গোবিন্দ রায় ও সোমনাথ রায়: এজলাসের বাইরে বিক্ষোভের ঘটনায় আরও কড়া বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। যারা এজলাসের বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তাঁদের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করার নির্দেশ কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতির। হাই কোর্ট সূত্রে খবর, মান্থার নির্দেশের পরই শুরু হয়েছে শনাক্তকরণের প্রক্রিয়া। এদিকে, এজলাসের বাইরে বিক্ষোভের প্রতিবাদে বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার দ্বারস্থ ‘লইয়ার্স ফর জাস্টিস’ নামে আইনজীবী সংগঠন। বৃহস্পতিবার বিকেলে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন তাঁরা। সংগঠনের সদস্যদের দাবি, এই ঘটনা আইনজীবীদের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। যে বা যারা এই কাজ করেছেন তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বিসিআই (Bar Council of India)-এর তরফে ৩ প্রতিনিধিকে পাঠানো হচ্ছে রাজ্যে।
ঘটনার সূত্রপাত গত সোমবার। ওইদিন সকাল থেকে কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta HC) বিচারপতি মান্থার এজলাসে গেট আটকে বিক্ষোভে (Agitation) শামিল হন আইনজীবীদের একাংশ। তিনি এজলাসে এসেও বিক্ষোভের জেরে চলে যান। এদিকে, তাঁর বিরুদ্ধে আদালতের বাইরের দেওয়ালে পোস্টার দেখা যায়। তাতে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ছবি দিয়ে ইংরাজিতে লেখা – “লজ্জা, বিচারব্যবস্থার নামে কলঙ্ক! কেউ আবার প্রশ্ন তুলেছেন – কোথায় আসল বিচার মিলবে?”
[আরও পড়ুন: ‘স্বামীজি শিক্ষাব্যবস্থার হাল দেখে বাংলা থেকে প্রস্থান করতেন’, তোপ শুভেন্দুর, পালটা দিলেন শশী]
মঙ্গলবার সকালে আদালত খোলার পরও আইনজীবীদের একাংশ বিচারপতি মান্থার এজলাস বয়কটে অনড় থেকে শুনানিতে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। হাই কোর্টে বিচারপতি মান্থার বিরুদ্ধে পোস্টার পড়ে। এমনকী, যোধপুর পার্কে তাঁর বাসভবনেও পোস্টার পড়ে। আইনজীবীদের তাঁর এজলাসে যেতে বাধা দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনার জল গড়ায় বহুদূর। ইতিমধ্যে অবমাননার রুল জারি করা হয়। বুধবার থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় কিছুটা।
রাজ্যের এজির কাছে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা অভিযোগ করে বলেন, অধিকাংশ মামলায় তাঁর এজলাসে অনুপস্থিত থাকছেন সরকারি আইনজীবিরা। প্রশ্ন করেন, “রাজ্যের আইনজীবীরা আসছেন না কেন?” জবাবে এজি সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমি কথা বলেছি। তাঁরা চায় মামলায় অংশ নিতে। বারের বেশিরভাগ আইনজীবীরা যোগদানের পক্ষে। আমি একা, সব মামলায় তো একা অংশগ্রহণ করতে পারি না। তবে তারা মামলায় অংশগ্রহণের পক্ষে।” বিচারপতি আরও বলেন, “অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি ছিল। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলা আমি স্থগিত রেখেছি। কিন্তু সরকারি আইনজীবী অনুপস্থিত থাকার জন্য মামলায় কোন নির্দেশ দিতে পারলাম না। বিচারপ্রার্থীদের কথা ভাবতে হবে। দেখা যাক কাল কী হয়।” জবাবে রাজ্যের এজি বলেন, “খুব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। এত মামলায় আমায় উপস্থিত থাকতে হচ্ছে যে আমি বিষয়টি জানতাম না। খোঁজ নিয়ে দেখছি কেন এটা হচ্ছে।”
[আরও পড়ুন: বাংলা ভাগের ছক? পৃথক কামতাপুর নিয়ে KLO’র সঙ্গে আলোচনায় কেন্দ্র! জীবন সিংহের চিঠিতে চাঞ্চল্য]
এরপর বৃহস্পতিবার বিকেলে ‘লইয়ার্স ফর জাস্টিস’-র তরফে স্মারকলিপি পেয়ে এ বিষয়ে তদন্তের জন্য রাজ্যে বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। বিসিআইয়ের চেয়ারম্যান মনন কুমার মিশ্রের বক্তব্য, যা ঘটেছে তা নিন্দনীয়। কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না। সম্প্রতি ওড়িশাতেও এই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। দোষীদের লাইসেন্স রদ করা হয়।