আকাশ মিশ্র: সাইফাই ছবি তৈরি করতে হলে, হলিউডের মতো ভারতীয় ছবিতে নতুন চরিত্র সৃষ্টি করার প্রয়োজন পড়ে না। কারণ, এদেশের ঝুলিতে রয়েছে অজস্র কথা ও কাহিনি। বিশেষ করে পুরাণের হাত ধরে এমন কিছু গল্প সামনে চলে আসে, যা কিনা সব অবস্থাতেই সমকালীন, সব অবস্থাতেই ভবিষ্যতের কথা বলে। নাগ অশ্বিনের 'কল্কি' পুরাণের ঠিক এই গুণকে সামনে নিয়ে আসে। সঙ্গে যোগ হয়, মহাভারত, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ এবং অশ্বত্থামা! যার সঙ্গে মিলে যা মাৎস্যন্যায় এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিং! হ্যাঁ, এরকমই এক বিষয়কে পুরাণের সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি হয়েছে 'কল্কি' (Kalki 2898 AD) । তবে গল্পকে এক পাশে রাখতে পারেন। কেননা, 'কল্কি' অসাধারণ এক ভিজ্যুয়াল ট্রিট।
একটু বিশদে বলা যাক। মহাভারতের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের শেষ থেকেই এই ছবির গল্প শুরু হয়। কিন্তু গল্পের আসল মারপ্যাঁচ কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পরবর্তী ৬ হাজার বছর পরের পৃথিবী। যেখানে মানুষের স্বার্থপরতায়, লোভে বিপর্যস্ত প্রকৃতি। গাছপালাহীন এক বিশ্ব। মানুষের পাপ ধুয়ে কাশীর গঙ্গা শুকিয়ে গিয়েছে। নাগা অশ্বিন, সেই চরম কলিকালকেই তুলে ধরলেন ছবিতে। তৈরি করলেন দুটি বিশ্ব একটা এমন বিশ্ব যেখানে আমরা রয়েছি। আরেকটি ডার্ক ওয়ার্ল্ড। যা তৈরি হয়েছে আমাদের পৃথিবী শোষন করেই। সেই ডার্ক ওয়ার্ল্ডে গাছ রয়েছে, নদী রয়েছে, পাখিও রয়েছে। তবে সেই বিশ্ব একেবারেই দুষ্টদের। সৎ ও স্বার্থপরের লড়াই। ভালো ও মন্দের লড়াই। বিষ্ণুর শেষ অবতার কল্কিই এখানে একমাত্র সত্য।
[আরও পড়ুন: স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হিনা খান, জল্পনায় সিলমোহর দিয়ে বললেন, ‘স্টেজ ৩, প্রার্থনা করুন…’]
পুরাণ থেকেই চরিত্র ধার করে তৈরি হয়েছে এই ছবির চরিত্রগুলো। এখানে অশ্বথামা অমিতাভ বচ্চন। বিগবি ছাড়া এই অভিনয়টা হয়তো কেউই করতে পারতেন না। ক্যামেরার সামনে এসে দাঁড়ালে আর সব চরিত্রই ম্লান হয়ে যায় অশ্বত্থামা থুড়ি অমিতাভের ভারে। ঠিক এই চরিত্রের উলটো দিকেই রয়েছেন কমল হাসান। 'কমপ্লেক্স' নামক এক ইউটোপিয়ান বিশ্বের সুপ্রিমো তিনি। কমল ও অমিতাভের লড়াই এই ছবির সবচেয়ে শক্তপোক্ত দিক। বলা ভালো মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখতে হয় এই দুজনকে। আর যিনি অবাক করেছেন, তিনি হলেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। শাশ্বতর চরিত্রটি একেবারেই ডার্ক। অতন্ত দক্ষতার সঙ্গে এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাশ্বত। তবে এসবের মাঝে প্রভাস বেশ দুর্বল। তাঁর পেশিবহুল শরীরই যেন বেশিমাত্রায় প্রকাশ পেয়েছে।
কল্কির জন্মদাত্রী সুমতির চরিত্রে অভিনয় করেছেন দীপিকা। তাঁকে নিয়েই আসলে পুরো ছবির গল্প এগিয়েছে। তবুও দীপিকা তাঁর অভিনয় দক্ষতা দেখানোর সুযোগ তেমনি পাননি। ঠিক তেমনি দিশা পাটানি। তিনি এই ছবিতে শুধুই সুন্দর পুতুল! 'কল্কি' ছবিতে নানা চরিত্রের সমাহার। আর তাই হয়তো একের পর এক কেমিও। এসএস রাজামৌলি, রামগোপাল ভার্মা, ম্রুণাল ঠাকুর, দুলকার সলমন, বিজয় দেবেরাকোণ্ডা ছোট ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন।
আসলে এই ছবি একেবারেই টেকনোলজি নির্ভর। যেখানে প্রায় প্রতিটি ফ্রেমে গ্রাফিক নভেলের ব্যবহার। অত্যন্ত উন্নতমানের ভিএফএক্স। যা অনেক সময়ই 'ম্যাড ম্যাক্স', 'ব্ল্যাক প্যান্থার', 'মার্ভেল মুভিজ'কে মনে করিয়ে দেব। বিশেষ করে অ্য়াকশন দৃশ্যগুলো হতবাক করে।
শেষমেশ বলতে হয়, 'কল্কি' এমনই এক ছবি যা কিনা মগজে গেঁথে যায় শুধুই তাঁর নির্মাণের জন্য। এমনকী, সব শেষে 'কল্কি' যে আরও সিরিজ নিয়ে আসবে তা স্পষ্ট হয়। বলা ভালো নাগ অশ্বিন ভারতীয় ছবির একটা নতুন ইউনিভার্স তৈরি করলেন।