সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কঙ্গনার (Kangana Ranaut) ‘ভিক্ষের স্বাধীনতা’ মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে। উঠেছে গ্রেপ্তারির দাবিও। বুধবার এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলিউড অভিনেত্রী দাবি করেছিলেন, ভারত প্রকৃত স্বাধীনতা পেয়েছিল ২০১৪ সালে, যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Modi) ক্ষমতায় এসেছিলেন। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীনতা পায়নি। ওটা ছিল ভিক্ষা। স্বাভাবিক ভাবেই এমন মন্তব্যের পরেই তুঙ্গে ওঠে বিতর্ক।
বিরোধীদের দাবি, এমন মন্তব্যের জন্য কঙ্গনার পদ্মশ্রী (Padma Shri) কেড়ে নেওয়া হোক। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজুর হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অবশেষে আত্মপক্ষ সমর্থনে সোশ্যাল মিডিয়াকে বেছে নিলেন কঙ্গনা। এর আগে এই ধরনের বিতর্কে টুইটারকেই বেছে নিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু বর্তমানে সেখানে তিনি নিষিদ্ধ। তাই শনিবার ইনস্টাগ্রামেই নিজের বক্তব্য জানালেন কঙ্গনা। জানিয়ে দিলেন, তিনি পদ্মশ্রী ফিরিয়ে দিতে প্রস্তুত। কিন্তু সেজন্য নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে। যা পূরণ হলেই তিনি ফিরিয়ে দেবেন পদ্ম সম্মান।
[আরও পড়ুন: বিরসা মুন্ডা জন্মজয়ন্তীতে মোদিকে স্বাগত জানাতে ৪ ঘণ্টায় ২৩ কোটি টাকা খরচ করবে মধ্যপ্রদেশ]
ঠিক কী জানিয়েছেন কঙ্গনা? তিনি ইতিহাস বইয়ের একটি পাতা তুলে ধরেছেন যেখানে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা রয়েছে। ‘কন্ট্রোভার্সি কুইন’ লিখেছেন, ”ওই সাক্ষাৎকারেই কিন্তু সব কিছু পরিষ্কার করে বলে দেওয়া হয়েছিল। ১৮৫৭ সালেই প্রথমবার দেশ স্বাধীনতার জন্য একজোট হয়েছিল। সেই সঙ্গে সুভাষচন্দ্র বসু, রানি লক্ষ্মী বাই ও বীর সাভারকরের কথাও জানিয়েছিলাম আমি। ১৮৫৭ সালের কথা আমি জানি। কিন্তু ১৯৪৭ সালে কোন যুদ্ধ হয়েছিল, তা আমি জানি না। যদি কেউ তা আমার নজরে তা আনতে পারেন তাহলে আমি আমার পদ্মশ্রী ফিরিয়ে দেব। ক্ষমাও চাইব। দয়া করে আমাকে এবিষয়ে সাহায্য করুন।”
নিজের বক্তব্যের সমর্থনে কঙ্গনার আরও যুক্তি, দক্ষিণপন্থী সংগঠনগুলির উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয়তাবাদেরও সূচনা হয়েছিল। কিন্তু সেটার এমন আকস্মিক মৃত্যু হল কেন? কেন গান্ধী ভগৎ সিংকে মরতে দিলেন। কেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে খুন করা হল। কখনও তাঁকে সমর্থন কেন করেননি গান্ধী? কেন দেশের ‘লাইন অফ পার্টিশন’ টানলেন একজন শ্বেতাঙ্গ? স্বাধীনতা উদযাপনের বদলে কেন ভারতীয়রা একে অপরের প্রাণ নিতে শুরু করলেন? এই সব প্রশ্নের উত্তর আমি খুঁজছি।আমারকে সাহায্য করুন।”
[আরও পড়ুন: দূরপাল্লার ট্রেন থেকে উঠে যাচ্ছে ‘স্পেশ্যাল’ তকমা, আর গুনতে হবে না অতিরিক্ত ভাড়াও]
২০১৪ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার প্রসঙ্গে বরাবরই গেরুয়া শিবিরের প্রতি দুর্বল কঙ্গনার বক্তব্য, আক্ষরিক স্বাধীনতা দেশ হয়তো ১৯৪৭ সালে পেয়েছিল। কিন্তু চেতনা ও বিবেকের স্বাধীনতা দেশ পেয়েছিল ২০১৪ সালে। তাঁর মতে, ওই বছরই এক মৃত সভ্যতা জেগে উঠেছিল। এখন আর কাউকে ইংরেজি বলতে না পারার জন্য লজ্জিত হতে হয় না। ছোট শহর থেকে আসার জন্য লজ্জিত হতে হয় না।
উল্লেখ্য়, কঙ্গনাকে আক্রমণ করেছেন বিজেপিরই বরুণ গান্ধী। লেখেন, ”কখনও মহাত্মা গান্ধীর ত্যাগ ও তপস্যাকে অপমান, কখনও ওঁর হত্যাকারীকে সম্মান। আর এবার শহিদ মঙ্গল পান্ডে থেকে শুরু করে রানি লক্ষ্মীবাঈ, ভগৎ সিং, চন্দ্রশেখর আজাদ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও আরও অসংখ্য স্বাধীনতা সংগ্রামীর বলিদানকে অবজ্ঞা। এটাকে পাগলামি বলব নাকি বিশ্বাসঘাতকতা?” এরপর তাঁকে আক্রমণ করেন এনসিপি নেতা নবাব মালিকও। নবাবের মন্তব্য, “সম্ভবত উনি (কঙ্গনা) আজকাল অতিরিক্ত মাদক নিচ্ছেন!” কংগ্রেস, শিব সেনা, আম আদমি পার্টির মতো দল গর্জে উঠেছেন কঙ্গনার মন্তব্যে। অবশেষে মুখ খুললেন অভিনেত্রী। করলেন পালটা আক্রমণ।
আসলে এই মন্তব্য নিয়ে ক্রমেই চাপ বাড়ছে কঙ্গনার উপরে। এমনকী তাঁর বিরুদ্ধে সরব বিজেপিও। মহারাষ্ট্রের বিজেপি সভাপতি চন্দ্রকান্ত পাটিলের বক্তব্য, দেশের স্বাধীনতা নিয়ে কঙ্গনার মন্তব্য সম্পূর্ণ ভুল। দেশের স্বাধীনতা নিয়ে কুমন্তব্য করার কোনও অধিকার নেই কারওই।