shono
Advertisement

ভূত রয়েছে হাই কোর্টেও! ভূতুড়ে অভিজ্ঞতার গল্প শোনালেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়

সন্ধে নামলেই হাই কোর্ট পাড়া যেন নিশুতপুরী!
Posted: 02:06 PM Nov 01, 2022Updated: 04:30 PM Nov 01, 2022

রাহুল রায়: ভূতের গল্প মানেই চোখে ভাসে অশরীরী বিভিন্ন চেহারা। নিঝুম অন্ধকারে কোনও ফাঁকা জায়গা বা ভাঙাচোরা পোড়ো বাড়ির কথা মাথায় আসে। কিন্তু খাস কলকাতা, তাও যেখানে সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম, সেই কলকাতা হাই কোর্টের ভিতরেও যে রয়েছে এমন ‘ভূতের ঠিকানা’ ! তবে একথা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। কলকাতার আর পাঁচটি হেরিটেজের মতো হাই কোর্টের ভূতের গল্পও অনেকের জানা। আবার অনেকের সঙ্গেই হয় তো ঘটে গিয়েছে কত না নাটক। অনেক ঘটনার সাক্ষী এই প্রাসাদের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই। কেউ কম বেশি অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। এবার খোত বিচারপতির মুখেই কিনা ভূতের কাহিনী ! তাও কিনা বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ! যার দেওয়া রায় নিয়ে বিভিন্ন সময় সরগরম হয়েছে তাঁর এজলাস। কত শত জল্পনা ছড়িয়েছে হাই কোর্ট পাড়ায়। এবার সেই বিচারপতির মুখেই হাই কোর্টের অলিন্দের আলো-আঁধারির কাহিনী। এমনই সব গল্পগাছার সাক্ষী থাকল এজলাসে উপস্থিত বিচারপ্রার্থী থেকে আইনজীবী ও আদালত কর্মীরা।

Advertisement

কিন্তু, এপ্রসঙ্গ উঠে এল কীভাবে ?

এদিন, ২০১৪ সালের টেটপ্রার্থীদের মামলার শুনানির শেষে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Gangopadhyay) পর্ষদের আইনজীবীকে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট যে ২৬৯ জন টেটপ্রার্থীকে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, তাঁদের মামলাগুলি বিকেল চারটে থেকে সন্ধে সাতটা পর্যন্ত শোনা যেতে পারে। কারণ সোম থেকে শুক্র রোজই একটানা নানারকম মামলা থাকে। এর পরে যদি আরও ২৬৯ জনের মামলা আসে তাঁর কাছে, তবে তা নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা অসম্ভব। তাই বিকেলের পরেই চলুক মামলা। এই কথা শুনেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত একজন আইনজীবী বলে ওঠেন, সন্ধের পরে মামলা চলবে! হাই কোর্টের রাত মানেই তো ভয়ানক, অতৃপ্ত আত্মারা ঘুরে বেড়ায় আনাচকানাচে! অনেকে নাকি টেরও পেয়েছেন এমন সব ঘটনা! এর প্রেক্ষিতেই বিচারপতি বলেন, এ কথা অবশ্য পুরোপুরি মিথ্যা নয়। কারণ কলকাতা হাইকোর্টের ১১ নম্বর এজলাসের লাগোয়া যে প্যাঁচানো সিঁড়ি, সেখানে যে অশরীরি আত্মার আনাগোনা রয়েছে, এই গল্প বহুদিনের পুরনো। হাইকোর্টের সকলেই জানেন, অন্ধকার হলেই ওই সিঁড়ি ঘিরে গা ছমছমে এক পরিস্থিতি তৈরি হয়। তিনি বলেন, এই সিঁড়ির ভূতুড়ে গল্পের কথা তিনিও জানেন।

[আরও পড়ুন: শাবকদের নিয়ে নদীর ধারে বসে বাঘিনী! সুন্দরবনে একসঙ্গে দেখা মিলল ৪ রয়্যাল বেঙ্গলের ]

বিচারপতির মুখে এ কথা শুনেই রীতিমতো নড়েচড়ে বসেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়, রাতুল বিশ্বাস, সুদীপ্ত দাশগুপ্তরা। তাঁরাই সে সময়ে উপস্থিত ছিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সামনে। তাঁদেরও যে অভিজ্ঞতা রয়েছে, কখনও না কখনও এমন কোনও ব্যাখ্যাতীত নানা ঘটনার। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নিজেও কাজের জন্য অনেক রাত পর্যন্ত থাকেন আদালতে। তাহলে তিনিও কি দেখেছেন এমন কিছু!

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তখন জানান, বেশ কয়েক বছর আগে, কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি ছিলেন সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়ে একদিন রাতে হাইকোর্টের একজন পুলিশকর্মী বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এসে জানান, প্যাঁচানো সিঁড়িটি দিয়ে নামার সময়ে তাঁকে নাকি কেউ পিছন থেকে ধাক্কা মেরেছে! ওই পুলিশ নাকি তার পরে ‘হাড় হিম করা’ দৃশ্যও দেখেছেন। এর পর থেকেই এগারো নম্বর এজলাসের পাশের ওই সিঁড়ি পথ রাত হলেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, সেখানে মোতায়েন পুলিশকর্মীর সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হয় সেই সময় থেকে।

দেশের সবচেয়ে পুরনো হাইকোর্ট এই কলকাতাতেই। বেলজিয়ামের ক্লোথ হলের কায়দায় বানানো এই ভবনটি অসাধারণ স্থাপত্যের জন্য হেরিটেজ বিল্ডিং-এর তকমাও পেয়েছে। এখানে বছরভর প্রচুর মানুষ আসেন বিচারের আশায়। সারা দিন অসংখ্য লোকের আনাগোনায় জমজমাট থাকে হাইকোর্ট চত্বর। কিন্তু সন্ধে নামলেই এই পাড়া যেন নিশুতপুরী। এই অদ্ভুত আবহ কলকাতার খুব কম জায়গাতেই রয়েছে। আর সেই জন্যই হয়তো কলকাতার ভূতের গল্প আরও ভালভাবে জমে উঠেছে হাইকোর্টের আনাচকানাচে।হবে না-ই বা কেন, আলো-আঁধারি বারান্দাময় এই বাড়িতে ঘটে গিয়েছে কতই না ঘটনা! এই প্রাসাদেই কেউ পেয়েছেন ফাঁসির সাজা, কেউ বা বিচার না পেয়ে ঘুরে মরেছেন। এমন এক জায়গায় ‘ভূত’ থাকা আর কী এমন আশ্চর্যের কথা! তবে এত দিন যে ভূতের কাহিনী শুনিয়েছেন আদালত কর্মী থেকে আইনজীবীরা, সেই কথা শোনা গেল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখে। যা এক অন্য মাত্রা পেল।

[আরও পড়ুন:  ইডির ডাকে সাড়া, সম্পত্তির হিসেব নিয়ে দিল্লি গেলেন অনুব্রতকন্যা সুকন্যা, সঙ্গে হিসাবরক্ষক মণীশ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement