সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিচারব্যবস্থার সঙ্গে কেন্দ্রের সংঘাতের আবহেই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করলেন আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু (Kiren Rijiju)। যার ফলাফল সুদূরপ্রসারী হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আইনমন্ত্রী কী বললেন? রিজিজু বললেন, ”রাজনীতিবিদ হিসাবে মানুষের কাছে সর্বক্ষণ পরীক্ষা দিতে হয় তাঁদের। অন্যদিকে, বিচারপতি হয়ে যাওয়ার পর মানুষের বিচারের ঊর্ধ্বে উঠে যান আইনজীবীরা।” এহেন মন্তব্যের পরে রিজিজুর প্রশ্ন, ”এতকাল ধরে যে নিয়ম চলে এসেছে, তার পরিবর্তন হবে না কেন?” অর্থাৎ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এক ব্যবস্থার পরিবর্তনের ডাক দিচ্ছেন কি আইনমন্ত্রী? প্রসঙ্গত, বিচারপতি নিয়োগে কেন্দ্র সরকারের হস্তক্ষেপের অধিকার নিয়ে একাধিকবার সরব হয়েছেন আইনমন্ত্রী।
সোমবার দিল্লি বার অ্যাসোসিয়েশনের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী। সেখানে বক্তৃতা দেওয়ার সময়ে তিনি বলেন, “মানুষ সর্বক্ষণ আমাদের দেখছে, নিজেদের মতো করে বিচার করছে। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে সারাক্ষণই আমাদের কাজকর্ম নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। নানাভাবে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রশ্নের মুখে ফেলে সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি এখন আর আগের মতো নেই, যেখানে শুধু নেতারাই কথা বলেন। নিজেদের মতামত প্রকাশ করার একাধিক উপায় রয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে।” তাঁর মতে, প্রত্যেকবার নির্বাচনে লড়াই করে ক্ষমতায় ফিরতে হয় রাজনীতিবিদদের।
[আরও পড়ুন: মোদিকে নিয়ে তৈরি বিতর্কিত তথ্যচিত্র দেখানো যাবে না ক্যাম্পাসে, কড়া ফতোয়া JNU কর্তৃপক্ষের]
কিন্তু বিচারপতিদের এইভাবে সারাক্ষণ জনতার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় না, দাবি রিজিজুর। তিনি বলেছেন, “বিচারকদের আচরণ নিয়ে জনসাধারণের কাছে পরীক্ষা দিতে হয় না। কারণ একবার তাঁরা যখন বিচারপতি হয়ে যান, তখন আর নির্বাচনে লড়তে হয় না তাঁদের।” তবে হুঁশিয়ারি দিয়ে রিজিজু বলেছেন, সরাসরি ভাবে না হলেও বিচারকদের রায়ের প্রতি নজর রাখছে সাধারণ মানুষ। প্রসঙ্গত, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিচারকদের আক্রমণ করার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা (NV Ramana)। সেই সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বলে এদিন দাবি করেন রিজিজু।
অন্যদিকে, কয়েকদিন আগেই প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখে তিনি দাবি করেছিলেন, কলেজিয়ামে (Collegium) নাম সুপারিশ করার অধিকার দেওয়া উচিত কেন্দ্র সরকারকে। তবে সোমবার এই বিষয়টি অস্বীকার করেন রিজিজু। সেই সঙ্গে বলেন, ১৯৪৭ সালের পর আইনের একাধিক পরিবর্তন করা হয়েছে। কারণ একই নিয়ম চিরকাল ধরে চলতে পারে না। একটা সময়ের পর তা বদলাতে হয়। সেই জন্যই সংবিধানেও একাধিক পরিবর্তন করা হয়েছে। মোদি সরকার কখনই বিচারব্যবস্থাকে অপমান করার পক্ষপাতী নয়।” কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর এহেন বক্তব্যের ফলে সাফ বার্তা, বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়ায় বড়সড় পরিবর্তন আনতে যথেষ্ট তৎপর সরকার।
অন্যদিকে, আইনব্যবস্থা নিয়ে রিজিজুর মন্তব্যের প্রতিবাদ করলেন রাজ্যসভা সাংসদ কপিল সিবল। তিনি বলেন, “মোদি সরকার যদি বিচার ব্যবস্থার অপমান না করে থাকে, তাহলে রিজিজু এতদিন যে মন্তব্য করে এসেছেন তার অর্থ কী? বিচারব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে চেয়েছিলেন?”