স্টাফ রিপোর্টার: জন্মের পর থেকে কেউ দাঁড়াতে পারে না। কাটা গাছের গুঁড়ির মতো পড়ে থাকে বিছানায়। দ্য ক্রিয়েটাইন ফসফোকাইনেস আইসোএনজাইমস বা সিপিকে লেভেল টেস্ট করতে গিয়েই ধরা পড়ল সব। শিশুরা আক্রান্ত যে ব্যাধিতে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাকে ‘রেয়ার ডিজিজ’-এর তালিকায় ফেলেছে। এই বিরল অসুখগুলো সবই জিনঘটিত।
সমীক্ষা বলছে, রাজ্যে অধিকাংশ শিশুদের বিরল রোগ ধরা পড়ে সাত বছর বয়সে। দেরি হয় চিকিৎসা শুরু হতে। আগে থেকে চিকিৎসা শুরু করা গেলে হয়তো এড়ানো যেত জটিলতা। সেই জটিলতা এড়াতেই তৈরি হচ্ছে নতুন কমিটি। ইন্ডিয়ান প্রেডার উইল সিন্ড্রোম অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের বৈঠক হয়েছে। ইন্ডিয়ান প্রেডার উইল সিন্ড্রোম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শিখা মেথারামানি জানিয়েছেন, নতুন কমিটিতে থাকবেন পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ তথা ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ।
ক্রমশ বাড়ছে বিরল অসুখের রোগী। তথ্য বলছে, ডুসান মাসকুলার ডিসট্রফি নামক পেশির বিরল রোগে আক্রান্ত কলকাতার দুশো শিশু। তাদেরই দু’জন বীথিকা ঘোষের দুই ছেলে চিরঞ্জীব ঘোষ আর ঋতুল ঘোষ। মঙ্গলবার অর্গানাইজেশন ফর রেয়ার ডিজিজ ইন্ডিয়ার অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন বীথিকা। বীথিকাদেবীর কথায়, ‘‘আমার দুই ছেলেই হাঁটতে পারে না। চলাফেরা করে হুইল চেয়ারে। জন্মের সময় বোঝা যায়নি। ১৮ মাস পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। আচমকাই দেখা যায়, দাঁড়াতে পারছে না।’’ চিকিৎসকরা বলছেন আগে ধরা পড়লে চিকিৎসা শুরু করা যেত। কাটত চিন্তা।
[আরও পড়ুন: অ্যাডিনো ভাইরাস-নিউমোনিয়ার জোড়া ফলা, কলকাতায় মৃত্যু আরও ৪ খুদের]
এমন চিন্তা কাটাতেই কাজ শুরু করেছে রাজ্য। অনুষ্ঠানে উপস্থিত যুব তৃণমূল (TMC) নেত্রী প্রিয়দর্শিনী ঘোষ জানিয়েছেন, পুরসভার প্রাইমারি হেল্থ কেয়ার সেন্টার রয়েছে প্রতিটি ওয়ার্ডে। পোলিও-সহ শিশুদের একাধিক টিকাকরণের কাজ করে এই আরবান প্রাইমারি হেল্থ সেন্টারগুলি। তাদের নিজস্ব আশাকর্মী, নার্স রয়েছে। তারা যদি ১৪৪টি ওয়ার্ডের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেয় বিরল অসুখে আক্রান্ত কেউ আছে কি না, সেক্ষেত্রে একটি ডেটাবেস তৈরি করা সম্ভব হবে। বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুর খোঁজ মিললে চিকিৎসা শুরু করা যাবে দ্রুত। পিজি হাসপাতালে জেনেটিক টেস্টিং শুরু হয়েছে। কিন্তু এই টেস্টিংয়ের জন্য একত্রে বারোজন শিশুর প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে একজন অভিভাবক একা এলে তাঁকে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়। বিরল রোগে আক্রান্ত কারা পুরসভার হাতে সে তালিকা থাকলে তাদের একত্রে এসএসকেএমে পাঠানো সম্ভব।
অর্গানাইজেশন ফর রেয়ার ডিজিজ ইন্ডিয়ার কলকাতার কোঅর্ডিনেটর ডা. দীপাঞ্জনা দত্তর আশঙ্কা, প্রতি ২০ জনে প্রায় একজন আক্রান্ত এই রোগে। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বাস্থ্যসাথী সাহায্য করছে বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুদের। ইতিমধ্যেই রাজ্যের ৬ বিরল রোগাক্রান্ত শিশুর অস্ত্রোপচার হয়েছে স্বাস্থ্যসাথীতে। অর্গানাইজেশন ফর রেয়ার ডিজিজ ইন্ডিয়া আয়োজন করছে ‘রেস ফর সেভেন।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সূত্রে খবর, এমন বিরল অসুখের সংখ্যা প্রায় সাত হাজার, সেদিকে নজর রেখেই আয়োজন করা হয়েছে এই সাত কিলোমিটার হাঁটা, দৌড়নো অথবা সাইক্লিংয়ের। অনুষ্ঠানে ছিলেন ডা. দীপাঞ্জনা দত্ত, শিখা মেথারামানি, বসিরহাটের সাংসদ নুসরত জাহান, গায়ক অনুপম রায়।