নন্দন দত্ত, সিউড়ি: কালী হলেও আকালী! ফলে পুজোর ক্ষেত্রে নিয়ম নাস্তি। যেখানে অমাবস্যার রাতে কালীপুজো হয় সেখানে আকালীপুরে পুজো হল দিনের বেলা। ছাগ বলি হল। সব কিছুই দিনের বেলা। সন্ধে হওয়ার আগেই। কিন্তু কেন?
স্থানীয়দের বিশ্বাস, রাতে মা নৈশলীলা করেন। তাই চারিদিক নিঝুম অন্ধকার রাখা হয়।
মহারাজের ছেলে গুরুদাস রায় কালীর জন্য নির্মীয়মাণ মন্দির অসম্পূর্ণ রেখে দেন। এখন অবশ্য সেই মন্দির সম্পূর্ণ হয়েছে। ছবি: সুশান্ত পাল।
মহারাজ নন্দকুমারের সময় থেকেই তাঁর প্রতিষ্ঠিত কালীপুজোর এমনই নিয়ম। প্রতিষ্ঠার পরই তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার মিথ্যা মামলায় মহারাজের ফাঁসির নির্দেশ দেয়। তার পরই মহারাজের ছেলে গুরুদাস রায় কালীর জন্য নির্মীয়মাণ মন্দির অসম্পূর্ণ রেখে দেন। এখন অবশ্য সেই মন্দির সম্পূর্ণ হয়েছে। তবে অসম্পূর্ণ মন্দিরেই ১৭৭৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন কালীমূর্তি। তবে নলহাটির এই জায়গা আকালীপুর নামেই পরিচিতি পায়।
একটি মাত্র কষ্টিপাথরে তৈরি পদ্মাসনা কালীমূর্তি দেশে 'জরাসন্ধ কালী' নামে পরিচিত। ইতিহাস বলছে, মগধরাজ জরাসন্ধ পাতালে বসে এই কালীমূর্তির পুজো করতেন। জরাসন্ধের মৃত্যুর পর সেই মূর্তি পাতালেই থেকে যায়। রাজস্থানের যোধপুরের রানী অহল্যাবাঈ মগধে কিছুদিন থাকাকালীন স্বপ্নাদেশে পাতালে শিবমূর্তির সন্ধান পান। সেই সময় মাটি খননের সময় পদ্মাসনা কালীমূর্তিটির উদ্ধার হয়। সাপের কুন্ডলীর উপর পদ্মাসনে বসে দেবী। মাথায় তাঁর সহস্র নাগের ফনা। হাতে পায়ে সাপের চুরির নকশা। সিংহাসন থেকে দেবী, একটি মাত্র কষ্টি পাথরে তৈরি। ভয়ঙ্কর দর্শনা। মূর্তিটি যেহেতু মগধে মিলেছে তাই রানী অহল্যা সেটি ততকালীন কাশীরাজ চৈত সিংকে সেটি দান করেন। কাশীরাজ হলেও চৈত সিং তখন মগধের রাজা ছিলেন। মূর্তিটি সিংহাসন সমেত মাত্র একটি পাথরে তৈরি হওয়ায় তৎকালীন ইংরেজ শাসক ওয়ারেং হেস্টিংসের নজরে পরে। ইংল্যান্ডের মিউজিয়ামে নিয়ে যাওয়ার বাসনা জাগে তাঁর।
অমাবস্যার রাতে কালীপুজো হয় সেখানে আকালীপুরে পুজো হল দিনের বেলা। ছবি: সুশান্ত পাল।
কাশীরাজ চৈত সিং মূর্তিটি বাঁচাতে কাশীর দশাশ্বমেধ ঘাটে গঙ্গার জলে লুকিয়ে দেন। কালক্রমে মহারাজ নন্দকুমার বাংলার দেওয়ান হিসাবে কাশীধামে যান। গঙ্গাবক্ষ থেকে মূর্তি উদ্ধারের স্বপ্নাদেশ পান। সেই মূর্তি গঙ্গা দিয়ে দ্বারকা নদ বেয়ে বীরভূম আসে। সেখান থেকে নৌকা যোগে ব্রাক্ষ্মনী নদী দিয়ে নলহাটির এই আকালীপুরের ঘাটে নামে। মূর্তিটি এতই ভারি যে বটতলায় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিদিন ধীরে ধীরে সরাতে হয়েছ। ইতিহাসের ধারা বেয়ে সেই দেবীর পুজো হয় দিনের বেলা। প্রতিদিন তেঁতুল দিয়ে মাছের টক হয়। দু কেজি আতপ চালের ভোগ হয়। তবে কালীপুজো হয় অন্য মতে। দিনের বেলা। বৃহস্পতিবার দিনের কালী পুজো দেখতে ভিড় জমে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এবছরই প্রথম মন্দিরের চারপাশে সি সি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।