ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বোলপুর: বঙ্গের ঊর্ধ্বমুখী করোনা (Coronavirus) গ্রাফের মধ্যেই জানানো হয়েছিল সংক্রমণের কথা ভেবে এই আবহে এবার বাতিল বীরভূমের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী জয়দেব কেন্দুলি মেলা। কিন্তু মঙ্গলবার বোলপুরের বিধায়ক জানালেন, কারও ধর্মীয় ভাবাবেগে যাতে আঘাত না লাগে, তার জন্য অল্প পরিসরে মকর সংক্রান্তিতে মেলার আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা জানান, যাতে কারও রুজিরুটিতে টান না পড়ে, তার জন্যই মূলত সিদ্ধান্ত বদল করা হয়েছে। তাছাড়া সংক্রমণের মাঝেও ধর্মীয় ভাবাবেগকেও আঘাত করা চলে না। তাই ছোট করেই মেলা হবে। মন্দির সংলগ্ন এলাকায় অল্প কিছু দোকান বসবে। অন্যান্যবার পুণ্যার্থী, সাধু-সন্তদের ৫০-৬০টি আখড়া থাকে। এবার ভিড় এড়াতে থাকবে মাত্র দুটি। তাছাড়া পুণ্যার্থীদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্য পুলিশ সদা তৎপর থাকবে। প্রত্যেকে কোভিডবিধি পালন করছেন কি না, সেদিকেও বিশেষ নজর রাখা হবে। থাকবে মকর সংক্রান্তির ভোরে অজয় নদে পুণ্যস্নান। এদের জন্য অজয় নদীর ধারে দুটি ঘাট তৈরি করা হচ্ছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে জয়দেব এবং স্থানীয় বাসিন্দারা এই দুটি ঘাটে স্নান করতে পারবেন। বাইরের পুণ্যার্থীদের স্নানের অনুমতি দেওয়া হবে না।
[আরও পড়ুন: Omicron: ওমিক্রনের দাপটে ধরাশায়ী আমেরিকা, দৈনিক সংক্রমণ ছুঁল ১১ লক্ষ! বিপর্যস্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা]
বীরভূমের ইলামবাজার ব্লকের জয়দেব পঞ্চায়েতে অজয় নদের পাড়ে জয়দেব কেন্দুলি গ্রামে বসে এই মেলা। এখানেই কবি জয়দেব জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বারো-তেরো শতকে রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি ছিলেন কবি জয়দেব। তিনি সংস্কৃতে “গীত গোবিন্দ” রচনা করেছিলেন। সে সময় মূলত তাঁর উদ্যোগেই জয়দেব-কেন্দুলি সংস্কৃতি কেন্দ্র হিসাবে গড়ে ওঠে। বিভিন্ন ধর্মের আলোচনার পাশাপাশি ধর্মপ্রচারের কেন্দ্র হিসাবে পরিচিতি পেয়েছিল জয়দেব-কেন্দুলি। তৈরি হয়েছিল একাধিক মঠ। পরে বর্ধমানের মহারানি ব্রজকিশোরীর উদ্যোগে ১৬৮৩ সালে জয়দেবে রাধবিনোদ মন্দির তৈরি করা হয়।
প্রতি বছর মকর সংক্রান্তিতে জয়দেব মেলা (Jaydev Kenduli Mela) বসে। নানা প্রান্তের কয়েক হাজার বাউল, ফকির এই মেলাতে ভিড় জমান। শতাব্দী প্রাচীন এই মেলার বৈশিষ্ট্য, এখানে শুধুমাত্র ধর্মপ্রচারের লক্ষ্যে নানা ধর্মের মানুষ আসেন। মেলার কয়েকদিন ধরে চলে ধর্ম প্রচার এবং আলোচনা। বাউল, কীর্তন এবং সুফি গানের আসরে ভিড় জমান দেশ, বিদেশ থেকে আসা হাজার হাজার মানুষ। বিভিন্ন আখড়াতে বিনামূল্যে মেলে দু’বেলা ভোগ। এবারও খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও পুরোটাই হবে কোভিডবিধি মেনে। উল্লেখ্য, শর্তসাপেক্ষে গঙ্গাসাগর মেলার অনুমতি দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। এবার অতিমারী আবহে হবে জয়দেবের মেলাও। তবে এতে সংক্রমণ আরও ছড়ানোর আশঙ্কাই করছেন বিশেষজ্ঞরা।