সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আইপিএলে কেকেআরের বিপর্যয় নতুন কিছু নয়। আইপিএল যখন তার শৈশবে, কেকেআরের হারাটাই তখন নিয়ম ছিল। ব্যতিক্রম নয়। জন বুকানন প্রবর্তিত মাল্টিপল ক্যাপ্টেন্সি থিওরি, বাংলার শ্রেষ্ঠ ক্রিকেট আইকন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে সরিয়ে দেওয়া, আজ পর্যন্ত কম বিতর্কের আগুনে দগ্ধ হয়নি কেকেআর। কিন্তু সেই সময়েও সম্ভবত এতটা বিভ্রান্তিকর, এতটা ঢাকগুড়গুড় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি, শুক্রবারের রাজস্থান রয়্যালস যুদ্ধের প্রাক্ মুহূর্ত কেকেআরে যা হচ্ছে। টিম কেকেআরের প্রতিটা মুহূর্ত, ক্রিকেটারদের প্রতিটা পদক্ষেপ ফেলা হচ্ছে অনুবীক্ষণ যন্ত্রের তলায়, খোঁজার চেষ্টা চলছে তার অর্ন্তনিহিত অর্থ। দোষটা কেকেআরেরই।
[আরও পড়ুন: প্রকাশিত আইপিএল প্লে-অফের সূচি, ফাইনাল ম্যাচ পেল হায়দরাবাদ]
টিমকে এমন নিশ্ছিদ্র ঘেরাটোপে তারা বন্দি করে ফেলেছে যে, সেই লৌহকঠিন বর্ম ভেঙে নিরীহ তথ্যেরও বাইরে বেরনোর উপায় থাকছে না। এবং তার সঙ্গে যথাযথ ভাবে জুড়ে যাচ্ছে নানাবিধ জল্পনা, প্লেয়ারের নিজের টিমকেই মৃদু ‘খোঁচা’ দেওয়া কোট! বুধবার বিকেল চারটে থেকে কেকেআরের প্র্যাকটিস ছিল ইডেনে। ম্যাচের আগের দিন পিচ দেখার যে ফর্ম্যাল ব্যাপারস্যাপারগুলো হয়, সেসবই চলছিল ইডেনে। পিচের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন কেকেআরের হেড কোচ জাক কালিস এবং সাইমন কাটিচ। দু’জনের টুকটাক কথাবার্তাও যে চলছে, সেটাও দূর থেকে প্রত্যক্ষ করা গেল। তা হঠাৎই কিছুক্ষণ পর ইডেনের মাঠকর্মীদের একজন প্রায় যেচে এসে বলে গেলেন যে, তিনি কালিস-কাটিচকে বলতে শুনেছেন টিমে বিভাজন নিয়ে! কালিসরা নাকি বলছিলেন যে, টিমে নাকি প্রবল অশান্তি চলছে। টিম এখন দু’ভাগ! তথ্যের সত্য-মিথ্যে যাচাই করা গেল না।
কিন্তু প্রত্যক্ষ শ্রোতা ক্রমাগত দাবি করে গেলেন যে, তাঁর শুনতে নাকি এতটুকু ভুল হয়নি! কার্লোস ব্রেথওয়েট আর একজন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ককে কেকেআর এ দিন নিয়ে এসেছিল সাংবাদিক সম্মেলন করতে। প্রেস কনফারেন্স করতে ব্রেথওয়েট আসছেন শোনামাত্র উপস্থিত মিডিয়ার মধ্যে গুঞ্জন শুরু হল, সবাইকে ছেড়ে হঠাৎ ব্রেথওয়েট কেন? তিনি তো খেলছেনই না। বৃহস্পতিবার ম্যাচের আগে আচমকা কেকেআর থেকে কোনও প্রেস রিলিজ এসে উপস্থিত হবে না তো যে, শেষ চারটে ম্যাচে নাইট ক্যাপ্টেন্সি করবেন ক্যারিবিয়ান টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক? ব্রেথওয়েটের সাংবাদিক সম্মেলনে বলা দু’টো কথা নিয়ে পরে নিরন্তর চর্চা চলল।
[আরও পড়ুন: নাইটদের ম্যাচ দেখতে মাঠে এসে এ কী করলেন মদ্যপ অভিনেত্রী!]
