রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: “মানুষের সঙ্গে থাকতে হবে। লেগে থাকতে হবে। উপর থেকে কেউ এসে জিতিয়ে দেবে না।” মঙ্গলবার রাতে নিউটাউনের হোটেলে আড্ডার মেজাজে চলা রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এই বার্তা দিলেন জে পি নাড্ডা (JP Nadda)।। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে প্ল্যান করার কথাও বলেন তিনি। এদিনের বৈঠকে ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar)। সেই সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। এছাড়াও ছিলেন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পল, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক এবং অমিত মালব্য। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে সুকান্ত এবং দিলীপকে একসঙ্গে নিয়ে বৈঠককে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। জে পি নাড্ডার অফিস থেকেও পরিষ্কার নির্দেশ এসেছে সবসময় বিজেপি সভাপতির সঙ্গে থাকবেন দিলীপ ঘোষ।
অমিত শাহ যখন দু’দিনের বঙ্গ সফরে এসেছিলেন তখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে হেলিকপ্টারে ছিলেন সুকান্ত মজুমদার ও শুভেন্দু অধিকারী। নিউটাউনের হোটেলে দলের একেবারে কোর গ্রুপকে নিয়ে শাহর বৈঠকেও ব্রাত্য রাখা হয়েছিল দিলীপ ঘোষকে। দলীয় সূত্রে খবর, সুকান্ত-শুভেন্দু-অমিতাভ-মালব্যদের সেই চেষ্টা অবশ্য নাড্ডার সফরে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে কার্যত চাপে পড়েই তা মেনে নিতে বাধ্য হতে হয়েছে মালব্য-অমিতাভদের। খুশি দিলীপ শিবিরও।
[আরও পড়ুন: কাশ্মীরে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা! উদ্বেগ প্রকাশ করে শাহকে চিঠি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের]
‘সেন্সর’ এর চিঠি পাওয়ার পর অভিমানী দিলীপ (Dilip Ghosh) যদি বৈঠক বয়কট করেন তাহলে রাজ্য বিজেপি নেতাদের মুখ পোড়াই শুধু নয়, অস্বস্তিতে পড়বেন স্বয়ং নাড্ডাও। দলে বিদ্রোহ আরও বেড়ে যাতে পারে। কাজেই সেই বিতর্কের কোনও সুযোগ দিতে না চেয়ে রাজ্য কার্যকারিনী বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য দিলীপকে বার্তা দেন শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই বার্তার পরই মঙ্গলবার দুপুরেই সিকিম থেকে কলকাতায় চলে আসেন দিলীপ। মঙ্গলবার রাতে নাড্ডা কলকাতা বিমানবন্দরে নামলে তাঁকে স্বাগত জানান প্রাক্তন রাজ্য সভাপতিই। আজ কিংবা কাল নাড্ডার সঙ্গে কলকাতায় দিলীপ ঘোষের রুদ্ধদ্বার বৈঠক হতে পারে। ‘সেন্সর’ চিঠির পাল্টা জবাবে অভিমানী দিলীপ কি বলবেন বিজেপি সভাপতিকে, তা নিয়েও চর্চা চলছে গেরুয়া শিবিরে।
আজ সকালে চুঁচুড়ায় বঙ্কিমচন্দ্রের স্মৃতিবিজড়িত বন্দেমাতরম্ ভবনে যাবেন। তারপর চন্দননগরে রাসবিহারী বসু রিসার্চ ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করবেন। সেখান থেকে সোজা চলে আসার কথা ন্যাশনাল লাইব্রেরি অডিটোরিয়ামে দলের রাজ্য কার্যকারীনী বৈঠকে। কাল বৃহস্পতিবারও রয়েছে দফায় দফায় বৈঠক। বিভিন্ন জেলার রিপোর্টিং শুনবেন। বুথের হালহকিকতও জানবেন। সামনে পঞ্চায়েত ভোট। তারপর ২০২৪-এ লোকসভা নির্বাচন। মুষলপর্ব চলা বঙ্গ বিজেপিকে চাঙ্গা করতে কী দাওয়াই তিনি দেন, বিদ্রোহীদের উদ্দেশে কী বার্তা দেন, তা নিয়ে চর্চা চলছে গেরুয়া শিবিরের (BJP) অন্দরে। আবার বিধায়ক ও সাংসদদের দলে ধরে রাখতে কি বলবেন তিনি সেদিকেও নজর রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, সংগঠন কার্যত ভেঙে চুরমার হয়ে যাওয়া বঙ্গ বিজেপিকে চাঙ্গা করতে আদৌ কোনও জাদুমন্ত্র জানা আছে কী না বিজেপি সভাপতির?