স্টাফ রিপোর্টার: ডেঙ্গুর উপসর্গের যে ধরাবাঁধা তালিকা তাতে এবার আরও অনেক কিছু জুড়ছে। বদলে যাচ্ছে চিরাচরিত ‘সিম্পটম’-এর ধারণা। তারই ফলশ্রুতি হিসাবে পালটে যাচ্ছে ডেঙ্গু চিকিৎসার ধরনধারণ।
কারও মামুলি জ্বর-গা-মাথার যন্ত্রণা। তো আবার কারও দ্রুত কিডনি, ফুসফুস ও মস্তিষ্কে থাবা বসাচ্ছে ডেঙ্গুর ভাইরাস। মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অর্থাৎ জ্বর, গা ব্যথা থেকেই ডেঙ্গু, এমন ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। এমন অবস্থায় কী করণীয় তার নির্দেশিকা প্রকাশ করে চিকিৎসকদের সতর্ক করল স্বাস্থ্যভবন। স্বাস্থ্যভবনের নির্দেশিকাতে রোগের উপশমের নিদান যেমন দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি বলা হয়েছে, ঠিক কোন সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বেশ কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গুর বিভিন্ন উপসর্গের রোগীর উপর সমীক্ষা চালিয়ে লক্ষণ ও উপশমের নিদান দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৭৬ পাতার গাইডলাইনে ছত্রে ছত্রে বিশ্লেষণ করা হয়েছে ডেঙ্গুর বিভিন্ন উপসর্গের কথা। যেমন জ্বর শুরু হওয়ার ৩-৪ দিনের মধ্যে আমচকা ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত জ্বর ও মাথার যন্ত্রণা হতে পারে। জ্বরের সঙ্গে শুকনো কাশি কিন্তু সর্দি নেই। আবার জ্বরের সঙ্গে কালো পায়খানা, কালো প্রস্রাব, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন ঠোঁট, হাত-পায়ের সন্ধিস্থল ফেটে রক্ত বেরনোর মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। আবার প্রভাব ফেলতে পারে মস্তিষ্কের উপর। রোগীর দৃষ্টিশক্তি কমতে পারে। দিনে তিনবার বা বেশি বমিও, সঙ্গে অসহ্য পেটে ব্যথার মতো উপসর্গও দেখা দিতে পারে কোনও কোনও রোগীর মধ্যে। উল্লেখ্য, এখনও পর্যন্ত চলতি বছরে সংক্রমণ ১,৬০০-র বেশি। গতবছরের তুলনায় কিছুটা কম। তাই এখন থেকেই পরামর্শ স্বাস্থ্যভবনের।
[আরও পড়ুন: রাতভর নিখোঁজ থাকার পর কিশোরের দেহ উদ্ধার পদ্মায়, চাঞ্চল্য মুর্শিদাবাদে]
কোন উপসর্গ দেখে রোগীর পরিবার চিকিৎসকের কাছে যাবেন তাও স্পষ্ট বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যভবনের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ৩-৭দিনের জ্বর, সঙ্গে শরীরের কোনও অংশ থেকে রক্তক্ষরণ ও খিঁচুনি হলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। আরও বলা হয়েছে, রোগীকে পুরো বিশ্রামে থাকতে হবে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় রোগীর রক্তচাপ, স্বাভাবিক হার্ট রেট, প্রস্রাবের পরিমাণ নিয়মিত মাপতে হবে।
স্বাস্থ্যভবনের এক আধিকারিকের কথায়, "প্রতিটি উপসর্গ নির্ভুলভাবে পর্যালোচনা করতে হবে। রোগী স্বাভাবিকভাবে তরল, জল খেতে না পারলে অবশ্যই ফ্লুইড দিতে হবে।" ডেঙ্গুর রোগীকে কখন প্লেটলেট দিতে হবে, তা বিচক্ষণভাবে নিশ্চিত করতে হবে চিকিৎসককে। ১০ হাজারের নিচে প্লেটলেট কমলে এবং রক্ত জমাট না বাঁধলে অবশ্যই প্লেটলেট দিতে হবে। এতো গেল চিকিৎসার ব্যবস্থা। এইসব চিকিৎসা করার পরেও যদি দেখা যায় টানা ৪৮ ঘণ্টা জ্বর নেই, নেই শ্বাসকষ্ট এবং প্লেটলেট ৫০ হাজারের উপরে উঠেছে, তবেই রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া যেতে পারে।