সম্যক খান, মেদিনীপুর: সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাতেই হয়ে গিয়েছিল অষ্টম শ্রেণিতে পাঠরতা এক নাবালিকার বিয়ে। একটু দেরিতে জানতে পারে সহপাঠীরা। খবর পেয়েই সটান বরের বাড়িতে হানা দিল কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্যারা। বরের বাড়ির সামনেই মেয়েটিকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে বসে পড়ল অবস্থানে। একইভাবে তারা হানা দিল মেয়ের বাড়িতেও। শেষমেশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে স্কুলে নিয়ে গেল তারা। তার কাউন্সেলিং করলেন স্কুলের বন্ধুবান্ধব থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষিকারা। প্রাপ্তবয়স্ক হলে প্রধান শিক্ষক সুরেশ পড়িয়া নিজে দাঁড়িয়ে থেকে মেয়েটিকে পছন্দের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিলেন।
নাটকীয় এই ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার সকালে কেশপুরের গোলাড় গ্রামে। গোলাড় সুশীলা বিদ্যাপীঠের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ওই নাবালিকা। আর ওই স্কুলই এবার রাজ্য সরকারের কাছ থেকে শ্রেষ্ঠ কন্যাশ্রী ক্লাবের পুরস্কার পেয়েছে। স্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাব যথেষ্ট সক্রিয়। ক্লাবের সম্পাদিকা অর্পিতা রায়ের নেতৃত্বে প্রায় ৫০ জন সদস্যাও রয়েছেন। এর আগেও একাধিকবার নাবালিকা বিয়ে রুখে খবরের শিরোনামে এসেছেন তাঁরা। অষ্টম শ্রেণিতে পাঠরতা নাবালিকার বাড়ি স্কুলেরই ঢিলছোঁড়া দূরত্বে গোলাড় গ্রামের মানপাড়াতে। ১৪ বছর বয়স তার।
[আরও পড়ুন: ‘প্রয়োজনে শিক্ষামন্ত্রীকে তলব করব’, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় হুঁশিয়ারি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের]
প্রধান শিক্ষক সুরেশ পড়িয়া বলেন, “ওই ছাত্রীটির সঙ্গে বালিলোয়াগেড়্যা গ্রামেরই এক যুবকের সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক মতে বিয়ে হয়। খবর পায় আমাদের কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্যারা। তাকে জানিয়েই সকালে অর্পিতারা প্রায় দশজন বরের বাড়িতে সটান চলে যায়। তারা তাদের সহপাঠীর সঙ্গে দেখা করতে চায়। কিন্তু তাদের সঙ্গে মেয়েটিকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। বিয়ের কথাও অস্বীকার করেন তারা। তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়। জানিয়ে দেওয়া হয় সহপাঠী এখানে নেই। দীর্ঘক্ষণ কথা কাটাকাটি, তর্কাতর্কি হয়। অর্পিতারা সেখানেই অবস্থানে বসে পড়ে।”
প্রধান শিক্ষক আরও জানান, প্রায় ঘন্টাখানেক অবস্থানে বসার পর ফের তারা চলে আসে নাবালিকার বাড়িতে। নাবালিকাকে সেখানেও পাওয়া যায়নি। মেয়ের বাড়িও বিয়ের কথা অস্বীকার করে। জানায় ওই ছাত্রী মাসির বাড়ি গিয়েছে। সেখানেও তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ। কিন্তু অটল থাকে অর্পিতারা। তারা মেয়েটিকে হাজির করতে বলে সেখানেই অপেক্ষা করতে থাকে। শেষমেশ পরিবারের লোকজন বাধ্য হয়ে মেয়েটিকে তাদের সামনে নিয়ে আসে। পরে অর্পিতারা তাকে স্কুলে নিয়ে আসেন। অন্যান্য সহপাঠী ও শিক্ষক শিক্ষিকারা বোঝান। একসঙ্গে ছবিও তোলা হয়। প্রধান শিক্ষক সুরেশবাবুর অঙ্গীকার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য ছাত্রীটিকে সবরকম সহযোগিতা করা হবে।