ব্রেথওয়েটকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, টিমের সেরা পারফর্মার আন্দ্রে রাসেলকে কেন ব্যাটিং অর্ডারে উপরের দিকে পাঠানো হচ্ছে না? ব্রেথওয়েট হাসতে হাসতে প্রথমে জিজ্ঞাসা করলেন, “প্রশ্নটা আমাকে করছেন? আমাকে?” তারপর বললেন, “কিন্তু রাসেলের মতো যখন একজন টিমে আছে, যে কিনা ম্যাচের রং সব পাল্টে দিচ্ছে, তখন তো টিমের উচিত কোথায় ওকে সবচেয়ে ভাল ব্যবহার করা যায়, সেটা ভাবা। আমি নিশ্চিত, ক্যাপ্টেন-কোচ ভাববে।” দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, কেকেআরের ‘লিডারশিপ গ্রুপে’ তাঁর নিজের থাকা নিয়ে। শুনে ব্রেথওয়েট বললেন, “আমাদের টিমে কোনও লিডারশিপ গ্রুপ নেই। এমন নয় যে, অমুকে নেতা, তমুকে নয়। কী জানেন, নেতৃত্বটা ভেতর থেকে আসে। ওটা জন্মগত ব্যাপার। যে লিডার সে বলে দেবে, কীভাবে কী করতে হবে? আমি যা সব সময় করি।” যারপর বলাবলি চলল, এটা বলে কী বোঝাতে চাইলেন ব্রেথওয়েট? যে তিনিই প্রকৃত অধিনায়ক? কার্তিক নন?
টানা পাঁচ ম্যাচ হার-উত্তর কেকেআরকে দেখলে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া উত্তর কলকাতার একান্নবর্তী পরিবারগুলোর মতো লাগবে। যে পরিবারের বড় ছেলে মুম্বইয়ে। ছোট ছেলে কলকাতায়। আর কোনও এক দিন পুরো পরিবারের একত্রিত হওয়ার আশায় দিন গুণছেন বৃদ্ধ পিতা। এ দিন কেকেআর নেটে কালিসকে দেখে বনেদি পরিবারের ‘বৃদ্ধ পিতা’-ই লাগছিল! যে পরিবারের ‘বড়’ ছেলে কার্তিক মুম্বইয়ে। মেজ-ছোট দুই ছেলে আন্দ্রে রাসেল (যিনি এ দিন আবার প্র্যাকটিসেই এলেন না) এবং সুনীল নারিন কলকাতায়। মুম্বইয়ে কেন গত তিন দিন ধরে পড়ে ছিলেন কার্তিকরা? ভারতের বাণিজ্যনগরীতে খোঁজ চালিয়ে যা জানা গেল, শুনলে স্তম্ভিত লাগবে। এত দিন শোনা যাচ্ছিল, ইডেনের প্র্যাকটিস ব্যবস্থা, প্র্যাকটিস পিচ- কোনও কিছু নিয়ে খুশি নয় কেকেআর। বলা হচ্ছিল, যে পিচে তারা ম্যাচ খেলছে সেই পিচ তারা প্র্যাকটিসে পাচ্ছে না। তাই মুম্বই। এ দিন জানা গেল, সেটা শুধু একটা কারণ। থানের কেকেআর অ্যাকাডেমিতে গত দু’দিন ধরে কার্তিকরা যে প্র্যাকটিস করেছেন, তার একটা কারণ ইডেনে পছন্দ মতো প্র্যাকটিস ব্যবস্থা না পাওয়া।
মুম্বইয়ের কেকেআর অ্যাকাডেমিতে যে অসুবিধেটা নেই। কিন্তু সেটা শুধুই একটা কারণ। দ্বিতীয় কারণটা নাকি কুসংস্কার! আইপিএল শুরুর আগে নাকি মুম্বইয়ের কেকেআর অ্যাকাডেমিতে প্র্যাকটিস করে শহরে ঢুকেছিল টিম। যারপর তারা পরপর তিনটে ম্যাচ জিতেছিল। কেকেআর নাকি তাই থানের কেকেআর অ্যাকাডেমিতে ফিরে গিয়েছে, যাতে দুঃসময় কাটে! সাধারণ বোধবুদ্ধিতে সত্যিই যার ব্যাখ্যা মেলে না। খেলা ইডেনে, আর ‘কুসংস্কারগ্রস্ত’ হয়ে কার্তিকরা কিনা গত দু’দিন প্র্যাকটিস করলেন মুম্বইয়ের থানেতে! আর যত এ সব ঘটছে, যত এ সব তথ্য দেওয়াল ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে, তত যেন এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যাচ্ছে কেকেআর।
The post লাগাতার হারের জের, বিভ্রান্তির কেকেআরে এখন কুসংস্কারই ভরসা appeared first on Sangbad Pratidin.