shono
Advertisement

বাংলাদেশ সীমান্তে শ্যামা মায়ের আরাধনা, সম্প্রীতির মেলায় ব্যাপক ভক্ত সমাগম

প্রতিবছর সাড়ে পাঁচশোর উপর পাঁঠা বলি হয় এই কালীপুজোয়। 
Posted: 08:39 PM Dec 11, 2023Updated: 12:05 PM Dec 12, 2023

অতুলচন্দ্র নাগ, ডোমকল: কালীপুজোর সূচনা হয়েছিল কাঁটাতারের ওপারে। তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের রাজশাহীতে। এখন ধুমধাম করে প্রাচীন এই কালীপুজো পালিত হয় বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া মুর্শিদাবাদের রানিনগরের চর দুর্গাপুরে। আয়োজন করা হয়েছে বৃহৎ মেলার। যেখানে আনন্দে মাতবেন এলাকার মানুষ। তাই নয় জেলার বাইরে থেকেও প্রচুর মানুষেরও সমাগম হবে পুজো উপলক্ষে। আসবেন অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষও। ফলে এই মেলা এই অঞ্চলের মানুষের জন্য এক সম্প্রীতির উৎসবে পরিণত হয়েছে। যার জন্য সাড়া বছর অপেক্ষায় থাকেন এলাকার মানুষ।

Advertisement

রাত পোহালেই সীমান্তে কালীপুজো। মণ্ডপ থেকে কাঁটাতারের বেড়ার দুরত্ব মাত্র কয়েকশো মিটার। একটা সময় ছিল খোলা সীমান্তে ওপার বাংলার মানুষরাও ওই মেলায় আসতেন। কাঁটাতারের বেড়ার প্রাচীর প্রতিষ্ঠা পাওয়ায় এখন তাঁদের আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পুজোর প্রধান পুরোহিত গৌরাঙ্গ বাজপেয়ীর কথায়,“কালী মায়ের মহিমার কারণেই চর দুর্গাপুরের এই পুজোর অনেক নাম। প্রতি বছরই বহু ভক্ত মায়ের কাছে প্রার্থনা করে উপকৃত হন। যার সুবাদে প্রতি বছরই মায়ের কাছে মানত পুজো, পাঁঠা বলি ছাড়াও হরিলুট দেওয়ার সংখ্যা বাড়ছে।” তিনি জানান, “গত বছর ৪৫ খানা মানত প্রতিমার পুজো হয়েছিল, এবারেও ৩৯ খানা প্রতিমার পুজো হবে। ভালো লাগে যখন দেখি অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষেরাও মায়ের কাছে ফল পেয়ে তাদের পুজোর অঞ্জলি দেন।” জানা গিয়েছে, এই পুজো উপলক্ষে প্রতিবছর সাড়ে পাঁচশোর উপর পাঁঠা বলি হয়। 

[আরও পড়ুন: কালীপ্রতিমার সোনার জিভ চুরি, মানসিক ভারসাম্যহীন সেজেও শ্রীঘরে ‘গুণধর’]

পুজোর সূচনা প্রসঙ্গে প্রধান পুরোহিত বলেন, “পুজোর উৎপত্তিস্থল অধুনা বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার টলটলি গ্রামে। তবে কবে কখন প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এই পুজো কারও জানা নেই। তবে শুনেছি ব্রিটিশ অধীনস্থ ভারতে তিওয়ারি পরিবারের কুঞ্জুলাল তিওয়ারি ওই পুজোর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এলাকায় তখন চাঁই সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস ছিল অনেক। তারা আসলে তিওয়ারি বংশের যজমান ছিলেন। তাদের নিয়েই ওই পুজো পরিচালনা হত।”

দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনুকুল চন্দ্র সরকার জানান, “১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে চলে আসেন। তারা চলে আসার পর মাকালী তাদের স্বপ্নে জানান দিয়েছিলেন তোরা চলে গেলি ! আমাকেও নিয়ে চল।” তিনি আরও বলেন, ওই স্বপ্নের কথা জানাজানি হতেই ভারতে আসা মানুষ তৎকালীন পাকিস্তানে গিয়ে পুজোর কাঠামো নিয়ে আসেন চর দুর্গাপুরে ও পুজো শুরু করেন। সেটা ১৯৫৬ সালের ঘটনা। আর তাই পুজোর হিসাব ৬৭ বছর। এই পুজো কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা বিমল মণ্ডল জানান “ভারতের জমিতে এই পুজোর বয়স ৬৭ বছর হলেও এর সূচনা অনেক বছর আগে।”

[আরও পড়ুন: জলপাইগুড়ির বন্ধ চা বাগান অধিগ্রহণ করবে রাজ্য সরকার, ঘোষণা মমতার]

এই পুজো নিয়ে এলাকার যুবক মুকলেম শেখ জানান, “চর এলাকা বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষে মেলার জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে।” তিনি জানান, ১৬ নভেম্বর উত্তর চর মাঝারদিয়াড়ে পীর বাবার উরস উপলক্ষে একদিনের মেলা হয়, বর্ডারপাড়ায় অগ্রহায়ন মাসের পূর্ণিমায় রাসযাত্রা উপলক্ষে দশদিনের মেলা বসে। তার পরেই অগ্রহায়ন মাসের শেষ মঙ্গলবারে চর দুর্গাপুরের ২৫ ফুটের কালীপুজো উপলক্ষে বসে চার দিনের মেলা। যা আমাদের কাছে সম্প্রীতির মেলা হিসাবে পরিচিত।” এভাবেই পুজোর মাহাত্ম্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement