ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: কলকাতা পুরোভটের ফলাফল (KMC Election Results) যে একপেশে হতে চলছে সেটা ভোটের আগেই দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। ভোটের ময়দানে সেভাবে দেখাই যায়নি বিরোধীদের। বিজেপি একেবারেই লড়াইয়ে ছিল না। কয়েকটি ওয়ার্ডে বাম এবং কংগ্রেস (Congress) কিছুটা লড়াই দেওয়ার চেষ্টা করলেও, তা নগণ্য। তৃণমূলের (TMC) যেসব হেভিওয়েট এবার ভোটের ময়দানে নেমেছিলেন, তাঁদের অধিকাংশের কাছেই লড়াইটা ছিল নিজের বিরুদ্ধেই। আগেরবার যে ভোটের ব্যবধান ছিল সেটা টপকে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ ছিল। এবং হলও তাই। তৃণমূলের সব হেভিওয়েট প্রার্থীই এই পুরভোটে জয়ী হয়েছেন। এবং শুধু জয়ী হয়েছেন তাই নয়, একেক জন জয়ী হয়েছেন রেকর্ড ভোটের মার্জিনে।
এবারের পুরভোটে তৃণমূল টিকিট দিয়েছিল পাঁচজন বিধায়ক এবং একজন সাংসদকে। বস্তুত, শাসকদল শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিল যে, পুরসভার উন্নয়ন মডেলে প্রভাব ফেলতে পারেনি প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা। সম্ভবত সেকারণেই গত পুরবোর্ডে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন অর্থাৎ বিদায়ী মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim), ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ, চেয়ারপার্সন মালা রায়-সহ অধিকাংশ হেভিওয়েটকেই টিকিট দিয়েছে শাসকদল। এবং তাঁরা প্রত্যেকেই জয়ী হয়েছেন। ফিরহাদ হাকিম জিতেছেন প্রায় ১৫ হাজার ভোটে। অতীন ঘোষ (Atin Ghosh) জিতেছেন ১০ হাজার ৭৬৫ জন। মালা রায়ের ৮৮ নং ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা কম। তাতেও তিনি জয়ী হয়েছেন বিরাট ব্যবধানে।
[আরও পড়ুন: KMC Election: পুরভোটে দলনেত্রীকে সেরা উপহার! মমতার ব্যবধানকে টপকে গেলেন ভ্রাতৃবধূ কাজরী]
তৃণমূলের অন্যান্য হেভিওয়েটদের মধ্যে ১৩১ নং ওয়ার্ডে রত্না চট্টোপাধ্যায় ১০ হাজারের বেশি ভোটে, দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূলের সভাপতি দেবাশিস কুমার (Debashis Kumar) ৮৫ নং ওয়ার্ডে প্রায় ১০ হাজার ভোটে, বিদায়ী মেয়র পারিষদ তারক সিং ৮ হাজারের বেশি ভোটে, বিধায়ক দেবব্রত মজুমদার ৯ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছেন। যে ওয়ার্ডের দিকে গোটা রাজ্যের নজর ছিল, সেই ৭৩ নং ওয়ার্ডেও বিরাট ব্যবধানে জিতেছেন মুখ্যমন্ত্রী ভ্রাতৃবধূ কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের অন্য হেভিওয়েটের মধ্যে আইনজীবী বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়, বিশ্বরূপ দেরা জয়ী হয়েছেন।
[আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: ‘দেশকে পথ দেখাবে কলকাতা তথা বাংলা’, পুরভোটে সবুজ ঝড়ে প্রতিক্রিয়া আপ্লুত মমতার]
ঘাসফুলের এই বিরাট ঝড়ে স্বভাবতই ল্যাজেগোবরে অবস্থা বিরোধী শিবিরের। বাম-কংগ্রেস-বিজেপি (BJP) মিলিয়ে সাকুল্যে বিরোধীরা জিতেছে ৭টি ওয়ার্ড। এমনিতেই বিরোধীদের মধ্যে তেমন কোনও হেভিওয়েট নেতা ভোটের ময়দানে নামার সাহস দেখাননি। পুর রাজনীতিতে যারা পরিচিত বিরোধী মুখ, তাঁদের কেউ কেউ ভোটে লড়লেও হারতে হয়েছে অধিকাংশকে। বিজেপির সুনীতা ঝাওয়ার, ব্রজেশ ঝাঁ, কংগ্রেসের প্রকাশ উপাধ্যায়রাও তৃণমূলের দাপটে নিজেদের ওয়ার্ডে হেরেছেন। হারতে হয়েছে সিপিএমের অধিকাংশ বিদায়ী কাউন্সিলরকে। কোনওক্রমে টিমটিমে প্রদীপের মতো বিরোধী শিবিরের মুখ হয়ে জ্বলছেন বিজেপির মীনাদেবী পুরোহিত, কংগ্রেসের সন্তোষ পাঠক (Santosh Pathak) এবং সিপিএমের (CPIM) নন্দিতা দাস।