রমেন দাস: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন হস্টেলে ছাত্রমৃত্যুর জেরে তোলপাড় হয় দেশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে নিরন্তর। কেন ছাত্রের মৃত্যুর পরেও হুঁশ ফেরেনি কর্তৃপক্ষের, প্রশ্ন তোলেন কেউ কেউ। ঠিক এই আবহেই এবার বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ। তাঁর দাবি, “মেইন হস্টেলে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র চলছে, পরিকল্পনা করেই বাধা দেওয়া হচ্ছে কাজে!” উপাচার্যের আরও দাবি, ”এই চক্রান্তের পিছনে রয়েছেন বড় কোনও মাথা। যে বা যাঁরা ছাত্রদের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছেন।”
অধ্যাপক বুদ্ধদেব সাউয়ের আরও অভিযোগ, “আমাকে শুধু নয়, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে (Jadavpur University) কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা চলছে। আমি বিশ্বাস করি না, এর পিছনে ছাত্রদের ইন্ধন রয়েছে। এর নেপথ্যে বড় কোনও মাথা রয়েছেন। যাঁদের পরিকল্পনায় এই পরিস্থিতি, এই অচলাবস্থা সৃষ্টি করা হচ্ছে। তাঁরা ব্যবহার করছেন ছাত্রদের।” ঠিক কোন দিকে ইঙ্গিত করছেন অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য (Vice Chancellor) ? তাঁর কথায়, ”বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বাড়ানোর বন্দোবস্তের জন্য যা যা প্রয়োজন, নিয়ম মেনে সেটাই করার চেষ্টা করছি। কিন্তু সেখানেই কারওর কারওর তরফে সিসিটিভি (CCTV JU) বসাতে দেব না বলা হচ্ছে! বারবার কোনও কাজ করতে গেলেই বাধা দেওয়া হচ্ছে। আমাকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলছে। আমাকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না অনেক ক্ষেত্রেই। কিছু করতে গেলেই রাজনৈতিক রং, ঘেরাও করে রাখা হচ্ছে।”
[আরও পড়ুন: মৃত্যুর আগে কোন নরক যন্ত্রণায় ছিলেন ছাত্র! বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টেই উঠে এল ভয়াবহ তথ্য]
সম্প্রতি, ছাত্রমৃত্যুর তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী কমিটির রিপোর্ট নিয়ে জলঘোলা হয়েছে। নদিয়ার বাসিন্দা প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় একাধিক তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। এখানেও উঠেছে অভিযোগ। অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিয়ে কেন পদক্ষেপ করছেন না উপাচার্য, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। যদিও অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্যের দাবি, ”ওই কমিটির রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা হবে। কীভাবে কী করা যায় ভাবা হচ্ছে। কিন্তু একটা নতুন অ্যান্টি ব়্যাগিং কমিটি বা স্কোয়াড তৈরি হয়েছে। তাঁরা কাজ করবেন। তবে কিছু করার আগেই আমাকে আটকে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে!” কেন? বুদ্ধদেব সাউ বলছেন, “হয়তো আমি অনেকের পছন্দের লোক নই তাই!” তাঁর আরও দাবি, ”এই সবের পিছনে বিরাট পরিকল্পনা আছে। ছাত্রমৃত্যুর (JU Student Death) ঘটনাকে পুঁজি করে ফায়দা তুলছেন কেউ কেউ। আমি রাজ্য সরকারকেও জানানোর কথা ভাবছি। সামগ্রিক ঘটনার জন্য উচ্চপর্যায়ের তদন্তও চাইছি।”
অধ্যাপকের দাবি, ছাত্রমৃত্যুর তদন্ত চললেও এর পরের ঘটনাক্রমের তদন্ত হওয়াও জরুরি। যাঁরা চক্রান্ত করছেন, অস্বাভাবিকতা আনতে, তাঁদের খোঁজা উচিত। উচ্চপর্যায়ের তদন্ত বলতে সিবিআই (CBI) চাইছেন উপাচার্য? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য বলছেন, “না। আমি সিবিআই চাইছি কি না বলব না! এই মুহূর্তে আমি শুধু চাইছি সম্পূর্ণ ঘটনার উচ্চপর্যায়ের তদন্ত হোক। এর পিছনে চক্রান্ত খুঁজে বের করা হোক। সেটা যদি আপনি সিবিআই ভাবেন, ভাবতে পারেন!”
[আরও পড়ুন: বুমরাহ-সিরাজের জন্য মাঠের বাইরে বসে থাকা কতটা কষ্টের? স্পষ্ট জানালেন ‘ম্যাচের সেরা’ শামি]
উল্লেখ্য, গত ১০ আগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন হস্টেলে (JU Main Hostel) মৃত্যু হয় বাংলা বিভাগের নবাগত এক ছাত্রের। তারপর ওঠে একাধিক প্রশ্ন। ছাত্রমৃত্যুতে ওঠে একের পর অভিযোগ। পুলিশি (Kolkata Police) তদন্তে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্যও। ঠিক এই পরিস্থিতিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব দেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্কের অধ্যাপক বুদ্ধদেব সাউকে।