সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দুবছর পূর্ণ হতে চলেছে রাশিয়া-ইউক্রেন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের। হামলা পালটা হামলা, মৃত্যুমিছিল কোনও কিছুই বন্ধ হয়নি। দুদেশের সংঘাতে বিপন্ন শৈশব। প্রায় বছর দুই ধরে বন্ধ স্কুল। বাচ্চাদের খেলার মাঠ ফাঁকা। চারদিকে গোলাবারুদের গন্ধ। সাইরেনের কান ফাটানো আওয়াজ। এই পরিস্থিতিতে বাচ্চাদের শৈশব ফেরাতে বিশেষ পন্থা নিয়েছে ইউক্রেনের খারকিভ শহর। যুদ্ধের মাঝেও শিশুদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে মাটির নিচেই শয়ে শয়ে স্কুলে চলছে পড়াশোনা।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে অভিযান শুরু করে রাশিয়া। লড়াইয়ের শুরুতে ইউক্রেনের অন্যতম শহর খারকিভ দখল করে নেয় রুশ বাহিনী। কিন্তু পালটা মার দিয়ে হারানো জমি ফিরে পায় ইউক্রেনীয় ফৌজ। সেনা সরিয়ে নেয় রাশিয়া। তার পর থেকে মাটির নিচেই একটু একটু করে আস্তানা তৈরি করছে খারকিভ। তৈরি করা হয়েছে শিশুদের স্কুলও। যার ফলে ফের যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে শিশুদের হারিয়ে যাওয়া শৈশব। নতুন করে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছে তারা।
[আরও পড়ুন: মালদ্বীপকে সাহায্য করবে দেউলিয়া পাকিস্তান! এ কী বলছে ইসলামাবাদ?]
জানা গিয়েছে, এই দুবছর বাড়িতে বসেই অনলাইনে পড়াশোনা করেছে খারকিভের বছর ছয়ের খুদে নিকা বোন্ডারেনকো। কিন্তু এবার সুযোগ হয়েছে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার। খেলাধুলায় মেতে ওঠার। মাটির নিচে তৈরি স্কুলেই ভর্তি হয়েছে ছোট্ট নিকাকে। ইতিমধ্যে স্কুলে যেতে শুরু করে দিয়েছে সে। খেলাধুলা করছে অন্য শিশুদের সঙ্গেও। নিকার মায়ের কথায়, “অভিভাবকরা নিশ্চিত এখানে তাঁদের বাচ্চাদের কোনও ক্ষতি হবে না। শিশুরা প্রায় দুবছর ধরে ঘরবন্দি ছিল। ওদের জন্য এটা দরকার। চারদিকের এই দমবন্ধ করা পরিবেশে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুদের শৈশব। তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য এটা প্রয়োজন।”
এই মুহূর্তে খারকিভে মাটির নিচে প্রায় ৭০০টি শিশুদের স্কুলকে জায়গা দেওয়া হয়েছে। ছয় বছর পর্যন্ত সব বাচ্চারা সেই স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায়। যুদ্ধ পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে নিরাপত্তার স্বার্থে এখন মাটির নিচে স্থায়ীভাবে স্কুল তৈরি করছে খারকিভ প্রশাসন। মাটি থেকে প্রায় পাঁচ মিটার নিচে তৈরি হচ্ছে শ্রেণিকক্ষ। শুধু স্কুলই নয় অন্যান্য স্থায়ী ব্যবস্থাপনাও তৈরি করছে প্রশাসন। এবিষয়ে খারকিভের মেয়র ইহর তেরেখভ জানিয়েছেন, “আমরা সত্যিই চাই না মাটির নিচে বসতি গড়ে তুলতে। কিন্তু সুরক্ষার স্বার্থে এখন আমাদের এই পদক্ষেপ করতে হচ্ছে। এই যুদ্ধ থামবে। জয় আমাদেরই হবে। কিন্তু ততদিন শিশুদেরও পড়াশোনার অধিকার রয়েছে।”