অর্ণব আইচ: কসবার ভুয়ো করোনা টিকা (Corona vaccine) শিবিরের ঘটনার তদন্ত যতই এগোচ্ছে, ততই পরতে পরতে উন্মোচিত হচ্ছে রহস্য। জানা গিয়েছে, কোভিশিল্ড টিকা চেয়ে ভুয়ো IAS দেবাঞ্জন দেব ইমেল করেছিল পুণের সেরাম ইনস্টিটিউটে। যদিও তার আয়োজিত শিবির থেকে পাওয়া ভ্যাকসিনে কোনও ব্যাচ নম্বর ছিল না। ফলে ধরে নেওয়া যায়, দেবাঞ্জনের আবেদনে সাড়া দিয়ে তাকে টিকা পাঠায়নি সেরাম। তবে এই বিষয়টির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে বিশদে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দেবাঞ্জন নিজের ভুয়ো সংস্থার কর্মীদের বেতন দিত WBFINCORP থেকে। কীভাবে এই জায়গা থেকে অর্থ পেত সে, তাও একটা বড় প্রশ্ন তদন্তকারীদের। রবিবার রাতে তার মাদুরদহের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।
দেবাঞ্জন এবং তার ভুয়ো ভ্যাকসিন (Kasba Fake vaccine) প্রদান চক্রের তদন্তে নেমে আরও তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন কসবার স্থানীয়, জনপ্রিয় কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ। তাঁদেরও জেরা করছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের তৈরি সিট (SIT)। জেরা চলছে দেবাঞ্জনের। আর তাতেই জানা গিয়েছে নানা তথ্য। দেবাঞ্জনের দাবি, উত্তর কলকাতার সিটি কলেজ এবং কসবা – এই দু জায়গাতেই সে টিকাকরণের শিবির করেছিল, অন্য কোথাও শিবির করেনি। অথচ সোনারপুরে একটি শিবিরের কথা প্রকাশ্যে এসেছে, যেখানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক (MLA)লাভলি মৈত্রও। দেবাঞ্জনের কাছ থেকে কলকাতা পুরসভার বিভিন্ন বিভাগের প্রচুর স্ট্যাম্প উদ্ধার হয়েছে। মোট ৮ টি ব্যাংকে তার অ্যাকাউন্ট ছিল। সেখান থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন হতো, সেসব খোঁজ নিচ্ছেন তদন্তকারীরা। বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় চিঠি লিখত দেবাঞ্জন। তার জন্য ভুয়ো ইমেল আইডি-ও তৈরি করেছিল সে।
[আরও পড়ুন: খেলার সময় শ্বাসনালীতে পেরেক আটকে বিপত্তি! খুদের প্রাণ বাঁচাল SSKM]
এদিকে, ভুয়ো টিকা কাণ্ডে জড়িত দোষীদের গ্রেপ্তার ও দ্রুত তদন্ত শেষ করার দাবিতে রবিবার কসবা থানা ঘেরাও করে কলকাতা জেলা বামফ্রন্ট। নেতৃত্ব দেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী দেবেশ দাস। ছিলেন কসবার সিপিএম নেতা শতরূপ ঘোষ। তাঁরা থানার সামনে বিক্ষোভ দেখাতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। শুরু হয় দু’পক্ষের মধ্যে বচসা। ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়ে পুলিশ ও বামফ্রন্টের কর্মীরা। সেখান থেকেই আটক করা হয় দেবেশ দাস, শতরূপ ঘোষ -সহ বামফ্রন্টের নেতা, কর্মীদের। পরে বামফ্রন্টের এক প্রতিনিধি দল থানায় গিয়ে স্মারকলিপি জমা দেয়। এরপরই আটকদের মুক্তি দেয় পুলিশ।
[আরও পড়ুন: রবিনসনকাণ্ডের ছায়া ট্যাংরায়, তিনদিন ধরে মায়ের মৃতদেহ আগলে বসে তরুণী]
এই ঘটনার জেরে সতর্কতা হিসেবে আপাতত শহরের সব বেসরকারি ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্প বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্যদপ্তরের তরফে। সোমবার দুপুরে স্বাস্থ্যভবনে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হবে। তারপর টিকা শিবির নিয়ে নির্দিষ্ট গাইডলাইন প্রকাশিত হবে। তার আগে পর্যন্ত বেসরকারি তরফে কোনও ক্যাম্প করা যাবে না। এমনই নির্দেশ জারি করেছে স্বাস্থ্যদপ্তর।