অভিরূপ দাস: অভাবনীয় ভিড়। বলিহারি কাণ্ডজ্ঞান! প্রতি দশজনে চার পাঁচজনের মুখে মাস্ক! বাকিরা ফিশ ফ্রাই, আড্ডা, সেলফিতে মশগুল। মাস্কের সঙ্গে সামান্য সংযোগটুকুও নেই! শনিবারের বারবেলায় ভিড় উপচে পড়ছিল নন্দন চত্বরে। যত না সিনেমা দেখতে, তার চেয়ে অনেক বেশি ‘সেলফি’ তুলতে।
লকডাউনের (Lockdown) আবহে মার্চ থেকে প্রায় ঘরবন্দি আমজনতা। পয়লা বৈশাখ হয়নি, বসন্ত উৎসবও বাতিল, পুজো কোনওভাবে সারা হয়েছে। একের পর এক উৎসব মাঠে মারা গিয়েছে। ‘শিবরাত্রির সলতে’র মতো জমে থাকা এনার্জি ২৬তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে (KIFF2021) খরচ করতে কার্পণ্য করছেন না অনেকেই।
সদ্য প্রয়াত কিংবদন্তি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের (Soumitra Chatterjee) নামে ছবি প্রদশর্নীর উদ্বোধন ছিল এদিন। পরিচালক গৌতম ঘোষ উদ্বোধন করেন। হাজির ছিলেন সৌমিত্রকন্যা পৌলমী বসু। গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় পণ্ডিত রবিশঙ্কর, সংগীতশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে আরও একটি ছবির প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (Prosenjit Chatterjee) ফিতে কাটেন। ছিলেন মুম্বইয়ের পরিচালক অনুভব সিনহা, পরিচালক অরিন্দম শীল। পর্দার তারকাদের হাতের কাছে দেখতেই ছুটে এসেছিলেন সকলে।
[আরও পড়ুন: ব্যোমকেশের চেনা চরিত্রে কীভাবে ‘মগ্ন মৈনাক’ রহস্য ভেদ করলেন অনির্বাণ? পড়ুন রিভিউ]
নন্দন চত্বরে ‘বক্স অফিস’-এর ঘেরাটোপে হয় সিনেমা নিয়ে আড্ডা। বিকেলে সেখানেই ছিলেন পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী, অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী। বেহালা থেকে নন্দনে এসেছিলেন বছর চল্লিশের ঝুমা দত্ত। তাঁর কথায়, “এই উৎসবে সিনেমা জগতের লোকেদের সঙ্গে অহরহ দেখা হয়। অটোগ্রাফ নিই। ছবি তুলি।” সেই ছবির টানই আকর্ষণ। তারকারা নিয়ম মানলেও বাঁধনছাড়া আমজনতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিরিয়াল অভিনেত্রী বেশ আতঙ্কিত। তাঁর কথায় “অনেক লোকই দেখছি মাস্ক পরে নেই। এবারের আবহ অন্যান্যবারের মতো নয়। এখনই চিনে ফেললে সেলফি তোলার আবদার উঠবে। তারপর..।”
সেলফি তোলার জন্য আবার রয়েছে আলাদা সেলফি জোনও। যা কখনই ফাঁকা থাকছে না, একা কিংবা দলবেঁধে ছবি তোলার হিড়িক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিকেলে কলকাতা ইনফরমেশন সেন্টারের (KIC) বাইরে ‘ডেলিগেটস কার্ড’ নেওয়ার লম্বা লাইন ছিল। সে লাইনেও অনেকের মাস্ক ছিল থুতনিতে। কী ব্যাপার দাদা? দর্শকের সটান জবাব,“এখন সব নর্মাল হয়ে গেছে।”
[আরও পড়ুন: বাগদান পর্ব সারলেন নীল ও তৃণা, দেখুন দুই তারকার আংটি বদলের কিছু মুহূর্ত]
অনলাইনে টিকিটের ব্যবস্থা ছিল, তবে সেখানে শত চেষ্টাতেও ডেলিগেটস কার্ড সংগ্রহ করতে পারেননি অনেকে। সাধারণত বছরের শেষ দিকে বাংলার চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন হয়। তবে এবার অতিমারীর কারণে পিছিয়ে জানুয়ারিতে হচ্ছে। কোভিড (COVID-19) স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎসবের আয়োজনে সচেষ্ট আয়োজকরা। মুখ্যমন্ত্রীও করোনা (Corona Virus) নিয়ে সতর্ক থাকার বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তব ছবি বলছে, সে সতর্কতায় কান দেননি অনেকেই। রবিবার, ছুটির দিনে সেই ভিড়ের কী অবস্থা হয় তা নিয়েই চিন্তায় আধিকারিকরা।