চারুবাক: পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় এতদিনে বাংলা সিনেমার দর্শককে মোটামুটি বুঝে গিয়েছেন। খুব একটা ফেল করছেন না তাদের মন পেতে এবং মন জোগাতে। সিনেমার আধুনিক প্রকারণের সঙ্গে চিরাচরিত বাঙালি আবেগের মিশেল ঘটিয়ে কৌশিক একটা বেশ উপভোগ্য ফিলগুড ছবি বানিয়ে ফেলেছেন। ‘কিশোর কুমার জুনিয়র’ প্রসেনজিৎ সেই ঘরানা থেকে সরে আসেননি। উপরন্তু তাঁর হাতে রসদ হিসেবে ছিল কিশোর কুমারের গাওয়া বেশকিছু গানের মণিমুক্তো। কিছু গান কুমার শানু গাইলেও তিনিও তো একসময় সত্যিই ছিলেন কিশোরকণ্ঠী। সুতরাং কৌশিকের চিত্রনাট্যের কলমে ও ক্যামেরায় বেশ মসৃণভাবেই মিশে গেছেন কিশোর কুমার জুনিয়র ও কুমার শানু।
পুরো গল্পটাই ‘গপ্পো’ বটে। ভারত সরকার পাক-ভারত সীমান্তে সম্প্রীতির বাতাবরণ তৈরি করতে জুনিয়র কিশোর কুমারকে আমন্ত্রণ জানায় জয়সলমীরের এক সংগীত অনুষ্ঠানে। আরও একাধিক কণ্ঠীর যেখানে উপস্থিত থাকার কথা। হঠাৎ জয়সলমের বিমানবন্দর থেকে হাইজ্যাক হয়ে যায় সস্ত্রীক জুনিয়র কিশোর কুমার এবং তাঁর যন্ত্রির দল। খবরটা টিভি চ্যানেলে দেখানোর পরও ভারত সরকারের কেন কেমন কোনও হেলদোল দেখা গেল না- সেটা অস্পষ্ট।
[ কেমন হল অস্কারে মনোনীত ছবি ‘ভিলেজ রকস্টার্স’? ]
কৌশিক অবশ্য গপ্পোকে অন্য পথে নিয়ে গেছেন। দুই পাক উগ্রপন্থী, নাকি ডাকাত ফিরোজ (রাজেশ) ও তৌদিকের (মাসুদ) ডেরায় আটকে পড়ে দলটি। ওদের পণ হিসেবে ব্যবহার করতে চায় তারা। কিন্তু স্ত্রী রীতা (অপরাজিতা)-র বাঙালি রান্নার গুণ এবং কিশোর কুমারের গানের প্রতি ফিরোজ এবং তার প্রয়াত বাবা (?)-র প্রীতি কেমনভাবে পুরোদলটাকে শেষ পর্যন্ত বাঁচিয়ে ফেরে, সেটাই চিত্রনাট্যের আকর্ষণ। তবে এরই মধ্যে তৌদিকের মহম্মদ রফি প্রীতি এবং জুনিয়র কিশোর কুমারের সহকারী বাঁশিওয়ালা খোকনের (লামা) রফিকণ্ঠী হয়ে ওঠার নাটক জমজমাট। বন্দিপর্ব একটু দীর্ঘ লাগলেও অপ্রয়োজনীয় নয়। আর ‘কী হয়, কী হবে’ আশঙ্কার সঙ্গে কিশোরের গাওয়া হিন্দি-বাংলা গানের নির্বাচন সত্যিই নাটক তৈরিতে সাহায্য করেছে। বেশ মজার ভঙ্গিতেই কৌশিক রীতে-কিশোরের রাগ-ভালবাসার পর্বগুলো এনেছেন। সদ্য তরুণ মর্ডান ঋষির (ঋতব্রত) সঙ্গে মাচা শিল্পী হওয়ার জন্য বাবার বিরোধ পর্ব শেষ পর্যন্ত ফিলগুড পর্বে পৌঁছয়। যখন ঋষি নিজে বাবার গাওয়া ‘সেদিন আকাশে ছিল কত তারা’ গানটি গেয়ে ওঠে সংবর্ধনা সন্ধ্যায়, তখন দর্শকের মন ও আবেগকে ছোঁয়ার জন্য জুনিয়র কিশোরকে নির্বাক ও অসুস্থ না দেখালেও চলত।
না। আমরা জানি কিশোর কুমার জুনিয়র, না গৌতম ঘোষ, না কুমার শানু কিংবা অন্য কারও বায়োপিক নয়। সবটাই সাজানো। ফিকশনাইজড। তবে মাঝে মাঝে দর্শক কিশোর কুমারের গায়নভঙ্গির সঙ্গে অভিনেতা প্রসেনজিতের অভিনয় স্টাইলের মিল খুঁজে পেলে হয়তো কিশোরের বায়োপিক কেউ কেউ মনে করতে পারেন। সেটা অবশ্য বারবার দৃশ্যের মধ্যে ভাঙচুর করে কৌশিক বুঝিয়েও দিয়েছেন।
[ ‘মন্টো’র চাবুক অসহ্য বলেই সার্থক নন্দিতার প্রতিবাদ ]
অভিনয়ে, অস্বীকার করে লাভ নেই, কিশোর কুমারের স্টেজ পারফরম্যান্সটাই অনুসরণ করেছেন প্রসেনজিৎ। তবে বাকি সময় ছেলের সঙ্গে অভিমানী হয়ে ওঠায়, স্ত্রীর সঙ্গে সাংসারিক পরিবেশে এবং নিজের স্টাইলেই রয়েছেন। অবাক লাগলেও বোধহয় এই প্রথম তিনি বুকের ঘন লোম উঠিয়ে ফিজিক্যালিও কিশোর হতে চাইছিলেন। রীতার চরিত্রে অপরাজিতা আঢ্য তাঁর একান্ত নিজস্ব ঘরোয়া বাঙালিপনা দিয়ে আন্তরিক ‘মা-জি’। রাজেশ-মাসুদ জুটি ভাল। ঋতব্রত-লামাও দারুণ তবলচির কাজ করেছেন।
থ্রিলার এলিমেন্ট, উৎকণ্ঠা, আবেগ এবং জনপ্রিয় গানের সমাহারে কিশোর কুমার জুনিয়র সত্যিই উৎসবের ছবি। তখন আর ভাবনার ছবি হচ্ছে কোথায়! মজা আর উৎসবেই ক’টা দিন কাটুক।
The post পুজোয় ফিরল কিশোর আবেগের গপ্পো ‘কিশোর কুমার জুনিয়র’ appeared first on Sangbad Pratidin.