সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভাই-বোনের অমূল্য সম্পর্ককে অটুট রাখে রাখি। ভাইকে ভালবেসে তার হাতে রাখি বাঁধে বোন। আর সারাজীবন বোনকে নিরাপদে রাখার প্রতিশ্রুতি দেয় ভাই। এভাবেই রক্তের সম্পর্ক ও ভালবাসা নিবিড় হয়। দীর্ঘকাল থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে এই প্রথা। শুধু ভারতেই নয়, রাখি বন্ধন উৎসব পালিত হয় নেপাল, পাকিস্তান, মরিশাসেও। শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমার দিন ভাই ও দাদাদের হাতে বিশ্বাসের ধাগা বেঁধে মিষ্টিমুখ করে বোন ও দিদিরা। বহু যুগ ধরে এই রাখি উৎসব পালনের নেপথ্যে কিন্তু লুকিয়ে রয়েছে নানা পৌরাণিক কাহিনি। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখির বাঁধনে বন্ধুত্বকে বাঁধতে চেয়েছিলেন। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সৌভ্রাতৃত্ববোধ জাগিয়ে তোলাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। কিন্তু ভাই-বোনের রাখি উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে হিন্দু ধর্মের নানা কাহিনি। এবারের রাখি উৎসবের আগে চলুন একটু আলোকপাত করা যাক সেদিকে।
[ধৈর্য ও বিশ্বাসেই মেলে ঈশ্বরের সান্নিধ্য, মা সারদার বাণী শান্ত করে মনকে]
সংস্কৃত শব্দ রক্ষা বন্ধন থেকেই প্রচলিত হয়েছিল রাখি কথাটি। শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে এর তাৎপর্য। রক্ষার বাঁধন। হিন্দু এবং শিখদের মধ্যে এই উৎসব ভাই-বোনেরা পালন করলেও জৈন ধর্মাবলম্বিরা আবার একটু অন্যভাবে এই উৎসবে শামিল হন। তাদের মধ্যে আবার জৈন পুরোহিত ভক্তদের হাতে ধাগা বেঁধে দেন এই দিনে।
এবার পৌরাণিক কাহিনির দিকে নজর রাখা যাক। একবার সুর ও অসুরদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। দেবতাদের হয়ে লড়াই করছিলেন দেবরাজ ইন্দ্র। তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন পরাক্রমশালী অসুর বলী। দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ চললেও কোনও পক্ষই জিততে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে ইন্দ্রের স্ত্রী শচী ভগবান বিষ্ণুর শরণাপন্ন হন। বিষ্ণু তাঁকে একটি পবিত্র সুতোর ধাগা দেন। সেই ধাগা ইন্দ্রর হাতে বেঁধে দেন শচী। তারপরই অসুরদের পরাস্ত করে অমরাবতী রক্ষা করেন ইন্দ্র। এই প্রথা মেনে তাই বহু যুগ আগে স্বামী যুদ্ধে যাওয়ার আগে তাঁর হাতে এই ধাগা বেঁধে দিতেন স্ত্রীরা।
[স্বপ্নে সাপ দেখেছেন? জানেন ঘুমের মধ্যে এ কীসের ইঙ্গিত?]
ভগবৎ পুরাণের আরও একটি কাহিনি প্রচলিত আছে। একবার ভগবান বিষ্ণু বলীকে হারিয়ে তৃ-ভুবন জয় করেছিলেন। হারের পর বিষ্ণুকে নিজের অট্টালিকায় থাকার অনুরোধ জানিয়েছিল বলূ। প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান বিষ্ণু। তবে লক্ষ্মীদেবী চেয়েছিলেন স্বামী বিষ্ণু যেন শীঘ্রই বাড়ি ফেরেন। তাই বুদ্ধি করে বলীকে ভাই সম্বোধন করে তার হাতে রাখি বাঁধেন লক্ষ্মী। আর উপহার হিসেবে চেয়ে নেন বিষ্ণুকে। ভাই হিসেবে কথা রাখতেই হয় বলীকে।
আরও একটি প্রচলিত কাহিনি রয়েছে গণেশকে নিয়ে। গণেশের দুই পুত্র শুভ ও লাভ। কোনও বোন না থাকায় তাঁদের ভীষণ আক্ষেপ ছিল। পুত্রদের মুখে হাসি ফোটাতে সন্তোষীর সৃষ্টি করেছিলেন গণেশ। রাখিবন্ধনের দিনই নিজেদের বোনকে পেয়েছিলেন শুভ ও লাভ। মহাভারত অনুযায়ী, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগে পঞ্চ পাণ্ডবের স্ত্রী দ্রৌপদী কৃষ্ণের হাতে রাখি বেঁধেছিলেন। অন্যদিকে নিজের নাতি অভিমন্যুর রক্ষা কামনা করে রাখি বাঁধেন পঞ্চপাণ্ডবের মা কুন্তী।
The post এসব পৌরাণিক কাহিনি মেনেই আজ পালিত হয় রাখিবন্ধন উৎসব appeared first on Sangbad Pratidin.