি ওই টব ও চাষ করা গাঁজার সন্ধানে পুরো হস্টেলজুড়ে তল্লাশি চালায় যাদবপুর থানার পুলিশ।
লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, ধৃত প্রাক্তনী ও সিনিয়ররা ‘জেইউএমএইচ’ নামে একটি গ্রুপ তৈরি করেছিল। তাতে বিভিন্ন ধরনের ছবি ও মেসেজের আদানপ্রদান হত। ওই নাবালক ছাত্রটি যাদবপুর মেন হস্টেলের তিনতলার বারান্দা থেকে লাফ দিয়ে পড়ার পর ওই গ্রুপে নিজেদের মধ্যে বহু মেসেজ ও ছবির আদানপ্রদান হয়। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে যখন হইচই শুরু হয়, তখন ‘জিবি’ বৈঠক করে সিনিয়র ও প্রাক্তনীরা নির্দেশ দেয়, ওই হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ থেকে সব তথ্য ও মেসেজ মুছে দিতে। সঙ্গে গ্রুপটিও তুলে দিয়ে বলা হয়। হস্টেলের বাসিন্দা এক ছাত্রের মোবাইল আটক করে তা ফরেনসিক পরীক্ষাগারে পাঠিয়ে এই গ্রুপ ও তার যাবতীয় মেসেজ উদ্ধার করতে শুরু করে পুলিশ। ওই মেসেজ উদ্ধার করতে গিয়েই পুলিশের হাতে আসে কয়েকটি ছবি। তাতেই দেখা যায়, টবে হচ্ছে গাঁজা চাষ। কিন্তু নাবালক ছেলেটির মৃত্যুর পরই সৌরভ চৌধুরী, সত্যব্রত রায়ের মতো প্রাক্তনী ও সিনিয়ররা নির্দেশ দেয়, ওই টবগুলি সরিয়ে ফেলে গাঁজা গাছগুলি নষ্ট করে ফেলতে। তাই হস্টেলের বারান্দা, ছাদ-সহ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়েও ওই গাঁজার গাছ বা টব উদ্ধার হয়নি। যদিও সেই গাছ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
[আরও পড়ুন: ‘ছাত্রমৃত্যুর বিচার হোক’, যাদবপুর কাণ্ডে সুবিচারের দাবিতে সরব জেলবন্দি মানিক]
পুলিশ জেনেছে, ঝিলের ধারে গাঁজা পয়েন্টে বসেই তারা গাঁজা ও মদ্যপান করত। নেশা করার পর গভীর রাতে অশালীন আচরণ করতে শুরু করত তারা। তাদের আচরণে অতিষ্ট হন পাশেই পুলিশ আবাসনের বাসিন্দারা। বুধবারও ওই আবাসনের বাসিন্দা কয়েকজন মহিলা জানান, তাঁরা কেউ জানালার সামনে দাঁড়ালেই আস্ফালন শুরু হয় তাদের। যদিও তাঁদের মতে, অনেক সময়ই তাঁরা দেখেছেন, একজন বা দু’জন ছাত্রকে চিৎকার করে গালিগালাজ বা অশ্লীল ছড়া বলতে। কয়েকবার তাঁরা দেখেছেন, ওই ছাত্রদের হাতে রয়েছে কাগজ। ওই মহিলা বাসিন্দাদের মতে, স্পষ্ট বোঝাই যায়, তারা ওই গালিগালাজ বা অশ্লীল ছড়া মুখস্থ বলছে। তাদের কেউ যে শিখিয়ে দিয়ে জোর করে এগুলি বলাচ্ছে, সেই ব্যাপারেও তাঁরা নিশ্চিত। একাধিকবার তাঁরা হস্টেল কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ করার পরও কোনও সুরাহা হয়নি বলে দাবি তাঁদের।
এদিকে, পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, ৯ আগস্ট রাতে র্যাগিংয়ের দ্বিতীয় দফায় নাবালক ছাত্রটিকে সিনিয়ররা একটি অশ্লীল ছড়া লিখে তার হাতে ধরিয়ে দেয়। হস্টেলের ৬১ নম্বর ঘরের জানালার সামনে দাঁড় করিয়ে পুলিশ আবাসনের দিকে মুখ করে তাকে ওই অশ্লীল ছড়াটি আবৃত্তি করতে বলা হয়। ছাত্রটি জোরে আবৃত্তি করতে না পারলে তার উপর নির্যাতনও করা হয়, এমন খবর এসেছে পুলিশের কাছে। এই একইভাবে হস্টেলের অন্তত ১৪ জন প্রথম বর্ষের ছাত্রকে র্যাগিং করা হয় বলে অভিযোগ। ওই সময় কতজন উপস্থিত ছিল, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।