সোম রায়, শ্রীনগর: দূরত্ব মেরেকেটে মিনিট দশেক। শ্রীনগর থেকে ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে পুলওয়ামার লেথাপোরা গ্রাম ছাড়িয়ে এগিয়ে গেলে পড়বে চেরসু। বাঁ-হাতে চোখে পড়ে একের পর এক কাঠের কারখানা। গুদাম। তবে এই কাঠের কারখানার সঙ্গে আর পাঁচটি কারখানাকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। এই কারখানায় তৈরি হয় ক্রিকেট ব্যাট।
কাশ্মীরি উইলোর নাম কানে গেলেই ক্রিকেটপ্রেমীদের জিভে জল চলে আসে। কেরিয়ারের শুরুর দিকে ইংলিশ উইলোয় তৈরি ব্যাট কেনার সামর্থ্য কতজনেরই বা থাকে? তাই দেশের একটা বড় অংশর ভরসা এই কাশ্মীরি উইলোতে তৈরি ব্যাট। ব্যাট তৈরির প্রথম কারখানা চোখে পড়ল অবন্তিপোরার কাছাকাছি। সেই শুরু। সেখান থেকে চেরসু, সঙ্গম হয়ে বিজবেহারা। প্রায় ১৫ কিলোমিটার জুড়ে জাতীয় সড়কের দু’ধারে গড়ে উঠেছে এই ইন্ডাস্ট্রি। কেউ শুধু ব্যাটের ব্লেড তৈরি করেন, কেউ হ্যান্ডেল, কেউ আবার আস্ত ব্যাটটাই।
[ত্রাতা এনরিকে, অ্যাওয়ে ম্যাচ জিতে লিগের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখল ইস্টবেঙ্গল]
রবিবার ঘুরতে ঘুরতে এইরকমই নজরে এল একটি ক্রীড়া সরঞ্জামের দোকান। পিলারগুলোয় লাগানো ফ্লেক্সে ক্রিকেট দেবতাদের ছবি। সেখানে কোহলি, ধোনি, রোহিত, রায়নাদের সঙ্গে জ্বলজ্বল করছেন গেইল, ডি’ভিলিয়ার্স, স্টিভ স্মিথরা। আছেন শাহিদ আফ্রিদি, ফকর জামান, সরফরাজ আহমেদও। একটু পরেই অবশ্য ভুল ভাঙল। প্রথম নজরে যাকে দোকান বলে মনে হয়েছিল, সেটি আদতে দোকান নয়। পিছনে আস্ত একটা কারখানা। ক্ষেত্রফল দু-তিন হাজার স্কোয়্যার ফুট তো হবেই। আর সামনে রাশি-রাশি ব্যাট। সঙ্গে বল, প্যাড, গ্লাভস, হেলমেটের সঙ্গে আছে ব্যাডমিন্টন র্যাকেট, টেনিস বলের মতো অন্যান্য খেলার সরঞ্জাম। ব্যাট তৈরি করে রপ্তানি করা হয় মিরাট, জলন্ধর বেঙ্গালুরুর মতো শহরে।
সামান্য আলাপচারিতার পর দোকানের মালিক আকিব হোসেনকে সরাসরি প্রশ্ন। এই যে দোকানের বাইরে এত পাকিস্তানি ক্রিকেটারের ছবি। কোনও সমস্যা হয় না? মুচকি হেসে যুব ব্যবসায়ী বললেন, “এখানে এমন কেউ আছে, যাঁকে আপনার অযোগ্য বলে মনে হয়?” একটু থেমে জুড়লেন, “অবশ্য একেবারেই যে সমস্যা হয় না, তাও না। সবথেকে বড় ঝামেলা হয়েছিল ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরে। ম্যাচের পর স্থানীয় কয়েকজন এসে ধোনি, কোহলিদের ছবি ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছিল। পালটা দিয়েছিল সেনাবাহিনীও। রাতে টহল দেওয়ার সময় আগুন লাগিয়ে দেয় পাকিস্তানিদের ছবিগুলোয়। এই লড়াইয়ে ক্ষতি তো হয় আমাদেরই।”
[বিশ্বকাপের আগে ধাক্কা খেল বিসিসিআই, বোর্ডের প্রস্তাব খারিজ আইসিসি’র]
কিছুটা এগোতেই মিলল আরেকটি দোকান। এম জে স্পোর্টস। মালিক জাকিব হাসানকে জিজ্ঞেস করা হয়, বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে না খেলার যে কথা উঠছে, তাকে কতটা সমর্থন করেন কাশ্মীরিরা? বলছিলেন, “অনেকেই মনে করেন যে কাশ্মীরি মানেই পাকিস্তানি। বিশ্বাস করুন আমি কিন্তু মনেপ্রাণে ইন্ডিয়ান। এরকম আরও অনেক আছেন। ওদের হারানোর পর যে স্বর্গীয় সুখ পাওয়া যায়, বোঝাতে পারব না। আর সেটা যদি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মঞ্চে হয়, আনন্দ আরও বেড়ে যায়। যাঁরা খেলতে বারণ করছেন, তাঁরা কী ভুলে যাচ্ছেন যে, ওয়ার্ল্ড কাপে ওদের বিরুদ্ধে আমাদের অলউইন রেকর্ডটার কী হবে?”
জাকিবকে বিদায় জানিয়ে আরেকটু এগিয়ে চলা। এবার একটি ছোট্ট কারখানা। সেখানে তৈরি হয় শুধু ব্যাটের ব্লেড। সতেরো বছর এই ব্যবসা করছেন আবদুল আজিজ। বিশ্বকাপ প্রসঙ্গ উঠতে বললেন, “পুরো বিষয়টাই বোকাবোকা। তর্কের খাতিরে গ্রুপ লিগের ম্যাচটা না হয় ছেড়ে দিলাম। যদি নক আউট বা ফাইনালে দেখা হয়? তাহলে কি আমরা খেলব না? এমনি এমনি ট্রফি নিয়ে যেতে দেব ওদের?” পাশে দাঁড়ানো ছোট্ট জাহিদ যা বলল, সেই কথা বলে ক্রিকেট ঈশ্বর শচীন তেণ্ডুলকরকে দিনকয়েক আগে ‘দেশদ্রোহী’র তকমা দিয়েছিলেন অনেকে। বছর দশেকের জাহিদ বলল, “এইসব ঝামেলার সঙ্গে ক্রিকেটের কী সম্পর্ক? ওটা তো শুধুই খেলা।”
The post বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়েই বদলা নিক ভারত, চাইছে কাশ্মীর appeared first on Sangbad Pratidin.