সন্দীপ্তা ভঞ্জ: রাজ্য সরকার হোক কিংবা দিল্লির মসনদের বিরুদ্ধে, একাধিকবার পথে নেমে সুর চড়িয়েছেন কৌশিক সেন। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে যেমন দিল্লির রামলীলা ময়দানের প্রতিবাদসভায় মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে ২৫ বছরের বিবাহবার্ষিকী উদযাপন করেছিলেন, তেমনই বাংলার শিক্ষাদুর্নীতির প্রতিবাদে বিক্ষোভরত মানুষদের সঙ্গে গতবছর মিশে গিয়েছিলেন কৌশিক। ছাত্রনেতা আনিস খানের মৃত্যুতেও প্রশাসনকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন তিনি। সেই বিশিষ্ট অভিনেতাকেই বৃহস্পতিবার সন্ধেয় রাজ্য সরকার আয়োজিত টেলি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড-এর অনুষ্ঠানে দেখে ফিসফাস হয়!
এদিন গোধূলি আলাপ’ ধারাবাহিকের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে টেলি সম্মান পুরস্কারও গ্রহণ করেন কৌশিক সেন। সেই দৃশ্য নেটপাড়ায় ছড়িয়ে পড়তেই অভিনেতার প্রতিবাদী সত্ত্বার কথা মনে করিয়ে দেন ‘নীতিপুলিশেরা’। এবার সেই প্রেক্ষিতেই সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-এর কাছে মুখ খুললেন অভিনেতা।
কৌশিক সেন বলছেন, “অনেকগুলো কথাই বলতে হয়। কিন্তু আপাতত বলব সাম্প্রতিককালে আমার কিছু উপলব্ধি হয়েছে। সেই জায়গা থেকেই গতকাল পুরস্কার গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই উপলব্ধি খুব গভীর। বিগত এতগুলো বছর ধরে প্রতিবাদ করার ফলে আমার যে ইমেজ তৈরি হয়েছে, আমার নিজেরই সেই ইমেজটা নিয়ে একটা সন্দেহের জন্ম হয়েছে। আমার নিজেরও প্রচুর খামতি রয়েছে। নিজের দোষ রয়েছে। সেই সন্দেহটা না জন্মালে আমি কিন্তু গতকাল যেতাম না। তবে প্রয়োজনে ভবিষ্যতে আবারও প্রতিবাদী মঞ্চে যাব। আমার যে উপলব্ধি, সেটা নিয়ে মুখ খুললে হয়তো লোকে ব্যঙ্গও করতে পারে।”
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার ভর সন্ধেয় ভরে উঠেছিল ‘ধন ধান্য’ প্রেক্ষাগৃহ। রাজ্য তথ্য ও সংস্ক্তি দপ্তরের উদ্যোগে টেলি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের জন্য উপস্থিত ছিলেন বিনোদুনিয়ার তারকা থেকে রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীরা। রাজনীতির রং সরিয়েও এদিন রঙিন হয়ে উঠেছিল রাজ্য সরকারের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। দীর্ঘদিন বাদে টেলিপর্দায় প্রত্যাবর্তন করেও পয়লা সিরিয়ালের জন্যই টেলি সম্মান পেলেন কৌশিক সেন।
এপ্রসঙ্গে অভিনেতার মন্তব্য, “প্রায় ১২-১৫ বছর বাদে আমি টেলিপর্দায় ফিরেছিলাম। গোড়ায় একটু অস্বস্তি বোধ করেছিলাম। আসলে সিনেমা কিংবা ওটিটিতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে সিরিয়ালের পরিসরে ফিরে আসতে একটু অসুবিধেই হয়। তবে টেলিপর্দা থেকে দীর্ঘদিনের এই বিরতির পর প্রত্যাবর্তনে অনেকটাই সাহায্য করেছে রাজের (চক্রবর্তী) ইউনিট। আর অবশ্যই দর্শকরা। ‘গোধূলি আলাপ’ কোনওদিনই নম্বর দিতে পারেনি সেভাবে ঠিকই। মানে TRP দৌড়ের দিক থেকে দেখতে গেলে, কিন্তু এটা দেড় বছর চলেছিল এবং আমার চরিত্রটা দর্শকদের যে বেশ মনে ধরেছিল, সেটা সোশ্যাল মিডিয়া দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম।”
টেলিসম্মানের নেপথ্যের এই কৃতিত্বটা ধারাবাহিকের দুই পরিচালক এবং যাঁরা গল্পটা লিখেছেন তাঁদেরকেই দিতে চাইলেন কৌশিক। বললেন, “‘গোধূলি আলাপ’-এর দর্শকরা আমার চরিত্রটাকে ভালবেসে ফেলেছিল। পুরস্কার পেয়ে প্রথমেই আমার রাজের টিম আর দর্শকদের কথা মনে হয়েছিল। রাজ চক্রবর্তীর ভাল টিমের জন্যই আমাদের রাজি হওয়া। তাছাড়া আমি মনে করি না যে, আমি এমন কিছু ভাল অভিনেতা, যার জন্য পুরস্কার পেতে পারি। খোলাখুলি বলছি, এটা অ্যাওয়ার্ড উইনিং পারফরমেন্স নয় আমার।”
এরপরই অভিনেতার সংযোজন, “এই মুহূর্তে সিরিয়ালের বন্ধ হয়ে যাওয়ার একটা থ্রেট হচ্ছে টিআরপি। নম্বর না থাকায় অনেক ধারাবাহিকই বন্ধ হয়েছে। কিন্তু ‘গোধূলি আলাপ’ সিরিয়ালের টুকরো মুহূর্তগুলো ফেসবুকে খুব ভাল সাড়া পেয়েছিল। ‘গোধূলি আলাপ’ একটা পার্টিকুলার সেকশনের দর্শক তৈরি করেছিল। শুধু কলকাতা কিংবা পশ্চিমবঙ্গে নয়, দেশের বাইরের দর্শকও ছিল। এমনকী বিকেল ৫টা থেকে সময় বদলে রাত ১০টা হওয়ার পরও তাঁরা যে নিয়মিত সিরিয়ালটা দেখছেন, তা ফেসবুকে দেখেই বোঝা যেত। টেলিপর্দায় কাজ করতে গিয়ে এই অভিজ্ঞতাটা আগে কখনও হয়নি আমার। যাঁরা প্রথম দিন থেকে শেষ দিন অবধি আমাদের পাশে থেকেছে, আমার ভাল লাগা সেই মানুষগুলোর কথা ভেবেই। তাঁদের জন্যই এই সাফল্য।”