কাজ করতে করতে হঠাৎ করে মাথাব্যথা বা বমি ভাব? কিংবা বাড়ির শিশুটি খেলাধূলা করে ফিরে কিংবা পড়তে বসলেই মাথা ব্যথার কথা বলছে? তাহলে এখনই সাবধান হওয়া উচিত। কারণ চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন এগুলি সবই কিন্তু মাইগ্রেনের লক্ষণ।
ভিন্ন উপসর্গ দেখে কীভাবে চিনবেন মাইগ্রেনকে? কষ্ট কমাতে যোগাসনের ভূমিকাই বা কী? জীবনধারার পরিবর্তন করে কি ছোট থেকে বড় সবাই মাইগ্রেনের কষ্ট থেকে মুক্তি পাবেন? সেই সব কিছুই জানালেন মুকুন্দপুরের এন এইচ আর এন টেগোর হাসপাতালের স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অম্লান মণ্ডল৷ লিখছেন মণিদীপা কর।
বড়দের ক্ষেত্রে:
বড়দের ক্ষেত্রে দেখা যায় মাইগ্রেনে মাথার বাঁ দিক থেকে ব্যথার সূত্রপাত হয়৷ ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে হেমিক্রেনিয়াল পেইন৷ ব্যথার সঙ্গে বমি ভাব, মাথা ঘোরা, আলো ও শব্দে কষ্ট হওয়ার মত উপসর্গ দেখা দেয়৷ এগুলি দেখা দিলেই বুঝবেন আপনি মাইগ্রেনে আক্রান্ত৷ তবে বড়দের মধ্যে ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় মাথাব্যথ্যার সঙ্গে ঘাড়েও ব্যথা হয়৷ মূলত ২৪ থেকে ৩০ বছর বয়সি মহিলাদের মধ্যেই মাইগ্রেন হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি৷ সমীক্ষায় আবার দেখা গেছে ৪০ থেকে ৪৫ বছর বয়সি ৭৫০ জনের মধ্যে ৫ জন মাইগ্রেনে আক্রান্ত হন৷
‘পার্টটাইম পলিটিশিয়ান’ প্রিয়াঙ্কাকে গুরুত্ব না দেওয়ার পরামর্শ বিজেপির
ছোটদের ক্ষেত্রে:
ছোটদের মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে বড়দের উপসর্গের সঙ্গে বিশেষ মিল পাওয়া যায় না৷ দেখা গিয়েছে, যে শিশুদের ছ’মাস থেকে দেড় বছরের মধ্যে পেটে ব্যথা হয়, সঙ্গে বমির প্রবণতা রয়েছে অথচ নির্দিষ্ট কোনও রোগ ধরা পড়ে না৷ পরবর্তী কালে তাদের অধিকাংশেরই মাইগ্রেন শনাক্ত হয়৷ সেই কারণে এই উপসর্গকে ‘প্রিমনিটরি সিম্পটম’ বলে৷ ছোটদের মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে মাথাব্যাথার ধরন কিছুটা আলাদা৷ মাথার দু’দিক থেকে বা সামনের দিকে ব্যথা হয়৷ সেই সঙ্গে মাথা ঘোরে৷ এই উপসর্গগুলি সাধারণত শুরু হয় পড়তে বসলে বা খেলাধূলা করার পর৷ নিয়মিত এমন হলে বাচ্চার দুষ্টুমি, ফাঁকিবাজি মনে না করে সমস্যাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত৷
শনাক্তকরণ:
