সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২৪ ঘণ্টার ডেডলাইন বেঁধে দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তবে অভিযোগ, সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরও রাজ্য সরকারের তরফে কোনও সদুত্তর আসেনি। এই পরিস্থিতিতে আমরণ অনশনে যাওয়ার ঘোষণা করলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তবে যে আর জি কর হাসপাতালকে কেন্দ্র করে এত কিছু, এই অনশনে সেই হাসপাতালের কোনও চিকিৎসক থাকছেন না বলে জানা যাচ্ছে।
নিজেদের দাবি পূরণের জন্য ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সেই ডেডলাইন পার হওয়ার পর এদিন সাংবাদিক বৈঠক করে চিকিৎসকরা জানান, "জয়নগরের ঘটনাই পরিষ্কার করে দিয়েছে কেউ কোথাও সুরক্ষিত নন। ডাক্তার, রোগীদের সুরক্ষার মতো দাবি নিয়ে আমরা এগিয়েছি। কিন্তু নিরাপত্তা এখনও অধরা। ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পর পেলাম শুধুই হুমকি। উৎসবে ফিরতে বলা হচ্ছে, তবে আমরা সেই মানসিককতায় নেই। আজ থেকেই আমরণ অনশনে বসছি আমরা। আমরা কাজে ফিরছি কিন্তু খাবার খাব না।" শুধু তাই নয়, চিকিৎসকদের তরফে জানানো হয়েছে, অনশনের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে অনশন মঞ্চে সিসিটিভি বসাবেন তাঁরা। যাতে সেখানে কী হচ্ছে, তা সবাই দেখতে পান।
চিকিৎসকদের বক্তব্য অনুযায়ী, প্রথম দফায় ৬ জন জুনিয়র ডাক্তার অনশনে বসবেন। তবে সেই তালিকায় আর জি কর হাসপাতালের কেউ নেই। দাবি পূরণ না হলে আমৃত্যু চলবে এই অনশন। জুনিয়র ডাক্তারদের স্পষ্ট বক্তব্য, এই মঞ্চে কারও কিছু হলে তার দায় থাকবে পুরোপুরি রাজ্য সরকারের। এছাড়া আর জি করের জুনিয়র ডাক্তারকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সিবিআই যে তদন্ত প্রক্রিয়া চালাচ্ছে, তাতে 'আস্থা নেই' বলে এদিন জানিয়ে দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সাংবাদিক বৈঠকে তাঁরা বলেন, ''সিবিআইয়ের তদন্তের উপর আমাদের আস্থা ছিল। কিন্তু এখন বলছি সম্পূর্ণ আস্থা নেই। আদালতে যে শুনানি হচ্ছে তাতে বোঝা যাচ্ছে না, তদন্ত ঠিক কোন পর্যায়ে রয়েছে।"
উল্লেখ্য, আর জি করের তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার গত ৯ আগস্ট। প্রায় দুমাস ধরে আন্দোলনে শামিল জুনিয়র ডাক্তাররা। একাধিক টালবাহানার পর মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা। ঘটনার ৪১ দিনের মাথায় প্রথম দফায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে আংশিকভাবে কাজে ফেরেন। ইতিমধ্যে গত মাসের শেষে ফের সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তাণ্ডবের ঘটনা ঘটে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে আর জি কর মামলার শুনানি হয়। সেই রাতেই জিবি মিটিং করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। সেখানে দ্বিতীয় দফায় কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। এর পর শুক্রবার এসএসকেএম থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল এবং ডোরিনা ক্রসিংয়ে ধরনায় বসেন। কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে কাজে ফিরেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তবে দাবি পুরণে রাজ্য সরকারকে ডেডলাইন বেঁধে দেওয়া হয়। শনিবার রাত সাড়ে আটটার মধ্যে স্বাস্থ্যসচিবের অপসারণ-সহ ১০ দফা দাবিপূরণ না হওয়ায় আমরণ অনশনে বসলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা।
অন্যদিকে, আর জি করের প্ল্যাটিনাম জুবিলি ভবনে শনিবার দুপুর থেকে বসেছিল কাউন্সিলের বৈঠক। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কর্তৃপক্ষ, ডাক্তার এবং ইন্টার্নদের প্রতিনিধিরাও। সেখানে দীর্ঘ বৈঠকের পর ১০ জন চিকিৎসককে বহিষ্কার করা হয়েছে। ওই ১০ জনের বিরুদ্ধে র্যাগিং-সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। আর জি কর হাসপাতালে ‘হুমকি সংস্কৃতি’-তে অভিযুক্ত ৫৯ জনের শাস্তির দাবি তুলেছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেওই এই পদক্ষেপ। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের হস্টেল ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।