সৈকত মাইতি, তমলুক: বছর শেষে জন্মদিনের উপহার হিসেবে স্বামীর কাছে সারপ্রাইজ গিফ্ট চেয়েছিলেন স্ত্রী। তাঁর আবদার ছিল একজোড়া সোনার দুল উপহার দিয়ে স্বামী যেন চমকে দেন তাঁকে। চেয়েছিলেন কেক কেটে নতুন বছরের সেলিব্রেশন করবেন। একসঙ্গে কিছুটা ভাল কাটাবেন স্বপরিবারে। কিন্তু, কোনও স্বপ্নই পূরণ হল না তাঁর। নিজের আর্থিক অক্ষমতার কথা স্ত্রীকে জানিয়ে দেন স্বামী। বলে দেন তাঁর পক্ষে ওই মনবাঞ্ছা পূরণ সম্ভব নয়। আর তাতেই ঘটল চরম বিপত্তি। ১৪ মাসের শিশুপুত্রকে ফেলে রেখেই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হলেন স্ত্রী।
সোমবার রাতে কোলাঘাটের বাবুয়া এলাকার মর্মান্তিক এই ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়তেই শোলগোল পড়ে যায়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত গৃহবধূ নাসিমা খাতুন (২১)। স্বামী রোবিয়াল মল্লিক কোলাঘাটের বাবুয়া এলাকার বাসিন্দা। বছর তিনেক আগে নন্দকুমার থানার নরঘাট এলাকার বাসিন্দা এই নাসিমার সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে হয় তাঁর। রবিয়াল পেশায় কাঠের মিস্ত্রি। সেই সূত্রেই শ্বশুর-সহ শ্বশুরবাড়ির অন্যান্য আত্মীয়র সঙ্গেই ভুবনেশ্বরে কাঠের কাজ করেন। তাঁদের ১৪ মাসের পুত্রসন্তান সিফান ও শাশুড়ি মাকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের বাড়িতেই থাকতেন নাসিমা। আগামী ৩১শে ডিসেম্বর অর্থাৎ বর্ষবরণের দিনই ছিল নাসিমার ২১ তম জন্মদিন। তাই এই জন্মদিনকে স্মৃতিমধুর করে তুলতে স্বামী রবিয়ালের কাছে আবদার করেছিলেন সোনার একখানা কানের দুলের।
[আরও পড়ুন: রাজনীতির শিকার রোনাল্ডো! বিশ্বকাপে CR7-কে বসিয়ে রাখা নিয়ে বিস্ফোরক তুরস্কের প্রেসিডেন্ট]
সারপ্রাইজ গিফ্ট হিসেবে চেয়েছিলেন সেটি। আনন্দের এই শুভক্ষণে স্বামী যেন তাঁর পাশে থাকেন। এটাই চেয়েছিলেন। কিন্তু হল তার উলটো। আর্থিক কষ্টের অসহায় পরিস্থিতির কথা সবিস্তারে জানিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন না বলে জানান স্বামী। আর তাতেই অভিমানে কোলের সন্তানকে ফেলে আত্মঘাতী হওয়ার চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন নাসিমা। বন্ধ ঘরে বিছানায় সদ্যোজাতকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে পরনের শাড়ি সিলিং ফ্যানে ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন তিনি।
ঘটনার তদন্তে নেমে ঘরের দরজা ভেঙে মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য তমলুক জেলা হাসপাতালে পাঠায় কোলাঘাট থানার পুলিশ। এরপর মঙ্গলবার মৃতদেহটি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। স্বামী রবিয়াল মল্লিক বলেন, “বিয়ের পরেই আচমকা করোনার জেরে দীর্ঘ প্রায় ২ বছর লকডাউন হয়ে যায়। ফলে কাজ হারিয়ে প্রায় অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। এরপর অবশ্য সেই ধাক্কা সামলে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। তবে সম্প্রতি সেভাবে কাজ হাতে ছিল না। গত বছর জন্মদিনে একখান ভাল চুরিদার কিনে দিয়েছিলাম। এরপর ওর মনরক্ষার খাতিরে কাছেপিঠে কোথাও মাঝেমধ্যেই বেড়িয়ে আসতাম। কিন্তু এখন আর্থিক সমস্যার কারণে ওর জন্মদিনে বাড়ি ফিরতে পারব না বলে জানিয়েছিলাম। আর তাতেই যে ও এমনটা ঘটাতে পারে, তা ভাবতে পারিনি।”