সোমনাথ রায়, দিল্লি: CAA এবং NRC’র বিরুদ্ধে গত ১৪ ডিসেম্বর থেকেই শাহিনবাগের শাহিন স্কোয়্যারের একটি বাস স্ট্যান্ডে প্রতিবাদে বসেছেন স্থানীয়রা। ‘আজাদি’র সুর উঠেছে সর্বত্র। যে প্রতিবাদী আন্দোলনের পুরোভাগে মহিলারা। কনকনে ঠান্ডাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভিড় জমিয়েছে আট থেকে আশি। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে দিনরাত এক করে আন্দোলন চলছে। দেশ আমার, জন্মেছি এখানে, বেড়ে ওঠা এই মাটিতে, এত বছর পর আমার নাগরিকত্বের প্রমাণে কাগজ কেন দেখাতে হবে? প্রশ্ন তোলা এই বিরতিহীন আন্দোলনে শামিল হলেন বাংলার বিশিষ্ট নাট্যকার দম্পতি কৌশিক সেন এবং রেশমি সেন।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে এর আগেও একাধিকবার সরব হয়েছেন কৌশিক। সরকার বিরোধী সুরও চড়িয়েছেন। এবার জীবনের বিশেষ দিনকে আরও বিশেষ করে তোলার জন্য অভিনব পরিকল্পনা করলেন। সস্ত্রীক পৌঁছে গেলেন শাহিনবাগের ময়দানে। দেখা করলেন প্রতিবাদী সুর তোলা মানুষগুলির সঙ্গে। যারা দিনরাত এক করে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে। ৬ ফেব্রুয়ারি কৌশিক এবং রেশমি সেনের দাম্পত্যজীবন পা রাখল ২৫তম বর্ষে। দাম্পত্যজীবনের রজত জয়ন্তী উপলক্ষে দিনটা একটু অন্যরকমভাবেই কাটানোর পরিকল্পনা করে ফেললেন দু’জনে। কোনওরকম রংচঙে সেলিব্রেশন নয়, বরং একেবারে সাদামাটাভাবে কোনওরম সেলিব্রিটি তকমা ছাড়াই শামিল হলেন শাহিনবাগের প্রতিবাদী ময়দানে। সাক্ষী থাকলেন এক প্রতিবাদী আন্দোলনের। কৌশিকের ভাষায়, “মনে হল যেন ইতিহাসকে স্পর্শ করলাম।”
[আরও পড়ুন: পুরভোটে গ্ল্যামার না অভিজ্ঞ রাজনীতিক? প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে মতানৈক্য বিজেপির অন্দরে!]
কৌশিক-রেশমি নিজেরাই ঠিক করেন কোনওরকম সেলিব্রেশন করবেন না। বরং দিল্লি যাবেন। অতঃপর বিবাহবার্ষিকীর দিন বৃহস্পতিবারই দিল্লির উদ্দেশে রওনা হলেন। শুক্রবার দুপুরেই পৌঁছলেন শাহিনবাগে। রাস্তা যেহেতু বন্ধ, তাই ঘুরপথে পিছনের রাস্তা দিয়ে রিকশা করেই প্রবেশ করলেন শাহিনবাগে। ঘটনাচক্রে সেই রিকশাওয়ালাও বাঙালি। মালদা নিবাসী। তিনিই রেশমি-কৌশিককে পৌঁছে দিলেন শাহিনবাগ অবধি। সেখানে গিয়ে কথা বললেন আন্দোলনরত মানুষদের সঙ্গে। যেহেতু আর্থিক সাহায্য করার উপায় নেই, তাই বেশকিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও কিনে দিয়ে এলেন।
এপ্রসঙ্গে কৌশিক বলেন, “বিয়ের ২৫ বছরে অনেক সামাজিক উত্থান-পতনই দেখেছি। এরকম একটা আন্দোলনেরও অংশ হতে চেয়েছিলাম। ওদের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম। সেই ভাবনা থেকেই শাহিনবাগে আসা।” “যখন ঢুকলাম, দেখলাম এক শিখগুরু বক্তব্য রাখছেন। সব ধর্মের মানুষেরাই সেই বক্তব্য মন দিয়ে শুনছেন। সর্ব ধর্ম নির্বিশেষে এভাবে একজোটেও যে একটা প্রতিবাদী আন্দোলন হয়, তা বোধহয় চাক্ষুষ না করলে জীবনে একটা বড় কিছু ‘মিস’ করতাম। আট থেকে আশি, সবাই যোগ দিয়েছেন এই আন্দোলনে। ৫-৬ বছরের বাচ্চারা জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে ঘুরছে। কেউ বা আবার মুখে তিরঙ্গা এঁকেছে। দুর্দান্ত একটা ‘স্পিরিট’! যে বা যারা ভারত বিদ্বেষী হবে, তাঁরা অন্তত জাতীয় পতাকার রং এভাবে আঁকড়ে থাকতে পারে না। মানুষে মানুষে বিভেদ-বিভাজন সৃষ্টির জন্যই ধর্মকে হাতিয়ার করা হচ্ছে। কিংবা ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি চলছে”, মন্তব্য কৌশিক সেনের।
[আরও পড়ুন: নিজভূমে পরবাসী কাশ্মীরি পণ্ডিতদের যন্ত্রণার ছবি, কেমন হল বিধু বিনোদের ‘শিকারা’?]
The post দাম্পত্যের ২৫ বছর অন্যভাবে সেলিব্রেট, শাহিনবাগে সস্ত্রীক কৌশিক appeared first on Sangbad Pratidin.