কৃষ্ণকুমার দাস: পুজোর পরেও প্রতিমা দর্শন! হ্য়াঁ, ঠিক এমনটাই ঘটতে চলেছে শহরে। এবার কলকাতার (Kolkata Durga Puja) সেরা প্রতিমাগুলোকে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ‘অঙ্কুর’—এর মণ্ডপের বিস্তার দেখতে পাবেন বিবেকানন্দ পার্কের শিশু উদ্যানে। ‘অপরাজিতা’ থিমে তামা ও পিতলে তৈরি ৮০ কেজির ভারী প্রতিমা বসছে দক্ষিণ কলকাতার নামী এক উদ্যানের ঈশান কোণে। আলিপুরের ৭৮ পল্লির ২৫০ কেজি ওজনের কাঁচা লোহার মূর্তিটিও সংরক্ষিত করা হচ্ছে ‘মা ফিরে এল’ মিউজিয়ামে। শারদীয়া শেষ হলেও মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের জেরে সারাবছরের জন্য শহরজুড়ে ফিরে আসছে ‘কলকাতার সেরা পুজো’। সংরক্ষিত অধিকাংশ প্রতিমা তামা, পিতল, লোহা ও ফাইবার মিশ্রণে তৈরি। সংরক্ষিত ওই মূর্তিগুলি বছরের পর বছর অবিকৃত থাকবে বলে শিল্পীদের দাবি। পুরমন্ত্রী জানিয়েছেন, “আপাতত পাঁচ—ছয়টি মূর্তি সংরক্ষিত হবে। ‘মা ফিরে এল’ মিউজিয়ামের পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন পার্কে পুজোর প্রতিফলন ঘটবে।”
[আরও পড়ুন: মৌমাছির কামড়ে মৃত্যু বৃদ্ধের, তীব্র আতঙ্ক ছড়াল দুর্গাপুরে]
পুজো উদ্বোধনের দ্বিতীয় দিনেই গড়িয়াহাট হিন্দুস্থান ক্লাবের ‘অঙ্কুর’ থিম দেখে আপ্লুত হয়ে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। মানুষের প্রাণের ‘অঙ্কুর’ বাঁচাতে পরিবেশের ‘অঙ্কুর’ সবুজ রক্ষা করা যে শুধু জরুরি নয়, অবশ্যই বাধ্যতামূলক তা তুলে ধরেছিল হিন্দুস্থান পার্ক। নবদ্বীপের শিল্পী নিমাই পালের তৈরি মৃন্ময়ী মূর্তি সেদিনই সংরক্ষণের পাশাপাশি মণ্ডপকে শহরের পার্কে উপস্থাপনের লক্ষ্যে পুরসভার মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিমকে নির্দেশ দেন মমতা। পুজো শেষে সেই প্রতিমা নিয়ে রবীন্দ্র সরোবরে পৌঁছে কিছুটা বিপাকে পড়েছেন পুজোর সভাপতি মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। কারণ, সরোবরে কেএমডিএ—র যে ‘মা ফিরে এল’ মিউজিয়াম, সেখানে ওই প্রতিমা রাখার জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে অস্থায়ী তাবু টাঙিয়ে, প্লাস্টিক মুড়ে প্রতিমা রেখে এসেছেন ক্লাবের সদস্যরা। সরকারি ছুটি শেষে কেএমডিএ নতুন মিউজিয়াম শেড তৈরি করলে সেখানেই অঙ্কুরের পাশাপাশি আরও কিছু প্রতিমা ঠাঁই পাবে। বাঁশ ও বেত দিয়ে আমাজন জঙ্গল তৈরি করা মণ্ডপের অংশ দিয়ে বিবেকানন্দ পার্কে শিশুদের জন্য বিশেষ উদ্যান নির্মাণ হচ্ছে বলেও পুরমন্ত্রী জানান।
ভবানীপুরের চক্রবেড়িয়া সবর্জনীনের পুজো নারীশক্তির প্রকাশ ‘অপরাজিতা’ উদ্বোধনে গিয়ে বিস্মিত মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে প্রতিমা সংরক্ষণের নির্দেশ দেন। মহাভারতে দ্রৌপদীকে কৌরবদের লাঞ্ছনা থেকে বর্তমানে নারীর অত্যাচারের নানা ঘটনা উঠে এসেছিল মণ্ডপে। অর্জুনের পাঞ্চজন্য শঙ্খের ভিতর তামা ও পিতল দিয়ে তৈরি ৮০ কেজি ওজনের দেবী দুর্গার আবির্ভাবদৃশ্য ফের শহরের নামী পার্কে বসছে। পুজোর সভাপতি বিদায়ী কাউন্সিলর অসীম বসু জানান, “মা দুর্গাই সমস্ত লাঞ্ছনা—বঞ্চনার প্রতিবাদী মুখ, সংগ্রামের প্রেরণা। তাই তামা—পিতলের মূর্তিটি সারাবছরের জন্য পার্কে বসছে।” কোচবিহারের নির্বাচনী সফর শেষে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম শহরে ফিরলে পার্ক এবং জোন চূড়ান্ত হবে বলে অসীম জানান। আলিপুর ৭৮ পল্লির সভাপতি বিপ্লব মিত্ররা প্রায় আড়াই টন ওজনের লোহার মা দুর্গাকে দশমীর পর সরোবরে পৌঁছে দিয়েছেন। থিম ছিল কুহেলিকা। বললেন, “তিন বছর আগে দর্শকনন্দিত প্রতিমাও সংরক্ষিত হয়েছিল। এবারও কিন্তু কুহেলিকায় লোহার দুর্গা দেখতে ভিড় উপচে পড়েছে।”