উপসর্গ দেখে মাইগ্রেন শনাক্ত করা যেতেই পারে। তবে প্রাথমিকভাবে মাথাব্যথা, পেট ব্যথা, বমির প্রবণতার পিছনে অন্য কোনও অসুখ রয়েছে কি না সেটা আগে দেখা উচিত৷ অন্য কোনও অসুখ না হলে পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে এমআরআই করানো জরুরি৷ কিন্তু এমআরআই করেও কোনও ত্রূটি ধরা না পড়লে বা মাথাব্যথার কারণ হিসাবে অন্য কোনও রোগ চিহ্নিত না হলে তখন মাইগ্রেন হয়েছে বলেই ধরে নেওয়া হয়৷ এই রোগ অনেকাংশেই বংশগত। উপসর্গগুলির পাশাপাশি যদি দেখা যায় মা, বাবা বা পরিবারে অন্য কারও মাইগ্রেন রয়েছে তাহলে রোগ শনাক্ত করা অনেক সহজ হয়ে যায়৷ তবে একবার মাথাব্যথা হলেই তাকে মাইগ্রেন অ্যাটাক বলা যায় না৷ তবে অ্যাটাকটা ৫ থেকে ৬ বারের বেশি হলে তাকে মাইগ্রেন বলা হয়৷
OLX-এ অডি, ফরচুনার বেঁচে পুলিশের জালে এই ‘গুণধর’
মাইগ্রেন অ্যাটাক:
শরীরে এক স্নায়ু থেকে অন্য স্নায়ুতে সংবেদন(বার্তা) পাঠানোর জন্য বিশেষ এক প্রকার রাসায়নিক নিঃসৃত হয়৷ এই রাসায়নিককে নিউরো ট্রান্সমিটার বলে৷ কোনও কারণে এই রাসায়নিক অত্যধিক মাত্রায় নিঃসৃত হলেই মাথাব্যথা হয়৷ একেই মাইগ্রেন অ্যাটাক বলা হয়৷ ঠিক কী কী কারণে এই রাসায়নিক অধিকমাত্রায় নিঃসৃত হয়? জানা গেছে, আলো ও শব্দের প্রভাবে নিউরো ট্রান্সমিটার বেশি ক্ষরিত হতে পারে৷ আবার মানসিক উদ্বেগ, খালি পেটে থাকা, উগ্র গন্ধ, বিশেষ কোনও খাবারের প্রভাব বা নির্দিষ্ট কোনও ওষুধের কারণেও স্নায়ুতন্ত্রে এই রাসায়নিকের ক্ষরণ বাড়তে পারে৷ এমনকী অত্যধিক পরিমাণে আজিনামোটো (মোনো সোডিয়াম গ্লুটামেট) সমৃদ্ধ খাবার খেলেও নিউরো ট্রান্সমিটারের ক্ষরণ বেড়ে যায়৷ এর প্রভাবেই মাথায় যন্ত্রণা হয়৷
প্রাণায়মের মাধ্যমে কষ্ট লাঘব:
জীবনযাত্রার সংশোধন এই রোগের অন্যতম প্রধান চিকিৎসা। মানসিকভাবে চিন্তামুক্ত থাকতে যোগাসন বা প্রাণায়ম করলে উপকার মেলে৷ সেই সঙ্গে সময়মতো স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, ঘুম আপনাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে৷ যাঁদের রোদে কষ্ট হয় বা অতিরিক্ত আলো, শব্দ, গন্ধে অসুবিধা হয়, তাঁদের উচিত এগুলি এড়িয়ে চলা৷ তবে এসব কোনও কিছুই কাজে না আসলে ওষুধ প্রয়োগ করা জরুরি হয়ে পড়ে৷ মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিয়ের পর বেশ কয়েক বছর মাইগ্রেন অ্যাটাক হয় না৷ চিন্তা অনেকটাই কমে যাওয়ার কারণে এই নিরাময় মেলে৷ অনেকের আবার ঠিকমত ঘুম হলে এই ব্যথা কমে যায়৷ তবে চিকিৎসা যাই করতে হোক, রোগের প্রথম পর্যায় থেকেই স্নায়ু রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত৷ সেক্ষেত্রে সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়৷
ভারতীয় সেনাকে পেট্রল বোমা দিয়ে আক্রমণের ছক বিচ্ছিন্নতাবাদীদের
যোগাযোগ: ৯৮৩১৫৯৯৭২৭
খবরটি বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন : //epaper.sangbadpratidin.in/epaper/edition/807/sangbad-pratidin-18-02-17/page/7
The post এইগুলি করলেই মিলবে মাইগ্রেন থেকে মুক্তি appeared first on Sangbad Pratidin.